নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল :
বরিশাল বরগুনা জেলাধীন আমতলী উপজেলার প্রাইমারী ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ ৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকায় কৃষি জমিতে নির্মান করা হয়েছে অবৈধ ইটভাটা। ওই ভাটার চুল্লীর ধোঁয়া,ধূলোবালি ও ইট পোড়া গন্ধে প্রতিনিয়ত অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিক্ষক ও কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে আসছে ২হাজার শিক্ষার্থী। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে দেখাগেছে, আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নে কৃষি জমিতে গড়ে উঠেছে ন্যাশন্যাল ব্রিকস ম্যানুফ্যাকচার নামে বিশালাকার একটি ইটভাটা। বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে, এই ইটভাটার অর্ধ-কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে মাদ্রাসা ও প্রাইমারীসহ ৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে এই ব্রিকসের ৫ থেকে ৭শ’ গজের ভেতরে রয়েছে ২৬নং দক্ষিন গুলিশাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং উওর ও পূর্বপাশে রয়েছে ইসাহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও গুলিশাখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,দাখিল মাদ্রাসা,হালিমা খাতুন জুনিয়র মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও গুলিশাখালি দক্ষিন পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন, ইটভাটার ধুলোবালি ও গন্ধে তাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর অসুস্থ হয়ে পড়ছে। দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট ও এ্যাজমা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
ইটভাটার মালিক আমতলী গুলীশাখালীর সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মিয়া বর্তমানে ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি হওয়ায় তার দাপটে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের অভিবাবকরা কেউ মুখ খুলতে পারছে না। চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব করায় ভীতিকর পরিস্থিতির কারনেও চুপ থাকছেন সুশীল সমাজসহ নানা শ্রেনী পেশার মানুষ। টানা ১০ বছর যাবৎ ইট ভাটার চুল্লী জ্বলছে সেখানে। কাগুজে কলমে নিজের দায় এড়াতে কিংবা কৌশলগত দিক বিবেচনায় রেখে স্ত্রী জাহানারার নামে ইট ভাটার মালিকানা সত্ত্ব রেখেছেন।
তবে এবার নিজ বিদ্যালয়ের শিুশু শিক্ষার্থীদের জীবন বাঁচাতে শিক্ষক সমাজ থেকে কথা বলতে শুরু করেছেন অনেকে। গুলিশাখালী ইসাহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাহাদাৎ হোসেন ও দক্ষিন গুলিশাখালি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সালমা বেগম বলেন, ন্যাশন্যাল ব্রিকস ইটভাটার ক্ষতিকর ধুলোবালিতে তারা নিজেরাও একাদিকবার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে অভিযোগ করেও কোন সুরাহা পাওয়া যায়নি। নুরুল ইসলাম ক্ষমতাসীন দলের লোক হওয়ায় সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার সাহস কেউ রাখে না। স্থানীয় ইউপি সদস্য জসিম উদ্দিন জানান, ইটভাটার কারনে ৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গ্রামের নবজাতকসহ প্রায় ২হাজার শিশু স্বাসকষ্ট-এ্যাজমাসহ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ঝুকিতে আছে। সেইসাথে তার গ্রামের সাধারন মানুষও রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে। গুলিশাখালি এলাকার বৃদ্ধ সোনা মিয়া ফকির জানান, নুরুল ইসলাম মিয়া গ্রামের ভেতর ইটভাটা নির্মান করার কারনে বৃদ্ধ ও শিশুরা শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই ইটভাটা বন্ধে কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
যদিও আইনে আছে কৃষি জমি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে ১ কিলোমিটারের মধ্যে কোন ইটভাটার অনুমোধন পাবে না। অথচ ১০ বছর যাবৎ তাহলে কিভাবে সেখানে ইটভাটার চুল্লী জ্বলে তার কোন সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক আ:হালিম।
তবে আমতলী উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা একে এম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ জানান, এ ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। কারন শিশুদের ক্ষতি করে গ্রামের ভেতর কোন ইটভাটা চলতে পারে না। উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ও সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এ্যাড. এম এ কাদের জানান, নুরুর ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিষয়টি দলের হাই কমান্ডকে জানাবো। যাতে এ সমস্যার সমাধান হয়। বিস্তর এই অভিযোগের বিপরীতে নুরুল ইসলাম মিয়ার কাছে শিশু শিক্ষার্থীদের ক্ষতির চেয়ে ইট ভাটার কারনে তার এলাকার খেটে খাওয়া মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। এটাই তার কাছে মুখ্য বিষয়। এমনটাই মন্তব্য করেন এ প্রতিবেদকের কাছে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি