কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের বারো মাসিয়া নদীর ওপর নড়োবড়ো বাঁশের সাঁকোয় ছয়টি গ্রামের ৩০ হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা। প্রায় ৪০ বছর ধরে তারা এভাবে নদী পারাপার করে আসছে। জনপ্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবায়ন না হওয়ায় স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
জানা গেছে, ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের বারো মাসিয়া নদীর ওপর নড়বড়ে বাঁশের সাঁকোটি নিজেদের উদ্যোগে তৈরি করেছে গ্রামের মানুষ।
সাঁকোর পশ্চিম পাড়ে রয়েছে পশ্চিম কান্তাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝাউকুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর গোরুকমন্ডপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,ফয়জুল উলুম মাদরাসা, গোরুকমন্ডপ কমিউনিটি ক্লিনিক। পূর্ব পাশে রয়েছে পশ্চিম ফুলমতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালাহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাওডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালার হাট আর্দশ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নাওডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও পশ্চিম ফুলমতি উচ্চ বিদ্যালয় ও কমিউনিটি ক্লিনিক। নদীর দুপাশে গ্রামগুলোর যোগাযোগের সংযোগস্থল হওয়ায় এ সাঁকো দিয়ে হাজারও মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করেন। এতে হরহামেশাই দুর্ঘটনা ঘটে।
রোগী থাকলে দুর্ভোগের মাত্রা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। অবহেলিত এ অঞ্চলের মানুষদেরকে ভোটের সময় জন প্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়ে আসলেও তা বাস্তবায়ন করেনি। এমন অভিযোগ দু’পারে মানুষের। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কান্তাপাড়া, ঝাউকুটি চরগোরুক, পশ্চিম ফুলমতি, জামাকুটি ,কলাবাগা গ্রামের অধিবাসীরা। মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তন সম্ভাবনা থাকলেও প্রধান বাধা এ বারো মাসিয়া ইন্দুর ঘাটের বাশেঁ সাঁকো। নিজের চাহিদায়মতে চাঁদা সংগ্রহ করে বাঁশের সাকোঁটি তৈরি করা হয়েছে।
নাওডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজ দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নুর মোহাম্মদ আলী বলে, ‘এই সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে আমাদের খুব কষ্ট হয়। একবার পা পিচলে পড়ে আহত হয়েছি। এখানে একটা ব্রিজ হলে ভালোই হতো।’
পশ্চিম ফুলমতি গ্রামের মীর হোসেন বলেন, ‘একটি সেতুর অভাবে ৪০ বছর ধরে জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছি। সুস্থ মানুষ সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনায় পড়ছেন, অসুস্থদের অবস্থা বলার মতো নয়। বেশি সমস্যা হয় প্রসূতিদের নিয়ে। জন প্রতিনিধিরা কথা দিয়ে ভোট নেন। ভোট পার হলে তারা আর খোঁজ রাখেন না।’
স্বেচ্ছায় সাঁকো মেরামতকারী শাহাজামাল আলী বলেন, সাত বছর ধরে বাঁশের সাঁকোটি প্রতিদিন মেরামত করে আসছি। এলাকার বাঁশ ও ধান সংগ্রহ করে সাঁকোটি চলাচলের উপযোগি করে দেয় হয়। এ জন্য ধান মৌসুমে ওই নদীর পাড়ে মাইক বাজিয়ে হালখাতা করে গ্রামবাসীদের কাছ থেকে কিছু টাকা নেয়া হয়। উঠানো টাকা দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করে সাঁকো চালু রাখা হয়েছে।
নাওডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল হানিফ সরকার বলেন, ‘স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা অনেক কষ্ট করে ভাঙ্গা সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করেন। তাছাড়াও কৃষকদের পণ্য আনা-নেয়ায় অনেক কষ্ট হয়। অসুস্থ রোগীকে সময়মতো হাসপাতালে নেয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। এখানে সেতু নির্মাণ হলে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে।’
এলাকাবাসীর দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান হাছেন আলী জানান, বারো মাসিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণ অনেক আগে থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। দ্রুত কাগজপত্র সংগ্রহ করে মন্ত্রণালয়ে গিয়ে সেতু নির্মাণের চেষ্টা করা হবে।’
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী আসিক ইকবাল রাজিব জানান, বারো মাসিয়া নদীর ওপর ৩০ মিটার সেতু নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
—ইউএনবি
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি