April 19, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, January 4th, 2023, 5:17 pm

বাবার লাশ বাড়িতে, মেয়ে বিসিএস পরীক্ষায়!

এম. মছব্বির আলী, মৌলভীবাজার:

কিডনীজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার বিকেলে বাবা মোঃ তাহির আলী (৬৫) মারা গেছেন। বাড়িতে নেমে আসে শোকের ছায়া। বাবাকে হারিয়ে অনেকটা নির্বাক হয়ে যায় মেয়ে রেবা বেগম। শোকে বিহ্বল তাঁর স্বজনেরা নিচ্ছেন লাশ দাফনের প্রস্তুতি। কিন্তু আজ বুধবার সকাল ১০টায় তাঁর বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা। এমন অবস্থায় মনকে পাথরে চাপা দিয়ে বাবার লাশ বাড়িতে রেখেই পরীক্ষার হলে বসতে হলো রেবা বেগমকে। সে ৪৪ তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। পরীক্ষা শেষে বাড়িতে ফিরে আর বাবাকে সে দেখতে পায়নি। এরমধ্যেই জানাজা শেষে বাবার লাশ দাফন হয়ে গেছে।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় আজ বুধবার এমন হৃদয় বিদারক ঘটনাটি ঘটে। রেবা বেগম সিলেট মদন মোহন কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছে।

রেবা বেগমের বিসিএস পরীক্ষার কেন্দ্র পড়েছে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজ। বুধবার সকাল ১০টার আগে চোখ মুছতে মুছতে ওই কেন্দ্রে যায় সে। সহপাঠী ও কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সহযোগিতায় ৪৪ তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয় সে।

রেবার পরিবার ও স্থানীয় লোকজন জানান, কুলাউড়ার কাদিপুর ইউনিয়নের উত্তর চাতলগাঁও গ্রামের বাসিন্দা, সাবেক ইউপি সদস্য ও রবিরবাজারের বিশিষ্ট ফার্ণিচার ব্যবসায়ী মোঃ তাহির আলী মঙ্গলবার বিকেলে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মেয়ে রেবা বেগম আজ ৪৪ তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়। হঠাৎ করে মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাহির আলীর মৃত্যু হয়। বাড়ি জুড়ে শোকের আবহ, চলছে লাশ দাফনের প্রস্তুতি। বাবার মৃত্যুর পর রেবা ভেঙে পড়লেও স্বজনদের কথায় বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে যায় সে।

এর আগে বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় মনসুর শাহী ঈদগাহ মাঠে বাবা তাহির আলীর জানাজা হয়। জানাজায় তাহির আলীর আত্মীয়স্বজন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পাড়া প্রতিবেশী ও আশপাশের এলাকার প্রায় সহস্রাধিক মানুষ অংশ নেন। পরে মনুসর শাহী ঈদগাহ প্রাঙ্গণের কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে তাহির আলী ৫ কন্যা, ৫ ছেলে ও দুই স্ত্রী রেখে গেছেন।

প্রয়াত তাহির আলীর ছেলে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর যুদ্ধ বিমানের ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত আল আমিন আহমদ বলেন, প্রায় ৬ মাস আগে আমার বাবার দুটি কিডনীতে সমস্যা দেখা দেয়। পরে আমরা তাকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে এক মাস ভর্তি রেখে চিকিৎসা করাই। ৩ মাস ধরে উনার ডায়ালাইসিস চলছিল। সর্বশেষ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করানোর জন্য বাবাকে বাড়ি থেকে নেয়া হয়। সেখানে ডায়ালাইসিস করানো অবস্থায় বিকেলে বাবার মৃত্যু হয়। পরে সন্ধ্যা ৬টায় লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরি। এরই মধ্যে আমার বোন বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। সে সিলেটে থেকে পড়াশোনা করছে।

পরীক্ষা শেষে রেবা বেগম বলল, ‘বাবা আমাকে অনেক ভালোবাসতেন। বাবা চাইতেন আমি যেন পড়ালেখা করে অনেক বড় হই। তাই এমন অবস্থায়ও আমি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। বাবার আত্মাকে আমি কষ্ট দিতে চাই না।’ আপনারা সবাই আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন, আর আমি যদি বিসিএস পাশ করি তাহলে আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ হবে।