নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশে আর চার মাস পর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা। পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে নতুন নির্বাচন কমিশন। ফলে পরবর্তী কমিশন কিভাবে গঠন করা হবে, কারা থাকতে পারেন তা নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে মানুষের। ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে। ২০১৭ সালে সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে এই কমিশন গঠন করা হয়েছিল।
সূত্র জানায়, এবারও রাষ্ট্রপতি সংবিধান এবং আইনের আলোকে সার্চ কমিটির মাধ্যমে তাদের নিয়োগ দিবেন। ২০১২ সালেও সার্চ কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয়। তার আগে সংবিধান সংশোধন করে কমিশন সদস্য বাড়িয়ে পাঁচজন নির্দিষ্ট করা হয়। একজন নারী সদস্য রাখার বিধানও যুক্ত করা হয়।
সংবিধানে একটি আইনের মাধ্যমে ইসি গঠনের নির্দেশনা আছে। কিন্তু গত ৫০ বছরে এই আইন হয়নি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের অনেকে মনে করছেন, এখনো যে সময় আছে, তাতে একটি আইন করা সম্ভব। কারণ, এই আইনের একটি খসড়া করা আছে। এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন এই খসড়া করেছিল।
তবে সরকার জানিয়েছে, করোনা মহামারি ও সময়স্বল্পতার কারণে এবারও আইনটি করা যাচ্ছে না। সার্চ কমিটির (অনুসন্ধান কমিটি) মাধ্যমেই কমিশন গঠন করা হবে। আগামী জানুয়ারিতে এই কমিটি গঠন করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দান শেষে ঢাকায় ফিরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, রাষ্ট্রপতির সার্চ কমিটির মাধ্যমেই আগামী নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে।
সার্চ কমিটির কার্যপরিধি কেমন হবে, তা সুনির্দিষ্ট নয়। তবে এর আগে দেখা গেছে, কমিটি সিইসি ও অন্য নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য বেশ কিছু নাম প্রস্তাব করেন। নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন গঠনের আগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। সেখানে দলগুলো পাঁচটি করে নাম প্রস্তাব করেছিল। ওই নামগুলো বিবেচনায় নিয়ে সার্চ কমিটি মোট ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করেছিল। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি পাঁচ সদস্যের বর্তমান কমিশন গঠন করেন। তবে কার কার নাম কমিটি সুপারিশ করেছিল, তা প্রকাশ করা হয়নি।
সূত্র জানায়, বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০১৭ সালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন করে প্রশংসিত হয়েছিল। কিন্তু এরপর প্রায় সব স্থানীয় নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপকভাবে বিতর্কিত হয়। এই কমিশনের বিরুদ্ধে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে গুরুতর অসদাচরণ, অনিয়মসহ ৯টি অভিযোগ এনে তা তদন্তের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের দাবি জানিয়ে গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দেন ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক। চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি তাঁরা এ বিষয়ে আরেকটি চিঠি দেন রাষ্ট্রপতিকে। এ নিয়ে কোনো পদক্ষেপের কথা জানা যায়নি।
এদিকে, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে অনেক আগ্রহ রয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের। কী ঘটছে, আর নির্বাচনে কী হচ্ছে, তাতে সবার স্বার্থ আছে। তাই ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) শুধু নির্বাচন নয়, নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়ার ওপর নিবিড় দৃষ্টি রাখবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের দিকে ইইউ দৃষ্টি রাখছে বলে ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি সোমবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন।
চার্লস হোয়াইটলি বলেন, ইইউ বাংলাদেশসহ সব দেশেই মানবাধিকার ও গণতন্ত্র সমুন্নত দেখতে চায়। নির্বাচন কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন নয়। এটা একটি প্রক্রিয়া। এটি আসলেই একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া, যেখানে নানা রকম প্রস্তুতির বিষয় থাকে। প্রস্তুতি যে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে, তা তারা দেখছেন। নির্বাচনের প্রস্তুতি, আইনি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আচরণ- সবকিছুই তারা বিবেচনায় নেন।
শুধু বাংলাদেশ নয়, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের যেকোনো দেশের সঙ্গে ইইউয়ের সম্পর্কের মূল ভিত্তি যে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইইউ অঞ্চলে মানবাধিকার পরিস্থিতি দেখার জন্য নিজস্ব কাঠামো আছে। মানবাধিকার দেখভাল করার জন্য যেকোনো দেশে নিজস্ব কাঠামো থাকা উচিত। এ ছাড়া আন্তর্জাতিকভাবে ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভউ (ইউপিআর) বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
নির্বাচন এখনো বেশ দূরে। এই ব্যাপারটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে থাকব। নির্বাচনের এখনো দুই বছর বাকি। আমি মনে করি, এরইমধ্যে এ নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে। আমি মনে করি, শেষ কথা হলো, যেকোনো নির্বাচনে ভোটের পর সকালে লোকজন ঘুম থেকে উঠে ফলাফল দেখে বুঝতে চায়, তাদের দেওয়া ভোট গণনা করা হয়েছে।’
বাংলাদেশকে এখন একটি বড় সংকটের সাথে এগোতে হচ্ছে, এবং তা হলো রোহিঙ্গা সংকট। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের চেষ্টার কোন ঘাটতি রাখছেন না। রোহিঙ্গা বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, ইইউ মিয়ানমারের ৪৩ ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ইইউ মিয়ানমারে উন্নয়ন সহযোগিতা স্থগিত করেছে, অস্ত্র রপ্তানিও নিষিদ্ধ করেছে। তবে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। বাণিজ্য সুবিধাও স্থগিত করেনি। কারণ এতে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে, নারী পোশাক কর্মীদের শাস্তি দেওয়া হবে।
ইইউ মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেনি। তাদের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক অব্যাহত রাখার ব্যাপারে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা বাণিজ্য বন্ধ করিনি। কারণ আমরা যদি বাণিজ্য বন্ধ করি তাহলে যে শূন্যতা তৈরি হবে, তাতে অন্যান্যের জন্য সুযোগ সৃষ্টি হবে। আর অন্যান্যের মিয়ানমারে গণতন্ত্র, মানবাধিকারকে সমর্থনের কোনো আগ্রহ না-ও থাকতে পারে।’
উল্লেখ্য, চার্লস হোয়াইটলি ১২ বছর আগে বাংলাদেশে ইইউ মিশনে রাজনৈতিক শাখায় দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এবার এসেছেন ইইউ মিশনের ডেলিগেশনপ্রধান ও রাষ্ট্রদূত হিসেবে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ