April 24, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, December 26th, 2021, 8:02 pm

বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে রেলওয়ের সব নৌযান

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ের সব নৌযান। আর ওই কার্যক্রম চালাচ্ছে রেলওয়ের মেরিন বিভাগ। এর মাধ্যমে ইতি টানা হচ্ছে রেলের নৌরুটের ৮৩ বছরের নৌযান চলাচলের ইতিহাস। ইতিমধ্যে ৫টি নৌযান নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। আর অবশিষ্ট নৌযানগুলো বিক্রির প্রক্রিয়াও চলছে। ওই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। যদিও বালাসি-বাহাদুরাবাদ নৌ-রুটে ফেরি সার্ভিস চালুর জন্য উভয় পাশে ১৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে টার্মিনাল নির্মিত হয়েছে। কিন্তু রেলওয়ের ওসব নৌযান না থাকলে টার্মিনাল দুটি কোনো কাজেই আসবে না। এমন পরিস্থিতিতে বালাসি-বাহাদুরাবাদ নৌ-রুটে ফেরি সার্ভিস চালুর দাবিতে ওই এলাকায় আন্দোলন চলমান রয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গাইবান্ধা শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে বালাসি ঘাটে বর্তমানে প্রায় ১১টি নৌযান রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে তিতুমীর মালবাহী টাগ একটি, বাহাদুর শাহ টাগ একটি, বার্জ-১৬ একটি, বার্জ-১০ একটি, স্টোর পন্টুন একটি, পন্টুন দুটি, ঝালাই বোর্ড একটি এবং ৩টি শো-গার্ডার। তার মধ্যে তিতুমীর ও বাহাদুর শাহ ৩৯টি করে ট্রেনের বগি টেনে নিয়ে যেতে পারতো। কিন্তু দীর্ঘসময় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ওসব নৌযানের বেশ কিছু অকেজো হয়ে পড়েছে।
সূত্র জানায়, চলতি বছরের মার্চে রেলওয়ের জিওয়ান নামের একটি নৌযান নিলামে বিক্রি করা হয়। জিওয়ানের ওজন আনুমানিক ৫০০ টন। ঢাকার মিরপুরের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে নৌযানটি বিক্রি করা হয়েছে। মাত্র ৭৬ লাখ টাকায় ওই নৌযান নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। জিওয়ান ছাড়াও সম্প্রতি বালাসি ঘাটে রাখা আরো ৪টি নৌযান সম্প্রতি নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। তবে এখনো সেগুলো ক্রেতাদের বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। আর অবশিষ্ট ৬টি নৌযান বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করার প্রক্রিয়া চলছে। ওসব নৌযানের মধ্যে বাহাদুর শাহ ও তিতুমীর নামের দুটি জাহাজ সচল রয়েছে। কিন্তু ওই দুটি নৌযানকে অচল দেখিয়ে নিলামে বিক্রির প্রস্ততি চলছে। তবে রেলের ৫টি নৌযান বিক্রির বিষয়টি গাইবান্ধা মেরিন বিভাগের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত মেরিন সুপার এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে লালমনিরহাট অঞ্চলের বিভাগীয় যন্ত্র প্রকৌশলী (লোকো) রাসেল আলম নিশ্চিত করেছে। এখন অবশিষ্ট নৌযানগুলো বিক্রির প্রক্রিয়া চলছে। ওই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হলেও এখনো বিক্রির আদেশ হয়নি। এর বেশি কিছু বলতে তিনি রাজি হননি। নৌযান বিক্রির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে দরপত্র আহ্বান এবং বিক্রি করা হচ্ছে। ওখানকার কর্তৃপক্ষই সবকিছু জানে। কিন্তু রেলওয়ের মেরিন বিভাগ থেকে নৌযান বিক্রির বিষয়ে রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক রাশেদুল হাসান গুমাধ্যমকে কোনো তথ্য দিতে নারাজ। তবে লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার শাহ সুফি নুর মোহাম্মদ জানান, রেলওয়ের ওসব নৌযান বর্তমানে রেলওয়ের প্রয়োজন নেই। সেগুলো একদিকে যেমন রেলের কোনো কাজে লাগছে না, অন্যদিকে চলাচলেরও উপযোগী নয়। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ওই নৌযানগুলো দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া নৌ-রুটও চালু নেই। সেজন্যই ওসব নৌযান বিক্রি করা হচ্ছে।
এদিকে বালাসি-বাহাদুরাবাদ নৌ-রুটে ফেরি সার্ভিস চালুর দাবিতে স্থানীয় বাসিন্দারা মানববন্ধনসহ নানা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। আন্দোলনকারীদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে ফেরি চালুর জন্য আন্দোলন চালানো হচ্ছে। ররুটটি চালু হলে ঢাকার সঙ্গে উত্তরের ৮ জেলার দূরত্ব ২-৩ ঘণ্টা কমে যাবে। পাশাপাশি ঢাকা-রংপুর জাতীয় মহাসড়ক ও যমুনা সেতুর ওপর যানবাহনের চাপ কমবে। আর স্থানীয় জনগণের দাবির মুখেই উভয় পাশে টার্মিনাল হয়েছে এবং রুটটিও চালুর অপেক্ষায়। কিন্তু হঠাৎ করে কি কারণে ওসব নৌযান বিক্রি করা হচ্ছে তা স্থানীয় বাসিন্দাদের বোধগম্য হচ্ছে না। অথচ রেলওয়ের নৌযানগুলো সংস্কার করে আরো দীর্ঘদিন কাজে লাগানো সম্ভব।
এদিকে টার্মিনাল প্রসঙ্গে লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার জানান, নদীর উভয় পাশে বিআইডব্লিউটিএ টার্মিনাল নির্মাণ করেছে। বিআইডব্লিউটিএ ওই বিষয়টি দেখবে। ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৮ সালে তিস্তামুখ ঘাট-বাহাদুরাবাদ নৌ-রুট চালু করে। আর ওই ঘাটের একপারে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ ঘাট, আর অপরপারে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ঘাট।