নিজস্ব প্রতিবেদক:
জাতীয় গ্রিডে স্থানীয়ভাবে সরবরাহকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সিলেট থেকে আসে। আর তার ওপর নির্ভরশীল দেশের বিপুলসংখ্যক শিল্প-কারখানা। বর্তমানে বন্যার পানিতে সিলেট অঞ্চল নিমজ্জিত। এমন পরিস্থিতিতে গ্যাসক্ষেত্রের কারিগরি ও পরিচালনাগত সমস্যার আশঙ্কা বাড়ছে। যদিও তুলনামুলক উঁচুতে থাকায় এখনো সেখানকার কোনো গ্যাসক্ষেত্র এখনো প্লাবিত হয়নি। কিন্তু বন্যার পানি সামান্য বাড়লেই কয়েকটি গ্যাসক্ষেত্র প্লাবিত হয়ে পড়বে। তখন গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসের সার্বিক সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেক্ষেত্রে দেশের জ্বালানি খাত আবারো চাপে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। বন্যার কারণে জালালাবাদ এলাকায় সঞ্চালন লাইনগুলোয় সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেখানে পানি আর মাত্র দেড় ফুট নিচে অবস্থান করছে। যদি ওই লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে গ্যাস বিতরণ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তবে পরিস্থিতি তেমন হলে যাবে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া যায় সেজন্য সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। পেট্রোবাংলা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জাতীয় গ্রিডে দেশের মোট ২২টি গ্যাস ফিল্ড থেকে দৈনিক ২৩৬ কোটি ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হচ্ছে। তার মধ্যে শুধু সিলেট অঞ্চলের ৮টি গ্যাসক্ষেত্র থেকেই দৈনিক ১৬৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যাচ্ছে। যা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত গ্যাসের ৭০ শতাংশ। তার মধ্যে দৈনিক ১৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ সক্ষমতার ৩টি গ্যাস ফিল্ড পরিচালনা করছে বিদেশী কোম্পানি শেভরন। বাকি ৫টি গ্যাসক্ষেত্র পরিচালনা করছে স্থানীয় কোম্পানি সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেড (সিজিএফএল)।
সূত্র জানায়, গ্যাসের ওপর সিলেট অঞ্চলের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পুরোপুরি নির্ভরশীল। বন্যার কারণে বর্তমানে সিলেট অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় সেখানে গ্যাসের চাহিদাও কিছুটা কম। তাছাড়া সিলেটে গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে উৎপাদিত কনডেনসেট প্রক্রিয়াকরণে বেশ কয়েকটি ফ্র্যাকশনেশন প্লান্ট রয়েছে। তার মধ্যে রশিদপুরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্লান্টটি অবস্থিত। এখন পর্যন্ত ওই কারখানার কার্যক্রমে বন্যার তেমন কোনো প্রভাব না পড়লেও পানির পরিমাণ বাড়লে সেখানকার ডিজেল, পেট্রল ও অকটেন উৎপাদন বিঘিœত হতে পারে। এসজিএফএলের আওতাধীন রশিদপুরের কনডেনসেট ফ্র্যাকশনেশন প্লান্টটির দৈনিক উৎপাদনক্ষমতা ৪ হাজার ব্যারেল। গত বছরের মে মাস থেকে কারখানাটিতে ডিজেল, অকটেন ও পেট্রল উৎপাদন করা হচ্ছে। মূলত বিবিয়ানায় উৎপাদিত কনডেনসেট রশিদপুরে প্লান্টে এনে তা প্রক্রিয়াকরণ হয়। বর্তমানে সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চল বন্যাকবলিত হওয়ায় রশিদপুরসহ অন্যান্য ফ্র্যাকশনেশন প্লান্টও এখন পানিবন্দি হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। আর প্লাবিত হয়ে পড়লে কারখানাগুলোর উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থায়ও নেতিবাচক প্রভাবের বড় আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে বন্যা পরিস্থিতির কারণে সিলেট গ্যাস ফিল্ডের উৎপাদন বিঘিœত ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা প্রসঙ্গে সিজিএফএলের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রকৌশলী আবদুল জলিল প্রামাণিক জানান, বন্যার কারণে এখনো গ্যাস ফিল্ডগুলোর কোনো ক্ষতি হয়নি। উৎপাদন ব্যবস্থা স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। তবে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে কী অবস্থা হতে পারে তা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সিজিএফএল সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে সিজিএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মিজানুর রহমান জানান, বন্যার কারণে গ্যাস উৎপাদনে বিঘœ ঘটার কোনো শঙ্কা নেই। গ্যাস ফিল্ডগুলো উঁচু জায়গায় হওয়ায় এখনো পানি ওঠেনি। তবে হরিপুর গ্যাস ফিল্ডের কাছাকাছি পানি উঠেছে। কৈলাসটিলা গ্যাস ফিল্ডও পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। কোম্পানির পক্ষ থেকে বিষয়টি সাবক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
সার্বিক বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান জানান, বন্যার পানির কারণে গ্যাস ফিল্ডগুলোয় এখনো কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। সিলেট গ্যাস ফিল্ড অফিস কিংবা জালালাবাদেও কোনো প্রভাব নেই। তবে পানি আরো বাড়লে কী হতে পারে সে বিষয়ে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। তবে অবকাঠামো ব্যবস্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হলে গ্যাস সরবরাহে সাময়িক অসুবিধা হতে পারে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ