বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও বিএম কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৫৫ জন আহত হয়েছেন। এসময় উভয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চারটি বাস এবং বিএম কলেজের প্রশাসনিক ভবনসহ ক্যাম্পাসে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়।
মঙ্গলবার দিনগত রাত সাড়ে ১২ থেকে বুধবার ভোর ৫টা পর্যন্ত এসব হামলা চালানো হয়।
সংঘর্ষে আহত হওয়ার ঘটনা স্বীকার করেছেন বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নগরীর ব্যাপ্টিস্ট মিশন রোডের বাসিন্দা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসনুভা চৌধুরী জোয়ার পরিবারের সঙ্গে জমি নিয়ে পার্শ্ববর্তী পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। সোমবার রাতে বিএম কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী বিরোধ নিরসনে জোয়াদের বাসায় গেলে সেখানে কথা কাটাকাটি হয়। জোয়া এসময় ফোনে ববি শিক্ষার্থী তার বন্ধুদের জানালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩০/৪০ জন সেখানে যান। মা ও তাকে হেনস্থা করা হয়েছে বলে জোয়া অভিযোগে করেন। এ সময় বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের মারধর করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
পরে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে চলে আসে। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা নগরের বিভিন্ন স্থানে ববি শিক্ষার্থীদের খুঁজতে থাকে। মঙ্গলবার বিকালে পাল্টাপাল্টি মানববন্ধনও করা হয়। মঙ্গলবার রাত ১০টা নাগাদ নগরীর বটতলা এলাকায় ববির ২ শিক্ষার্থীকে পেয়ে মারধর করেন তারা। তখন প্রাণ বাঁচাতে ওই দুজন দৌড়ে পাশেই থাকা বটতলা পুলিশ ফাঁড়িতে ঢুকে আশ্রয় নেন।
এদিকে সহপাঠীদের মারধর করার খবর পেয়ে রাত ১২টা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০/৫০ জন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাসে করে সেখানে গেলে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা সেই বাসে হামলা চালান। এদে ১৫-২০ জনকে আহত হন। সহপাঠীদের মারধর করার খবর পৌছলে বাস ট্রাক বোঝাই হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারের বেশী শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে বরিশাল নগরীর বাংলাবাজার এলাকায় জড়ো হন। সেখান থেকে তারা বিএম কলেজে গিয়ে হামলা চালান।
এরপর রাত ১টা থেকে পৌনে ৩টা পর্যন্ত বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে প্রশাসনিক ভবন, আবাসিক তিনটি হল এবং শ্রেণিকক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় তারা। হামলার প্রথম পর্যায়ে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা পাল্টা হামলা চালানোর চেষ্টা করলেও সংখ্যায় অনেক কম হওয়ায় খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি। এরপর বিএম কলেজের পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও তাণ্ডব চালান ববি শিক্ষার্থীরা।
রাত পৌনে ৩টা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌছায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা। প্রায় ১ ঘণ্টা চেষ্টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন তারা। তবে বিএম কলেজের আশপাশে তখনও হামলা পাল্টা হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছিলে।
সংঘর্ষে উভয় পক্ষের প্রায় শতাধিক আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান। এদের মধ্যে অন্তত ২৩ জনকে প্রথম পর্যায়ে বরিশাল শেরে বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ জন শিক্ষার্থী বিএম কলেজের ভেতরে আটকা পড়েন এবং তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না বলে ভোরে সেনাবাহিনীকে জানান ববি শিক্ষার্থীরা।
সেনাবাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ডক্টর উন্মেষ রায় জানান, হামলায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। এখন ৩৩ জনের মতো ভর্তি রয়েছেন। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে গিয়েছেন।
এছাড়া নিখোঁজ থাকা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ শিক্ষার্থীকে ভারপ্রাপ্ত ভিসি মুহসীন উদ্দিনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বিএম কলেজ অধ্যক্ষ আমিনুল হক ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভিসি মুহসীন উদ্দিনের যৌথ স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতি বুধবার সকাল ৮টায় এ প্রতিবেদকের কাছে অসে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, সরকারি বিএম কলেজে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেসব ব্যয় বহন করবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। বিএম কলেজ কর্তৃপক্ষ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষার্থীকে বুঝে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম