অনলাইন ডেস্ক :
বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বেশ খানিকটা কমে যাওয়ায় গাড়ি, কসমেটিকস, সোনাসহ ‘অত্যাবশ্যকীয় নয়’ এমন পণ্যের আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে নেপাল। পর্যটনে আয় ও বিদেশে কাজ করা নেপালিদের দেশে টাকা পাঠানোর পরিমাণ কমে যাওয়ায় সরকারি ঋণ নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ার মধ্যে দেশটি এ সিদ্ধান্ত নিল। সম্প্রতি নেপাল সরকার দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকেও তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। এই পরিস্থিতিতে অনেকে অর্থনৈতিক সংকটে পড়া শ্রীলঙ্কার কথা মনে করিয়ে দেওয়ায় নেপালের অর্থমন্ত্রী বলছেন, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনা তাকে ‘বিস্মিত করছে’। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘নেপাল রাষ্ট্র ব্যাংক’ এর হিসাব অনুযায়ী, মধ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৭ মাসে তাদের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ১৬ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়ে এক দশমিক ১৭ ট্রিলিয়ন নেপালি রুপিতে (৯ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার) নেমে আসে। একই সময়ে বিদেশে কাজ করা নেপালিদের দেশে পাঠানো অর্থের পরিমাণও প্রায় ৫ শতাংশ কমেছে। নেপালের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র নারায়ন প্রসাদ পোখারেল বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, তাদের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ‘চাপে আছে’ বলেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে। প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে অত্যাবশ্যকীয় নয় এমন পণ্য আমদানিতে বিধিনিষেধ দিতে কিছু পদক্ষেপ দরকার হয়ে পড়েছিল, বলেছেন তিনি। তবে আগেভাগে পুরো মূল্য পরিশোধ করলে আমদানিকারকদের ৫০টি ‘বিলাসী পণ্য’ আনার অনুমতি দেওয়া হবে। যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তাতে আমদানি নিষিদ্ধ নয়, অনুৎসাহিত করা হচ্ছে, বলেছেন পোখারেল। কয়েকদিন আগে নেপালের সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর মাহা প্রসাদ অধিকারীকে তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়; তবে কী কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা জানায়নি তারা। গত সোমবার নেপালের অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, মহামারীর অর্থনৈতিক ক্ষতি কমাতে কর্মকর্তারা ব্যয় বাড়ানোয় সরকারি ঋণের পরিমাণ জিডিপির ৪৩ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। তবে এরপরও দেশের অর্থনীতির স্বাস্থ্যকে ‘স্বাভাবিক’বলছে তারা। বাহ্যিক খাতে কিছু চাপের কারণে আমদানি ব্যবস্থাপনা ও বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে এরইমধ্যে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, এক বিবৃতিতে বলেছে মন্ত্রণালয়টি। একইদিন নেপালের অর্থমন্ত্রী জনার্দন শর্মা বলেছেন, নেপালের ঋণের পরিমাণ অন্য অনেকের তুলনায় কম। লোকজন কেন শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনা করছে, আমি বিস্মিত, বলেছেন তিনি। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ তলানিতে নেমে যাওয়া এর একটি বড় কারণ। ‘শ্রীলঙ্কার তুলনায় নেপালের অবস্থা বেশ ভালো’ বলে মন্তব্য করেছেন লন্ডনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ অ্যালেক্স হোমস। যে পরিমাণ রিজার্ভকে ‘নূন্যতম প্রয়োজন’ বলে বিবেচনা করা হয় নেপালের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ তার দ্বিগুণ আর সরকারের ঋণও ‘তেমন বেশি নয়’বলে জানিয়েছেন হোমস। এখনকার ঘাটতি কমিয়ে না আনতে পারলে পরিস্থিতি অবশ্যই দিন দিন খারাপের দিকে যাবে; তবে এখনি সংকট দেখা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি, বলেছেন তিনি।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি