March 29, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, May 17th, 2022, 9:13 pm

বানের পানিতে ভাসছে সিলেট

জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
সিলেটে টানা বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকার কারণে বন্যার পানি আরও বাড়তে পারে। সিলেট শহরসহ আশপাশের বিভিন্ন উপজেলাতে ক্রমাগত পানি বাড়ছেই। গতকাল বিকাল থেকে হঠাৎ করেই সুরমার পানি বাড়ায় বেশ আতঙ্কের মধ্যেই রাত পার করেছেন সিলেট নগরীর কয়েক হাজার মানুষ। যত সময় যাচ্ছে বন্যা পরিস্থিতির ততোই অবনতি হচ্ছে।
১৭ মে মঙ্গলবার সকাল থেকেই সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।নগরের শেখঘাট, কলাপাড়া, মোল্লাপাড়া, লামাপাড়া, ঘাসিটুলা, কালীঘাট, ছড়ারপার,লালাদিঘীরপার,মাছিমপুর, উপশহরসহ বেশ কয়েকটি এলাকার রাস্তাঘাট ইতিমধ্যে পানির নিচে তলিয়ে গেছে।অনেক বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।বিশেষ করে অফিসগামী যাত্রী,ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীরা পানি মাড়িয়েই তাদের গন্তব্যস্থলে ছুটছেন।
সিলেট বাইকিং কমিউনিটির সভাপতি শাহিদ জামান বলেন, এ যাবৎকালে সিলেট শহরে এতো পানি উঠতে দেখি নাই।এসময় তিনি সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা জানান। গত ৫-৬ দিনের অবিরাম বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলার বেশ জায়গা প্লাবনের কবলে পড়েছে।ডুবে গেছে রাস্তাঘাট।অনেক জায়গায় বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে।হঠাৎ করেই সুরমার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেট নগরীর বেশ কিছু জায়গায় ঢুকে পড়েছে বন্যার পানি।
নগরীর মাছিমপুর এলাকার বাসিন্দা আবুল হাসনাত বলেন,সন্ধ্যার পর থেকেই আমাদের এলাকার বিভিন্ন জায়গায় পানি বাড়তে শুরু করেছে। এই পানি বাড়ার হার অনেক বেশি মনে হচ্ছে।আমার বাসায় এখনও পানি ডুকেনি তবে খুব চিন্তায় আছি।
জৈন্তাপুর, কোম্পানিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাটের বিভিন্ন নদ-নদী ও খালের পানি অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে।এসব জায়গায় নদীর পানি বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও সিলেট সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন হাওরের পানিও বাড়ছে সমানতালে পাল্লা দিয়ে।
আবহাওয়া পরিস্থিতি নিয়ে সিলেটের আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ চৌধুরী বলেন,গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণের কারণেই মূলত সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় পানি বেড়েছে।এদিকে উজানী ঢলের কারণে হঠাৎ করে বেড়েছে সিলেটের নদীগুলোর পানি।তিনদিন আগেও যেখানে পানি নদীর পার থেকে কয়েকফুট নিচে ছিলো সেখানে গত ২৪ ঘন্টায় কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়েছে। সিলেট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমদ জানান,সিলেটের নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে।এটি দুশ্চিন্তার কারণ।
তিনি আরও জানান,ভারতের মেঘালয় রাজ্যে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে,আর সেই পানি উজান বেয়ে বাংলাদেশে আসছে।যদি ভারতের মেঘালয় রাজ্যে বৃষ্টি না কমে এই পানি কমার কোন সম্ভাবনা নেই।টানা বর্ষণ আর ঢলের কারণে সিলেটের সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১.৫ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।এই পানি আরও বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মুজিবর রহমান বলেন, ‘বন্যার্তদের মধ্যে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, সুরমা-কুশিয়ারা, লোভা, সারি ও দলাই নদীর পানি ৭টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টার প্রতিবেদন অনুযায়ী কানাইঘাটে সুরমার পানি ১৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টি না থাকলেও গতকালের চেয়ে ওই পয়েন্টে আজ আরও ১৮ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। সিলেটে সুরমার পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উৎসমুখ আমলশীদে কুশিয়ার নদীর পানি ১৩০ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহমান রয়েছে। সিলেটের বিয়ানীবাজার শেওলা পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি ৩৫ সেন্টিমিটার উপরে, সারি নদীতে ২ সেন্টিমিটার, লোভা ছড়ায় পানির গতি প্রবাহ ১৪.৬৫ সেন্টিমিটারে প্রবাহমান রয়েছে।
জানা গেছে, বরাক মোহনা থেকে উৎপত্তিস্থল লেকে সুরমা নদীর ২৪৯ কিলোমিটার বা ১৫৫ মাইল দৈর্ঘ্যের নদীটি সিলেট নগরের বুক চিড়ে সুনামগঞ্জ জেলার বাউলাই নদীর মোহনায় গিয়ে মিশেছে। শুষ্ক মৌসুমে সুরমার তলদেশ চারণ ভূমিতে পরিণত হয়। যে নদী দিয়ে একসময় জাহাজ চলতো। সেই সুরমার বুকে শুষ্ক মৌসুমে খেলার মাঠে পরিণত হয়। আর ঘন ঘন সেতু দিয়ে নদী শাসন করায় এবং উজানের পাহাড়ি ঢলে নদীর তলদেশ ভরাট হওয়াতে বর্ষায় বৃষ্টি ও উজানের নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সহজেই টইটুম্বুর হয় সুরমা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে ফের সুরমা নদী খননের জন্য সমীক্ষা চালানো হয়। তবে এখন পর্যন্ত এ সমীক্ষা প্রতিবেদনও আলোর মুখ দেখেনি। অবশ্য ২০১৮ সালে সিলেট সদর উপজেলার কানিশাইলে ৬০০ মিটার সুরমা নদী খনন করা হয়। এ সময় সিলেট সদর উপজেলা এবং কানাইঘাট উপজেলার কয়েকটি অংশে নদী খননের জন্য প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। কিন্তু তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে নদীটির উৎসমুখের ৩২ কিলোমিটারে ৩৫টি জায়গাসহ বিভিন্ন স্থানে পলি জমে ভরাট হয়ে পড়েছে তলদেশ। এ অবস্থায় এ নদীর খনন ছাড়া সিলেট নগরীর সুরমা তীরবর্তী এলাকাগুলোতে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হবে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।