জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আকষ্মিক বন্যায় সিলেটের সড়কগুলোতে প্রায় ২শ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ২৭ মে থেকে বানের পানি আর অতি বৃষ্টিতে এরকম অবস্থার সৃষ্টি হয়। বন্যায় মানুষের ঘর-বাড়ি, গবাদিপশুর ক্ষতিসহ বড় ধরণের ক্ষতি সাধিত হয়েছে রাস্তাঘাটের। লোকসানের পাশাপাশি ক্ষতির মুখে পড়েছে সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা। বিশেষ করে এই আগাম বন্যায় সিলেটের যাতায়াতব্যবস্থার বড় ক্ষতি হয়েছে। এখন পর্যন্ত জেলাজুড়ে সড়কে ভেসে উঠেছে দুই শ কোটি টাকার ক্ষতির ছাপ। এর পরিমাণ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল (এলজিইডি) এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, সিলেট জেলার ১৩টির মধ্যে ১২টি উপজেলাই বন্যা কবলিত হয়েছে। বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। বন্যার ভয়াবহ অবস্থা ছিলো গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলায়। এই ৫টি উপজেলার সড়কে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বেশি। উপজেলাগুলোর প্রধান প্রধান সড়ক শুরুতেই তলিয়ে যায়। অনেক সড়কে কয়েক দিন যান চলাচল বন্ধ ছিলো। পরবর্তীতে পানি নেমে গেলে এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগ সাময়ীক মেরামত করে দেওয়ায় সড়কগুলো দিয়ে যান চলাচল করতে শুরু করে।
সূত্র জানিয়েছে, সিলেট জেলায় এলজিইডি’র আওতাধীন প্রায় ১৬০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার হিসাব এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে। এতে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ শ ১৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর পরিমাণ আরও বাড়বে।
অপরদিকে, সওজ’র আওতাধীন প্রায় ৪০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ৮৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে এখন পর্যন্ত। বাড়বে এ ক্ষতিরও পরিমাণ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সিলেটে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- সারি-গোয়ানইঘাট সড়ক, দরবস্ত-কানাইঘাট সড়ক, কোম্পানীগঞ্জ-ছাতক সড়ক, ফেঞ্চুগঞ্জ-মানিকোনা সড়ক। এছাড়া জৈন্তাপুরে সিলেট-তামাবিল সড়কেও এবারে বন্যার পানি উঠে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এছাড়া জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার বাউরবাগ-মল্লিকপুর সড়ক, গোয়াবাড়ি সড়ক, কমলাবাড়ি সড়ক, লক্ষ্মীপুর সড়ক, ডুন্ডিরপাড় সড়ক, সারিঘাটের ওয়াপদা বেড়িবাঁধ সড়কের কয়েকটি স্থান বন্যার পানির তোড়ে ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গোয়াইনঘাট উপজেলার সদর-সোনারহাট সড়ক ও রাধানগর সড়কও হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার খাগাইল-কায়েফগাঁও সড়কের কয়েকটি স্থান ঢলের তোড়ে ভেঙে গেছে।
এছাড়া এ উপজেলার ইছাকলস ও দক্ষিণ রনীগাঁও ইউনিয়নের অন্ততঃ ৫-৬টি সড়ক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কানাইঘাট উপজেলার সদর-গাছবাড়ি-হরিপুর সড়কের আরসিসি ঢালাইয়ের সড়কটির ক্ষতি না হলেও উভয়পাশের অ্যাপ্রোচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বুরহান উদ্দিন সড়কের কানাইঘাট অংশের ক্ষতি হয়েছে এ বন্যায়। কানাইঘাট-চতুল-বড়বন্দ-সুরইঘাট সড়কও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এলজিইডি সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী কে. এম. ফারুক হোসাইন বলেন- সিলেটে এখনো বন্যা চলছে। পানি পুরোপুরি না নামা পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ হিসাব পাওয়া যাবে না। এখন পর্যন্ত এলজিইডি’র উপজেলা অফিসগুলোর দেওয়া তথ্যমতে- আমাদের আওতাধীন প্রায় ১৬০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ১ শ ১৮ কোটি ৭০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন বলেন- আমাদের অধীনস্থ প্রায় ৪০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ৮৪ কোটি টাকার। এর মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক শর্ট টাইমের মধ্যে আমরা সাময়ীক সংস্কার করে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে দিয়েছি। স্থায়ী মেরামতের জন্য একটু সময় লাগবে। এর জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চাহিদা পাঠাবো, পরে পরিদর্শন টিম আসবে এবং তারপর বরাদ্দ মিলবে। বরাদ্দ পাওয়ার পর পরই আমরা সংস্কার কাজ শুরু করতে পারবো।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক