নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাধ্যতামূলক হওয়া সত্ত্বেও সরকারের বিপুলসংখ্যক উন্নয়ন প্রকল্পের সমাপ্ত প্রতিবেদন দীর্ঘদিনেও জমা দেয়া হয়নি। অথচ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ৩ মাসের মধ্যে সমাপ্ত প্রতিবেদন (পিসিআর) দেয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে ১৩৬টি প্রকল্পের সমাপ্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়নি। তার মধ্যে আড়াই থেকে তিন বছর আগেই বেশ কয়েকটি শেষ হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রকল্পগুলোর প্রান্তিক মূল্যায়নের কাজ। দীর্ঘদিন প্রকল্পগুলোর সমাপ্ত প্রতিবেদন না দেয়ায় প্রকল্পগুলোতে নানা অনিয়ম থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে কিনা, প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কতোটুকু পূরণ হয়েছে ওই ধরনের নানা বিষয় সরেজমিন পরিদর্শন করে খতিয়ে দেখা হয়। কিন্তু সমাপ্ত প্রতিবেদন বা পিসিআর না পেলে তা করা সম্ভব হয় না। আইএমইডি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে আইএমইডি ২২৩টি প্রকল্পের সমাপ্ত প্রতিবেদন পেলেও আরো ১৩৬টি প্রকল্পের সমাপ্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। ওসব প্রকল্পের মধ্যে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয় ‘মীরসরাই-ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চলে রেললাইন নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা বিশদ ডিজাইন শীর্ষক প্রকল্পটি। কিন্তু ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও ওই প্রকল্পের সমাপ্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। ‘বরিশাল সিটি করপোরেশনের অবকাঠামো নির্মাণ ও সৌন্দর্য বর্ধন’ প্রকল্পেরও একই অবস্থা। ওই প্রকল্পটি ২০১৫ সালে শুরু হয়ে ২০১৮ সালের জুনে শেষ হয়। কিন্তু ৩ বছরের বেশি সময় পার হলেও প্রকল্পটির সমাপ্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। তাছাড়া রাজশাহী মহানগরীতে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার পুনঃসংস্কার প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয়। কিন্তু ওই প্রকল্পের সমাপ্ত প্রতিবেদন জমা পড়েনি। একইভাবে ‘সামাজিক সাংস্কৃতিক পরিবেশ এবং প্রতœতত্ত্ব অবকাঠামোর উন্নতি সাধন ও সংরক্ষণের মাধ্যমে রাজশাহী মহানগরীর টেকসই উন্নয়ন (সংশোধিত)’ প্রকল্পটিও ২০১৮ সালের জুন মাসে শেষ হলেও আইএমইডি সমাপ্ত প্রতিবেদন পায়নি। ‘বরিশাল সিটি করপোরেশেনের বিভিন্ন স্থানে সড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণ ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ’ প্রকল্পটি বিগত ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের জুনে শেষ হলেও সমাপ্ত প্রতিবেদন বা পিসিআর জমা হয়নি। ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পটি ২০১৯ সালের জুন মাসে শেষ হলেও পিসিআর জমা দেয়া হয়নি।
সূত্র জানায়, অনেক সময় ভাড়াটে কিংবা অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে প্রকল্প পরিচালক নেয়া হয়। তারা প্রকল্প শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যত্র চলে যায়। এমনকি কর্মকর্তারাও অস্থায়ী হওয়ায় চাকরি থেকে চলে যায়। ফলে পরবর্তীকালে রেকর্ডপত্র আর খুঁজে পাওয়া যায় না। আর দায়-দায়িত্ব তখন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা মন্ত্রণালয়ের ওপর বর্তায়। কিন্তু তারা আর পিসিআর দিতে পারে না। এমন সমস্যা সমাধানে প্রকল্প শেষ হওয়ার ৩ মাস আগে থেকেই পিসিআর তৈরির কাজ শুরু করা জরুরি। তাছাড়া প্রকল্পের পরিচালকসহ প্রকল্পে কর্মরতদের পিসিআর দিয়ে যাওয়া বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবে তেমন উদ্যোগ নেই। ফলে অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্পের সমাপ্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার ক্ষেত্রে গড়িমসির ঘটনা ঘটছে।
এদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, যে কোনো নিয়ম না মানলেই তা অনিয়ম বলা হয়। প্রকল্পের সমাপ্ত প্রতিবেদন সময়মতো জমা না দেয়া একটি বড় অনিয়ম। কারণ তা পেলেই আইএমইডি প্রকল্পের সার্বিক অবস্থার মূল্যায়ন করতে পারে। আর তা না দেয়ার অর্থ হলো প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো ঘাপলা থাকতে পারে। তিন মাসের নিয়ম থাকলেও সেখানে ৬ মাস সময় লাগতে পারে। কিন্তু এক বছর, দুই বছর, তিন বছর পর্যন্ত পিসিআর আসবে না তা গ্রহণযোগ্য নয়। মূলত এ বিষয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। জবাবদিহিতা করতে যারা ভয় পায় তারাই পিসিআর নিয়ে গড়িমসি করবে। এ বিষয়ে আরো কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী জানান, প্রকল্প শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে পিসিআর জমা দেয়া প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের জন্য বাধ্যতামূলক। ২০১৬ সালের সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন পদ্ধতি সংক্রান্ত পরিপত্রে এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। কিন্তু অনেকেই পিসিআর দিতে অনিয়মের আশ্রয় নেয়। এ বিষয়ে আইএমইডি কঠোর হতে পারে। কারণ এটা পরিকল্পনা শৃঙ্খলারপরিপন্থি কাজ।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ