November 17, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, August 13th, 2023, 7:38 pm

বন্যায় চট্টগ্রাম মহানগরীর ৫০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত

চট্টগ্রামে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় মহানগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের প্রায় ৫০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কোথাও কোথাও সড়কের আশেপাশে ফুটপাতে বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়াও নগরীতে ২ দশমিক ১৯ কিলোমিটার নালা ও প্রায় ২ কিলোমিটার ফুটপাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এ সময় অতিবৃষ্টি ও বন্যায় মহানগরী ও জেলার ৫০ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন চসিক ও জেলা প্রশাসন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে কয়েকদিনের সৃষ্ট জলবদ্ধতায় নগরীর বন্দর, আগ্রাবাদ, পতেঙ্গা, বড়পোল, হালিশহর, দেওয়ানহাট, মুরাদপুর থেকে অক্সিজেন রোড, বায়েজিদ বোস্তামী রোড, সুন্নিয়া মাদরাসা রোড, খতিবের হাট, জাকির হোসেন রোড, ডিসি রোড, লয়েল রোড, মাইজপাড়া, কে বি আমান আলী রোড, শহীদ সাইফুদ্দিন খালেদ রোড, কে সি দে রোড, জামালখান, সার্সন রোড, খাজা রোড, ওমর আলী মাতব্বর রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়কে কার্পেটিং উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে খানা-খন্দ। নগরীর কাজীর দেউড়ি থেকে লাভলেইন, জুবলী রোড়ের বিভিন্ন স্থানে ফুটপাত দেবে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। বৃষ্টির পানিতে গর্তগুলো ভরে গেছে, রয়েছে কাদাও। অলি-গলির অনেক রাস্তাও ভেঙ্গেছে। নানা দুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে যানবাহন চলছে এসব রাস্তায়।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মুনিরুল হুদা জানান, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সড়ক সংস্কারের জন্য ৬০ কোটি টাকা প্রয়োজন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে এই টাকা বরাদ্দ চাওয়া হবে। এর আগে বৃষ্টি মৌসুম চলে গেলে চসিকের ব্যবস্থাপনায় সড়ক সংস্কার করা হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চট্টগ্রাম মহানগরের পাঁচলাইশ, ডবলমুরিং ও পতেঙ্গা এলাকার ৫ হেক্টর জমিতে লাগানো আউশ ধান, ২০ হেক্টর জমিতে লাগানো আমনের চারা ও ১৪০ হেক্টর জমিতে লাগানো সবজির খেত নষ্ট হয়েছে। এছাড়াও ১৫ উপজেলায় ৩২ হাজার ৭১৯ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের বীজতলা, ৬ হাজার ৫৬৭ হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে রয়েছে। এসব উপজেলায় কিছুদিন আগে ৫১ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে লাগানো হয় আমনের চারা। এর মধ্যে ১৫ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে নতুন লাগানো চারার ক্ষতি হয়েছে। আউশ ধান কাটার কথা চলতি মাসের শেষে।

চট্টগ্রামের শস্যভান্ডারখ্যাত রাঙ্গুনিয়ার বৃহত্তর গুমাই বিলও এক সপ্তাহ ধরে বন্যার পানিতে ডুবে আছে। সবমিলিয়ে শরৎকালীন সবজিসহ চট্টগ্রামে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ২৬ হাজার ৯৬৪ হেক্টর জমির ফসল।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক ড.অরবিন্দ কুমার রায় জানান, বিভিন্ন এলাকা থেকে বন্যার পানি এখনও পুরোপুরি নামেনি। প্রাথমিকভাবে ৫০ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি।

গত ১ আগস্ট থেকে চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। ৪ আগস্ট নগরী ও জেলায় বন্যা দেখা দেয়। ধীরে ধীরে পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। এর মধ্যে ৭ আগস্ট পর্যন্ত চার দিন টানা জলাবদ্ধতা ছিল নগরীতে। গত এক সপ্তাহে চট্টগ্রামে ৬৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা বিগত ৩০ বছরের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে। অতি বৃষ্টির সঙ্গে যোগ হয়েছে পাহাড়ি ঢল। পাহাড়ি নদী সাঙ্গু, মাতামুহুরী ডলু এবং কর্ণফুলী ও হালদার পানি বেড়েছে প্রতিদিন।

তিনি আরও জানান, জলাবদ্ধতায় চট্টগ্রাম মহানগর ও উপজেলায় ৫ হাজার ৬৭ হেক্টর জমিতে শরৎকালীন সবজি যেমন- বেগুন, বরবটি, ঢেঁড়শ, শসা, ক্ষিরা, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, ঝিঙ্গা, কাকরোল, করলা, লাউ, চিচিঙ্গা, ধুন্দুলসহ বিভিন্ন সবজি খেত সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়েছে। আবাদ করা সবজির পুরোটাই পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, বন্যায় চট্টগ্রাম জেলায় কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এই ক্ষতির পরিমাণ ১৩৫ কোটি টাকার বেশি হবে।

—-ইউএনবি