April 25, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, October 10th, 2022, 9:21 pm

বিদ্যুতের চাহিদার চেয়ে উৎপাদন সক্ষমতা বেশি হওয়ায় ভারি হচ্ছে লোকসানের পাল্লা

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশে বিদ্যুতের উৎপাদনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোকসান। চাহিদার চেয়ে উৎপাদন সক্ষমতা বেশি হওয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ প্রতিবছর বাড়তি খরচ হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। আর এত বেশি লোকসান হচ্ছে যে পিডিবিকে বাজেটে বরাদ্দ ভর্তুকির চেয়ে বেশি অর্থ দিতে হচ্ছে। গত ১২ অর্থবছরে (২০১০-১১ থেকে ২০২১-২২) বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। আর লোকসান সামলাতে বিদ্যুতের দাম বারবার বাড়ানো হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে বিগত ২০১০-১১ অর্থবছরে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৬ হাজার ৬৩৯ মেগাওয়াট। ওই বছরে পিডিবির ৪ হাজার ৬২০ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়। সরকার তখন ৪ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়। ২০১১-১২ অর্থবছর উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে ৮ হাজার ১০০ মেগাওয়াটে দাঁড়ায় এবং পিডিবির ৬ হাজার ৬৯৩ কোটি টাকা লোকসান হয়। সরকার ভর্তুকি দেয় ৬ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা। এভাবেই ২০২০-২১ অর্থবছরে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ২৮০ মেগাওয়াট আর পিডিবির ক্ষতি হয় ১১ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা। তার মধ্যে ১১ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়। আর সর্বশেষ গত অর্থবছরে উৎপাদন ক্ষমতা হয়েছিল ২১ হাজার ৬৮০ মেগাওয়াট। ওই অর্থবছরে পিডিবির রেকর্ড পরিমাণ ২৯ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা লোকসান হয়। পিডিবি এখনো ওই ভর্তুকির পুরোটা পায়নি।
সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ খাতে বিপুল লোকসান সামাল দিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে শৃঙ্খলা ফেরানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি নবায়ন বা নতুন চুক্তির আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেয়ারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগকে ভর্তুকি ছাড়ের শর্ত হিসেবে অর্থ বিভাগ ওসব নির্দেশনা দিয়েছে। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়লেও ওই অনুসারে চাহিদা বাড়েনি। পাশাপাশি রয়েছে জ¦ালানি সংকট। সেজন্য সক্ষমতার একটা বড় অংশের বিদ্যুৎকেন্দ্রই উৎপাদনে থাকে না। আর বিদ্যুৎ না কিনলেও উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের বিপরীতে কেন্দ্র ভাড়া হিসেবে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ পিডিবিকে অর্থ পরিশোধ করতে হয়। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২১ হাজার ৭১২ মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে গড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াট। এখন পর্যন্ত চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। আর সর্বোচ্চ উৎপাদনের চেয়েও বর্তমান উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ৩২ শতাংশ বেশি। ২০১০-১১ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত ১২ বছরে বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর পেছনে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে সরকারকে প্রায় ৮৬ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা দিতে হয়েছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৩১৬২ মেগাওয়াট। আর ওই সক্ষমতার ৫৪ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়েছে। ওই সময় ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের ২ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা দিয়েছে পিডিবি। ২০১১-১২ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে সক্ষমতা ছিল ৩ হাজার ৫৮৩ মেগাওয়াট কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়েছে ৫৮ শতাংশ। ওই বছর ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা। এভাবে প্রতি বছরই ক্যাপাসিটি চার্জ বাড়ছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে বেসরকারি খাতের সক্ষমতা ছিল ৯ হাজার ৭৩৪ মেগাওয়াট এবং উৎপাদনে ছিল ৪৬ শতাংশ। ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে উদ্যোক্তাদের ১৩ হাজার ২১ কোটি টাকা দিয়েছে পিডিবি। তারপর গত অর্থবছরে বেসরকারি খাতের সক্ষমতা বেড়ে হয় ১১ হাজার ৫৩৪ মেগাওয়াট। আর উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় ৪৫ শতাংশ। ওই সময়ে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে পিডিবির খরচ হয়েছে ১৪ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। মূলত দেশে পরিকল্পনা অনুসারে চাহিদা না বাড়লেও বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নির্মাণাধীন ২০ কেন্দ্র থেকে আগামী কয়েক বছরে নতুন ১৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। তাছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে সরকারের আরো সাড়ে ১০ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার ১২টি বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, রক্ষণাবেক্ষণ ও পিক টাইমের লোড ব্যবস্থাপনার জন্য চাহিদার চেয়ে ১৫-২০ শতাংশ উৎপাদন সক্ষমতা বেশি থাকা প্রয়োজন বিশেষজ্ঞরা মনে করলেও বিদ্যুৎ বিভাগের মতে উৎপাদন ক্ষমতা ৩০ শতাংশ বেশি হওয়া উচিত। তবে পরিকল্পনা অনুসারে প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশে চাহিদার চেয়ে উৎপাদন সক্ষমতা ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ বেশি হবে। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ খাতে সরকারের আর্থিক চাপ আরো বাড়বে। আর ভর্তুকির ওপর নির্ভর করে বিদ্যুতের দাম ১৮ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। যদিও পিডিবি পাইকারি পর্যায়ে গড়ে ৬৬ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল।
এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বিদ্যুৎ বিভাগকে লেখা চিঠিতে আইপিপি, রেন্টাল এবং কুইক রেন্টাল কেন্দ্রের মাসভিত্তিক আর্থিক ক্ষতির বিবরণী পৃথকভাবে পরের মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে অর্থ বিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে। ৎওই অর্থ ভবিষ্যতে অডিটের মাধ্যমে নিরূপিত মোট প্রদেয় অর্থের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। তাছাড়া সুষ্ঠু ভর্তুকি ব্যবস্থাপনার স্বার্থে পিডিবি, অধীন প্রতিষ্ঠান ও বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিটগুলোতে রিয়েল টাইম ডাটানির্ভর ইআরপি সফটওয়্যার দ্রুত বসাতে হবে। আর্থিক শৃঙ্খলা ও জাতীয় বাজেট ব্যবস্থাপনার স্বার্থে বিদ্যমান বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি নবায়ন অথবা নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি বিবেচনার জন্য অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে।