November 20, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, August 30th, 2021, 8:58 pm

বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার বসানোতে ধীরগতি সেবা বঞ্চিত দেশের সিংহভাগ বিদ্যুৎ গ্রাহক

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক :

দেশের বিদ্যুৎ খাতে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কার্যক্রম অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে। বিগত এক দশকে দেশের মোট বিদ্যুৎ গ্রাহকের মাত্র সাড়ে ৮ শতাংশকে ওই সেবার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ৪ কোটি ১ লাখ। কিন্তু এখন পর্যন্ত ৬টি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির মোট ৩৫ লাখের কিছু বেশি গ্রাহক প্রিপেইড/স্মার্ট প্রিপেইড মিটারের সুবিধার আওতায় এসেছে। এখনো ওই সুবিধার বাইরে ৩ কোটি ৬৬ লাখ গ্রাহক। সরকার মূলত বিদ্যুৎ খাতের বকেয়া, চুরি ও সিস্টেম লস কমাতেই প্রিপেইড মিটার বসানোর উদ্যোগ নিয়েছিল। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ বিদ্যুতের সব গ্রাহককে প্রিপেইড সেবা দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। কারণ বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর আর্থিক উন্নয়ন ও গ্রাহককে সাশ্রয়ী করতে প্রিপেইড মিটারের কোনো বিকল্প নেই। তবে গত এক দশকে প্রিপেইড মিটার নিয়ে বিতরণ কোম্পানি ও সরকারের নানামুখী সিদ্ধান্ত ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বিলম্বিত করেছে। এমনকি ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দীর্ঘমেয়াদি কোনো উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০১০ সালে দেশে বিদ্যুতের প্রিপইড মিটার চালুর সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৬ সালের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে অন্তত দেড় কোটি গ্রাহককে প্রিপেইড মিটার সুবিধায় আনার কথা ছিল। আর লক্ষ্য ছিল ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের সব বিদ্যুতের গ্রাহককে প্রিপেইড মিটার সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা। কিন্তু চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ৬টি বিতরণ কোম্পানির আওতায় মাত্র ৩৫ লাখের কিছু বেশি গ্রাহক ওই সুবিধায় বিদ্যুৎ সেবা পাচ্ছে। বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর মতে, প্রিপেইড মিটার বসানোর কারিগরি জটিলতা, মিটার রিডারদের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি না হওয়া এবং পরবর্তী সময়ে স্মার্ট প্রিপেইড মিটারের কারিগরি স্পেসিফিকেশনসহ নানা কারণে প্রিপেইড মিটার বসানোর কাজ বিলম্ব হচ্ছে।
সূত্র জানায়, দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়তে শুরু করলে ২০১৪ সাল থেকেই প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজে তোড়জোড় শুরু হয়। শুরুতেই বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড প্রিপেইড মিটার বসানো শুরু করে। তারপর পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা আরো ৫টি কোম্পানি প্রিপেইড মিটার বসানো শুরু করে। তবে গত ৭ বছরে সরকারের প্রিপেইড মিটার বসানোর পরিকল্পনা খুব বেশি এগোয়নি। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্টদের মতে, সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ বিদ্যুতের সব গ্রাককে স্মার্ট প্রিপেইড মিটার সুবিধার আওতায় আনা। কিন্তু শুরুতে এমন ধরনের একটি প্রযুক্তি বাস্তবায়নে বেশ সময় লেগে যাচ্ছে। তবে স্মার্ট প্রিপেইড মিটার বসাতে বিতরণ কোম্পানিগুলো এখন তাদের নিজস্ব অর্থায়নে কাজ শুরু করেছে।
সূত্র আরো জানায়, বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রিপেইড মিটার বাস্তবায়নে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে রয়েছে। সংস্থাটির ৩ কোটি ১৮ লাখ গ্রাহকের মধ্যে মাত্র ১১ লাখ গ্রাহক প্রিপেইড মিটার পেয়েছে। যা মোট গ্রাহকের মাত্র ৩ শতাংশ। অথচ পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে সংস্থাটির অন্তত এক কোটি গ্রাহক প্রিপেইড মিটারের আওতায় আসার কথা ছিল। আর ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহে নিয়োজিত ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা সাড়ে ১৪ লাখ। তার মধ্যে মাত্র ৫ লাখ গ্রাহক স্মার্ট প্রিপেইড মিটার সেবার আওতায় এসেছে। ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহে নিয়োজিত আরেক কোম্পানি ঢাকা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) গ্রাহক সংখ্যা ১০ লাখ। তার মধ্যে ৩ লাখ ২১ হাজার গ্রাহক প্রিপেইড মিটার সেবা পাচ্ছে। তাছাড়া দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণে নিয়োজিত রয়েছে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো)। সংস্থাটির ১২ লাখ গ্রাহকের মধ্যে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ১ লাখ ৪৮ হাজার গ্রাহক স্মার্ট প্রিপেইড মিটার পেয়েছে। আর উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণে নিয়োজিত রয়েছে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো)। সংস্থাটির গ্রাহক সংখ্যা ১৭ লাখ। তার মধ্যে এখন পর্যন্ত ১ লাখ গ্রাহক প্রিপেইড/স্মার্ট প্রিপেইড সুবিধার আওতায় এসেছে।
এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রিপেইড মিটার বসাতে সরকারের পরিকল্পনায় নানামুখী সংকট তৈরি হয়। টেন্ডারের মাধ্যমে প্রিপেইড মিটার আমদানিতে দু-তিনটি বিতরণ কোম্পানির বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। পরবর্তী দেশে প্রিপেইড মিটার তৈরির কারখানা স্থাপন ও বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে মিটার আমদানির অনুমতি দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু মিটারের স্পেসিফিকেশন নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়াসহ নানা কারণে ওসব উদ্যোগ বিলম্বিত হয়। দেশে বিদ্যুতের প্রিপেইড/স্মার্ট প্রিপেইড মিটার তৈরিতে কাজ করছে বাংলাদেশ স্মার্ট ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড (বেসিকো)। ওজোপাডিকো ও চীনা কোম্পানি হেক্সিং ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড যৌথভাবে কোম্পানি গঠন করে এ কাজ করছে। তবে বেসিকো প্রিপেইড মিটার উৎপাদন ক্ষমতা কম হওয়ায় দেশীয় বিতরণ কোম্পানিগুলো বেসিকোর কাছ থেকে খুব বেশি সুবিধা নিতে পারছে না। বার্ষিক দেড় লাখ মিটার উৎপাদন ক্ষমতা থাকায় খুব বেশি সুযোগ কাজে লাগানো যাচ্ছে না। আর প্রিপেইড মিটার কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বে আছে বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি-গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেল। সংস্থাটির কর্মকর্তাদের মতে, বিদ্যুতের লাইফলাইন গ্রাহকদের (যারা ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করে) প্রিপেইড মিটার লাগবে না। এমন এক কোটি গ্রাহক আছে। বাকি ৩ কোটি গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।
অন্যদিকে বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার বিতরণ সংস্থার পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হলেও গ্রাহকের কাছ থেকে মূল্য কিস্তিতে আদায় করা হয়। সেজন্য গ্রাহককে প্রতি মাসে ৪০ টাকা পরিশোধ করতে হয়। তাছাড়া গ্রাহক চাইলে নিজেও মিটার কিনতে পারে। বেসরকারি ৩টি কোম্পানিকে খোলাবাজারে মিটার বিক্রির অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন জানান, প্রিপেইড মিটার কার্যক্রম পরিচালনায় প্রযুক্তিগত কাঠামো উন্নয়নে সময় লাগছে। শুরুতে মিটার স্থাপনে গতি কম দেখা গেছে। এখন সব বিতরণ কোম্পানি প্রিপেইড মিটারের প্রকল্প গ্রহণ করছে। বিতরণ কোম্পানিগুলোর নিজস্ব অর্থায়ন, বিদেশী দাতা সংস্থার অর্থায়নে ওই কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।