জনগণকে যেকোনো পরিস্থিতি সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ অবশ্যই অগ্নিসংযোগের মতো মানবসৃষ্ট দুর্যোগ কাটিয়ে উঠবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা যেভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করি সেভাবেই অগ্নিসংযোগের মতো মানবসৃষ্ট দুর্যোগ কাটিয়ে বাংলাদেশকে অবশ্যই এগিয়ে নিয়ে যাব। আমি দেশবাসীকে যেকোনো পরিস্থিতি সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে বলছি।’
রবিবার (১২ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী নরসিংদীতে ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরির (জিপিইউএফএফ) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। যুদ্ধ, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতির মতো বহিরাগত কারণে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে।
তিনি আবারও জনগণকে এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখার আহ্বান জানান। যাতে বাংলাদেশকে কখনই খাদ্যের জন্য কারো কাছে হাত পাততে না হয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এই দেশ আরও এগিয়ে যাবে এবং স্মার্ট বাংলাদেশ হবে। যেখানে থাকবে স্মার্ট জনসংখ্যা, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট সমাজ।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ তার উন্নয়ন যাত্রায় বারবার বাধার সম্মুখীন হয়েছে, কিন্তু কেউই এর অগ্রগতি ঠেকাতে পারেনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রাকে আর কেউ আটকাতে পারবে না।’
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে বিদেশে গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। যা নির্বাচনে তার দলের পরাজয়ের কারণ।
কিন্তু বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া তাতে রাজি হয়ে ভোটে জিতেছিলেন বলে জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেদিন যদি তিনি চাপের কাছে নতি স্বীকার করতেন, তাহলে আজ বাংলাদেশে এত চমৎকার সার কারখানা হতো না।
তিনি বলেন, বিএনপি শাসনামলে গাইবান্ধা, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন স্থানে সারের দাবিতে আন্দোলন করার সময় বেশ কয়েকজন কৃষক নিহত হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সার নিরবচ্ছিন্নভাবে বিতরণ ও আমদানির কারণে গত ১৫ বছরে দেশে কোথাও ইউরিয়া সারের কোনো ঘাটতি দেখা যায়নি।
তিনি বলেন, এখন দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ সারের মজুদ রয়েছে।
দেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল ভিত্তি হলো ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারোর প্রতি বৈরিতা নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই নবনির্মিত সার কারখানাটি পররাষ্ট্র নীতির একটি উদাহরণ। কারণ বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো বাংলাদেশকে বৃহৎ কারখানা নির্মাণে সহায়তা করেছে।
তিনি বলেন, এই কারখানা দেশের সার আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা কমবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক এই সার কারখানার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ১ মিলিয়ন টন। এটি দৈনিক ২৮০০ টন ইউরিয়া উৎপাদন করতে সক্ষম।
এখন ইউরিয়া সারের স্থানীয় চাহিদা বার্ষিক প্রায় ২৬ লাখ মেট্রিক টন। নবনির্মিত এই প্লান্টটি পুরোদমে উৎপাদনে গেলে দেশে বছরে প্রায় ২০ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদিত হবে।
তাই ইউরিয়া সারের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে, কৃষকদের সাশ্রয়ী মূল্যে সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে, আমদানি কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কারখানাটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) প্রায় ১৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১১০ একর জমিতে ‘ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া সার প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করেছে। ২০২০ সালের ১০ মার্চ প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল।
দেশের ও দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম সার কারখানার উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী একটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহৎ ইউরিয়া সার কারখানা পরিদর্শন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, নরসিংদী-২ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আশরাফ খান, শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা প্রমুখ।
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
কমতে শুরু করেছে কুড়িগ্রামের নদীর পানি, ভাঙন আতঙ্কে মানুষ
দিনাজপুরে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় নিহত ২