April 20, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, December 15th, 2021, 9:21 pm

বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অন্যতম আগ্রহ নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অন্যতম আগ্রহে পরিণত হয়েছে। সরকার বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এদেশও নবায়নযোগ্য শক্তির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছে। আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। আর ওই খাতে চীন, ভারত ও সিঙ্গাপুরের মতো দেশ বিনিয়োগ করায় বর্তমানে বিশ্বের অন্যান্য দেশের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াট। নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে তার মাত্র ৩ শতাংশ বা ৭৬৬ মেগাওয়াট আসছে। আবার এ নবায়নযোগ্য জ্বালানির বেশির ভাগই সৌরবিদ্যুৎ থেকে আসে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে দেশে ১২টি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে এবং সেগুলোর সক্ষমতা অন্তত ৭০০ মেগাওয়াট। তাছাড়া আরো অন্তত ৫০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে ১০টি দেশের বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। যে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর কাজ চলছে সেগুলোতে দেশী প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি যৌথভাবে বিভিন্ন বিদেশী প্রতিষ্ঠানও বিনিয়োগ করেছে। বর্তমানে যে সক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মিত হচ্ছে তার মধ্যে অন্তত ২৫০ মেগাওয়াট সক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদেশী বিনিয়োগ রয়েছে।
সূত্র জানায়, নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় দেশের সবচেয়ে বৃহৎ সোলার পার্ক নির্মিত হচ্ছে। তিস্তা সোলার লিমিটেড নামে ২০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার ওই প্রকল্পে বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের পাশাপাশি চীনা প্রতিষ্ঠান টিবিইএ জিনজিয়াং সান ওয়েসিস কোম্পানি লিমিটেড বিনিয়োগ করেছে। তাছাড়া জাপানি প্রতিষ্ঠান ইকিসোজি কোম্পানি লিমিটেডের উদ্যোগে সিলেটে নির্মিত হচ্ছে ৫ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প। বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার বড় দুর্গাপুরে নির্মাণাধীন ১০০ মেগাওয়াট সোলার পার্কে বিনিয়োগ করছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোম্পানি এনারগন টেকনোলজিস এফজেডই ও চীনের কোম্পানি চায়না সিনার্জি কোম্পানি লিমিটেড। আর সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় ৩২ মেগাওয়াট সক্ষমতার সোলার পার্ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে। ওই প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে হাওর বাংলা-কোরিয়া গ্রিন এনার্জি লিমিটেড। নির্মাণাধীন সৌরবিদ্যুতের ওসব প্রকল্পের বাইরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নবায়নযোগ্য খাতে আরো অন্তত ডজনখানেক কোম্পানি বিনিয়োগ করতে চায়। তার মধ্যে পঞ্চগড়ে ৫০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠান এইট মিনিট এনার্জি সিঙ্গাপুর হোল্ডিংস-২ প্রাইভেট কোম্পানি লিমিটেড। পাবনায় ১০০ মেগাওয়াট সোলার পার্কে ভারতীয় কোম্পানি, নীলফামারীর ডিমলায় ৫০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুতে বিনিয়োগে আগ্রহী নরওয়ের কোম্পানি, চাঁদপুরে ৭ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে কনসোর্টিয়াম করে যৌথভাবে বিনিয়োগ করবে বাংলাদেশী কোম্পানি ও সিঙ্গাপুরের কোম্পানি।
সূত্র আরো জানায়, দেশে সৗরবিদ্যুতের পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকায় বায়ুবিদ্যুতেও বিভিন্ন দেশ সম্ভাবনা দেখছে। ওই কারণে বায়ুশক্তিতেও ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে। ফেনীর সোনাগাজীতে ৩০ মেগাওয়াট বায়ুভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে ভারতের দুটি কোম্পানি বিনিয়োগ করছে। তাছাড়া বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনেও বিদেশী বেশ কয়েকটি কোম্পানি আগ্রহ দেখিয়েছে। তার মধ্যে সম্প্রতি বর্জ্যভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে একটি চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন চুক্তি সই করেছে। ৪২ দশমিক ৫ মেগাওয়াট সক্ষমতার ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রে চীনা প্রতিষ্ঠানটি প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে।
এদিকে বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগে বাংলাদেশ নির্ভরযোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছে। ফলে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা এখন এদেশে বিনিয়োগ করতে চাইছে। বিশেষত চীন, রাশিয়া, ভারতের মতো দেশ এখানে বিনিয়োগ করায় অনেকে আস্থা পাচ্ছে। ওই ধারাবাহিকতায় পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতেও বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে অনেক দেশ। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বর্তমানে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী। ২০২০ সালে চীনা কোম্পানি বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুৎ খাতে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়। ওই অর্থ ৪৫০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ ও ৫০ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগ করা হবে। বিদ্যুৎ খাতের প্রতিষ্ঠান নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশের (এনডব্লিউপিজিসিএল) সঙ্গে যৌথভাবে ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
অন্যদিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে এখনো নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। ফলে সরকারও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের এ খাতে আকৃষ্ট করতে চায়। আর ওই সুযোগটাই বিদেশী বিনিয়োগকারীরা কাজে লাগাতে চাইছে। তাছাড়া অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ তুলনামূলক বেশি, ফলে দামও বেশি হবে। সেক্ষেত্রে বাড়বে মুনাফার পরিমাণ। সেটিও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অন্যতম আগ্রহের জায়গা। এনার্জি ট্র্যাকার এশিয়ার তথ্যানুযায়ী ২০১১ সালে বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির মধ্যে কেবল সৌরবিদ্যুতে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল মাত্র ২ কোটি ডলার। তারপর থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে ওই খাতে বিনিয়োগ হয়েছে ১০ কোটি ডলার। বিশ্বের ৮টি দেশের বিভিন্ন সংস্থা ওই অর্থ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে।
এ প্রসঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন জানান, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সরে আসছে। তার জায়গা দখল করছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি। এদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন দেশকে অনুপ্রাণিত করা হচ্ছে। অনেকেই সম্ভাব্য এলাকাগুলোর অবস্থান দেখে বিনিয়োগ করছে। আবার অনেকে পরিপূর্ণ তথ্য চাচ্ছে। তবে যারা বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে তারা মূলত এদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি, বিদ্যুৎ খাতের সামগ্রিক অবস্থা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করছে। কয়েক বছর ধরে দেশে জ্বালানি খাতের প্রচুর বিনিয়োগ হয়েছে, যার ফলাফল হিসেবে জীবাশ্ম জ্বালানিকেন্দ্রিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। তবে এখনো পিছিয়ে রয়েছে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ খাত। ফলে চলতি বছর মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদিত হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। আর তাই সেটি এখন বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অন্যতম আগ্রহের খাতে পরিণত হয়েছে।