অনলাইন ডেস্ক :
গত জানুয়ারিতে নিউ ইয়র্কের একটি মাঠের ছবি ছড়িয়ে পড়েছিল সামাজিক মাধ্যমে। সংবাদকর্মী পিটার ডেলা পেনার তোলা সেই ছবিগুলোতে ছিল শঙ্কার ছাপ। বিশ্বকাপ শুরুর মাস ছয়েক আগে গুরুত্বপূর্ণ এক ভেন্যু তখনও পর্যন্ত ছিল স্রেফ পার্কের একটি সাধারণ মাঠ। ছিল না উপযুক্ত পিচ, আউটফিল্ড ছিল এবড়োখেবেড়ো। আইজেনহাওয়ার পার্কের সেই মাঠই এখন ৩৪ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার আধুনিক এক স্টেডিয়াম! নাসাউ কাউন্টি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম এখন বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য প্রায় প্রস্তুত। বলা হচ্ছিল, আইসিসির সবচেয়ে উচ্চভিলাসি প্রকল্পগুলোর একটি এটি। এখন তাদেরকে সফল বলাই যায়। পার্কের এক সাধারণ মাঠকে ৫ মাসের মধ্যে বিশ্বকাপ স্টেডিয়ামে রূপ দেওয়া হয়ে গেছে।
বুধবার স্টেডিয়ামটি আনুষ্ঠনিকভাবে উদ্বোধন করেন বিশ্বের দ্রুততম মানব ও এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দূত উসাইন বোল্ট। স্প্রিন্ট কিংবদন্তির সঙ্গে উদ্বোধনে ছিলেন ক্রিকেট মাঠের নানা যুগের তারকা কার্টলি অ্যামব্রোস, শোয়েব মালিক, লিয়াম প্লাঙ্কেট ও স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান দলের দুই ক্রিকেটার কোরি অ্যান্ডারসন ও মোনাঙ্ক প্যাটেল। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কজন বেসবল ও বাস্কেটবল তারকাও ছিলেন এই আয়োজনে। এই মাঠে প্রথম দুটি আন্তর্জাতিক দলের ম্যাচ হবে আগামী ১ জুন।
বিশ্বকাপের গা গরমের যে ম্যাচে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও ভারত। প্রস্তুতি ম্যাচগুলির সূচি এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি আইসিসি। তবে ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফো এটি নিশ্চিত করেছে। বিশ্বকাপে এই মাঠে প্রথম ম্যাচটি হবে আগামী ৩ জুন, বাংলাদেশের গ্রুপ থেকে যে ম্যাচে মুখোমুখি হবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কা। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচটি খেলবে এই মাঠে, ১০ জুন। বিশ্বকাপের সবসময়ের আলোচিত লড়াই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচও হবে এবার এই মাঠেই, ৯ জুন।
বাংলাদেশ-ভারত প্রস্তুতি ম্যাচের আগে সামনের কদিনে এখানে কিছু কমিউনিটি ক্রিকেট ম্যাচ হবে। পরীক্ষামূলক কিছু ইভেন্ট আয়োজন করবে আইসিসি। নতুন স্টেডিয়ামের পরিচলনগত কোনো সমস্যা ও ঘাটতি থাকলে বা নতুন কোনো কিছু যোগ করার প্রয়োজন হলে এসব আয়োজন থেকেই তা বুঝে নিয়ে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিউ ইয়র্ক শহরের প্রায় ২৫ মাইল পূর্বে আইজেনহাওয়ার পার্কে এই স্টেডিয়ামকে বলা হচ্ছে ক্রিকেটবিশ্বের প্রথম ‘মডুলার’ স্টেডিয়াম। গত জানুয়ারিতে এখানে স্টেডিয়াম নির্মাণ কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করে আইসিসি।
বিশ্বকাপের ভেন্যু হয়ে ওঠার পথে এখানে বড় এক চ্যালেঞ্জ ছিল উইকেট তৈরি করা। এত কম সময়ে উপযুক্ত উইকেট তৈরি করা যাবে না জেনেই ড্রপ-ইন উইকেট তৈরির পথ বেছে নেয় আইসিসি। ফ্লোরিডায় ১০টি ড্রপ-ইন পিচ তৈরি করা হয়। সেই পিচগুলো তৈরি করার দায়িত্ব পায় ‘অ্যাডিলেইড ওভাল টার্ফ সলিউশন্স।’ অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেইড ওভালের প্রধান কিউরেটর ড্যামিয়ান হাউ এই প্রতিষ্ঠানেরও প্রধান। তার তত্ত্বাধানেই তৈরি হয় পিচগুলি। পরে ২০টির বেশি সেমি-ট্রেইলার ট্রাকে ১ হাজার ১০০ মাইল পাড়ি দিয়ে পিচগুলি আনা হয় নিউ ইয়র্কে।
অ্যাডিলেইড ওভাল ও নিউ জিল্যান্ডের অকল্যান্ডে ইডেন পার্কে এই ধরনের ড্রপ-ইন উইকেটই ব্যবহার করা হয়। এই মাসের শুরুতে অত্যাধুনিক ক্রেন দিয়ে মূল মাঠে চারটি পিচ স্থাপন করা হয়। মূল মাঠের কাছেই অনুশীলন মাঠে স্থাপন করা হয় বাকি ছয়টি পিচ। বিশ্বকাপজুড়ে পিচগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বেও থাকবে এই ‘অ্যাডিলেইড ওভাল টার্ফ সলিউশন্স।’ মাঠের আউটফিল্ড তৈরি করে ল্যান্ডটেক গ্রুপ। যুক্তরাষ্ট্রে নিউ ইয়র্কা ইয়াঙ্কিস ও নিউ ইয়র্ক মেটসের মাঠসহ বেশি কিছু বেসবল মাঠ তৈরির অভিজ্ঞতা যাদের আছে। ফুটবল ক্লাব ইন্টার মায়ামির মাঠও তাদের হাতেই তৈরি। মাঠের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের গ্যালারির উচ্চতা ২০ মিটারের বেশি, যেখান থেকে দৃশ্যমান হবে ম্যানহাটান স্কাইলাইন। উত্তর প্রান্তে তৈরি করা হয়েছে মিডিয়া প্যাভিলিয়ন।
এই প্রান্তে ‘প্রাইভেট পার্টি’ এরিয়াও থাকছে, যেখান থেকে ‘সত্যিকারের আমেরিকান অভিজ্ঞতা’ নিয়ে খেলা উপভোগ করা যাবে। মাঠের কিছু নান্দনিক দৃশ্যও এই প্রান্ত থেকে দেখা যাবে। এবারের বিশ্বকাপের সহ-আয়োজক যুক্তরাষ্ট্রে যে ১৬টি ম্যাচ হবে, এর মধ্যে ৮টিই হবে এই নাসাউ কাউন্টি ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে। গ্রুপ পর্বে ভারতের ৩টি ম্যাচ আছে এই মাঠে। বিপুলসংখ্যক প্রবাসীকে ভাবনায় রেখেই উপমহাদেশের দলগুলির ম্যাচ বেশি রাখা হয়েছে নিউ ইয়র্কের এই ভেন্যুতে। উদ্বোধনী আয়োজনে বোল্টসহ অন্য তারকারা বিশাল একটি ব্যাটে অটোগ্রাফ দেন। দৈত্যাকৃতির ব্যাটটি প্রদর্শনের জন্য মাঠে রাখা হবে বিশ্বকাপজুড়েই।
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা