September 24, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, December 8th, 2022, 9:37 pm

বিদেশী জাহাজের পাওনা ভাড়া পরিশোধ নিয়ে বিপাকে বিএসসি

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বিদেশী জাহাজের পাওনা ভাড়া পরিশোধ নিয়ে বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিতে বিএসসির মাধ্যমে বিদেশ থেকে ভাড়া করা জাহাজের পাওনা পরিশোধ করে থাকে। আর ওই জাহাজ ভাড়া বিএসসি ডলারের মাধ্যমে পরিশোধ করে। কিন্তু বর্তমানে বিএসসিকে বাংলাদেশী টাকায় জাহাজ ভাড়ার পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে। আর এমন পরিস্থিতিতে বিদেশী জাহাজ মালিকদের পাওনা ভাড়া ডলারে সময়মতো পরিশোধ করা নিয়ে বিএসসি বিপাকে পড়েছে। কারণ সঠিক সময়ে জাহাজ ভাড়া পরিশোধে দেরি হলে বিএসসিকে প্রতিদিনের জন্য অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করতে হয়। আর এমন পরিস্থিতি বজায় থাকলে আগামী দিনগুলোয় বিএসসিকে বিপুল পরিমাণ আর্থিক লোকসানের মুখে পড়তে হবে। পাশাপাশি বিদেশী জাহাজ মালিকরা পরিবহন চুক্তি বাতিলের পদক্ষেপ নিলে তা জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘœ ঘটাবে। বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিপিসির নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হচ্ছে বিদেশী জাহাজে জ্বালানি তেল পরিবহন। একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়মিতভাবে জ্বালানি তেল আমদানি ও ওই বাবদ বিদেশী জাহাজের ভাড়া পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু বর্তমানে দেশে চলমান ডলার সঙ্কটে স্থানীয় মুদ্রওার বিপরীতে ডলার কিনে ওই ধরনের কার্যক্রম চালু রাখা নিয়ে সংশয় বাড়ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিপিসির জ্বালানি তেল আমদানি কার্যক্রম চালু রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা জরুরি। কারণ স্থানীয় মুদ্রায় বিল পরিশোধ করায় তার বিপরীতে ডলার কিনে আমদানি কার্যক্রম চালু রাখতে হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতা ছাড়া জ্বালানি আমদানি কার্যক্রম চালু রাখা বর্তমান বেশ চ্যালেঞ্জিং।
সূত্র জানায়, চুক্তি অনুযায়ী বিএসসির বিদেশী জাহাজ মালিকদের কার্গো খালাসের ১৪ দিনের মধ্যে ফ্রেইট বা জাহাজ ভাড়া পরিশোধের বাধ্যবাধকতা আছে। সঠিক সময়ে জাহাজ ভাড়া পরিশোধে বিলম্ব হলে বিএসসিকে প্রতিদিনের জন্য অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করতে হয়। এমন পরিস্থিতি বিএসসি বিপুল পরিমাণ আর্থিক লোকসানের শঙ্কা বাড়াচ্ছে। পাশাপাশি ফ্রেইট চুক্তি বাতিল এবং রাষ্ট্রীয় জ্বালানি তেল পরিবহনকারী জাহাজ বিদেশী বন্দরে আটকা পড়ার শঙ্কাও বাড়ছে। যা গোটা জাতীয় জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থাকে বিঘিœত করতে পারে। কারণ এমন পরিস্থিতির কারণে ভবিষ্যতে জ্বালানি তেল পরিবহনকারী জাহাজগুলো বাংলাদেশ জ্বালানি পরিবহনে রাজি না হলে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের পরিশোধনাগার বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বিঘিœত হতে পারে পরিশোধিত জ্বালানি তেল উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা। তাতে জ্বালানি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ার উপক্রম হওয়ার পাশাপাশি জ্বালানি বাজারে অস্থিতিশীলতায় সার্বিক পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা বাড়ছে।
সূত্র আরো জানায়, বছরে দেশে প্রায় ১৫ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়। তাছাড়া ডিজেল আমদানি করা হয় ৪০ লাখ টন। বিদেশী জাহাজে করে বিপুল পরিমাণ ওই জ্বালানি তেল আসে। সেজন্য বিপিসিকে বছরে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে হয়। বিদেশী জাহাজে করে জ্বালানি তেল আমদানিতে বিপিসির বিপুল অংকের বিদেশী মুদ্রা ব্যয়ের বিষয়টি সরকারেরও দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এরইমধ্যে বিপিসির জ¦ালানি তেল আমদানিতে বিদেশীর পাশাপাশি দেশী জাহাজও ব্যবহার করার বিষয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় নীতিগত সিদ্ধান্তও হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিপিসি সরকারি সংস্থা বিএসসির বহরে থাকা ৩টি জাহাজ তেল আমদানির জন্য ব্যবহার করবে। ব্যবহারের বিষয়টি ঠিক করতে দুই পক্ষ বৈঠক করবে। আর আগামী জানুয়ারি থেকে বিএসসির জাহাজ ব্যবহার শুরু হবে।
এদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি বিএসসির পক্ষ থেকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, বিপিসি সাধারণত চার্টারকৃত বিদেশী মাদার ট্যাংকার জাহাজের মাধ্যমে জ্বালানি তেল আমদানি করে। এতোদিন পর্যন্ত ওসব নৌযানের ভাড়া হিসেবে বিপিসির সরবরাহকৃত বৈদেশিক মুদ্রা বিএসসি বিদেশী জাহাজ মালিকদের পরিশোধ করেছে। কিন্তু সম্প্রতি এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আপত্তি জানানো হয়। ওই পরিপ্রেক্ষিতে বিপিসি এখন বিএসসিকে বৈদেশিক মুদ্রার পরিবর্তে স্থানীয় মুদ্রায় জ্বালানি তেলবাহী জাহাজের ভাড়া পরিশোধ করছে। তাতে ডলারে বিদেশী জাহাজের ভাড়া পরিশোধ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে বিএসসি।
অন্যদিকে এ বিষয়ে বিপিসির চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ জানান, বিএসসি একটি চিঠি পাঠিয়ে এ বিষয়ে বিপিসির কাছে সহযোগিতা চেয়েছে। বিপিসির পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে। কারণ বিএসসির পেমেন্ট জটিলতায় ঝামেলা হলে সেখানে বিপিসির জ্বালানি তেল আমদানিতে প্রভাব পড়বে। জ্বালানি তেল আমদানি বাবদ বিপিসির কাছে যে পরিমাণ ডলার ছিল তা দিয়ে হয়তো কিছুটা সহযোগিতা করা সম্ভব হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের আপত্তির কারণে সেটি এখন আর করা যাবে না।