May 20, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, September 17th, 2023, 9:38 pm

বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে গ্যাসের বকেয়া বিল আদায়ে হিমশিম খাচ্ছে বিতরণ কোম্পানিগুলো

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

গ্যাসের বকেয়া বিল আদায়ে হিমশিম খাচ্ছে ৬টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। গ্যাসের বকেয়া বিলের পরিমাণ কমছেই না। এই তালিকায় রয়েছে সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান, রয়েছে সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রও। সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ভর্তুকির টাকা না পাওয়ায় নিয়মিত গ্যাস বিল পরিশোধ করতে পারছে না। একই অবস্থা বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রতেও। ফলে বিদ্যুৎ খাতেই আটকে গেছে তিন হাজার কোটি টাকার গ্যাস বিল। এমন অবস্থায় বিল পরিশোধ না করা আইপিপি (ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) কেন্দ্রগুলোকে গ্যাস সরবরাহ না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

বর্তমানে দেশে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ২৭টি। এই সংখ্যক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩ হাজার ৩৩৪ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে। এদের মধ্যে ১১টি আইপি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে যারা গ্যাস ব্যবহার করে। এই ১১ বিদ্যুৎকেন্দ্র ২ হাজার ৫৯৭ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন। এ ছাড়া এসআইপিডি রয়েছে আরো ৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি দেশে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।

আবার দেশের মধ্যে বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকেও গ্যাস কিনে সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করছে। কিন্তু বিল আদায় না হওয়ায় আমদানি করা তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম পরিশোধ করা পেট্রোবাংলার পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি এরইমধ্যে বেশ কয়েক বার জ্বালানি বিভাগকে জানানো হয়েছে। আইপিপি ও পিডিবির বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাছ থেকে বিল আদায়ের জন্য কমিটি গঠন করা হলেও তা আশানুরূপ কাজে আসেনি। গ্যাস বিল আদায়ের জন্য বার বার নোটিশ করার পরেও কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।জ্বালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদ্যুৎ খাতে পিডিবি এবং আইপিপি (ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) মিলিয়ে গ্যাস বিল বকেয়া পড়েছে দুই হাজার ৮৮৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এ ছাড়া বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) বিভিন্ন সার কারখানায় গ্যাস বিল বকেয়া পড়েছে ৮৯৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ দুই খাতেই ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানির বিল বকেয়া পড়েছে তিন হাজার ৭৮৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা। দেশে মোট ছয়টি কোম্পানি গ্যাস বিতরণ করে থাকে।

এরমধ্যে রয়েছে, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড এবং সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড।

সবচেয়ে বেশি গ্যাস বিল বকেয়া পড়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের। কোম্পানিটি পিডিবি’র কাছে বকেয়া রয়েছে ৬০৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা আর আইপিপিগুলোর কাছে এই বকেয়ার পরিমান ৩৯৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আইপিপি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে নির্দিষ্ট সময় বেধে চিঠি দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। সেই চিঠিতে বলা হয়, কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র বিল পরিশোধ না করলে তাদের লাইন কেটে দেওয়া হবে।

সূত্র জানায়, তিতাস নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করার কারণে আগের চেয়ে তিতাসের বকেয়া অনেক কমেছে। তবে বিদ্যুৎ খাতের বিষয়টা ভিন্ন রকম। এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যহত হতে পারে। তারপরও বড় বড় বকেয়া বিল আদায়ের ক্ষেত্রে সংযোগ বিচ্ছিন্নের মতোও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে থাকে।
সূত্র আরো জানায়, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা কিস্তিতে গ্যাস বিল পরিশোধের সুযোগ চেয়েছিলেন। তাদের সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভালো গ্রাহকদের এ সুযোগ দিয়েছিলো সরকার।

তবে সেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান এ সুযোগ পাবে, যারা করোনার আঘাত আসার আগে নিয়মিত গ্যাস বিল পরিশোধ করেছে। যারা আগে থেকেই বিল পরিশোধে অনিয়মিত বা বিল খেলাপি, তারা এ সুযোগ পাবে না। মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের মাসিক সমন্বয় সভায় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (টিজিটিডিসিএল) পক্ষ থেকে কিস্তিতে বিল পরিশোধের আবেদনের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। প্রস্তাবটির বিষয়ে সভায় যে আলোচনা হয়, তার ভিত্তিতে এবং তিতাসের বোর্ড সভায় অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভালো গ্রাহকদের কিস্তিতে গ্যাস বিল পরিশোধের সুযোগ দেয়া হতে পারে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর ২৬ মার্চ থেকে গত ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। তখন রপ্তানিমুখী শিল্প খাত, ওষুধ শিল্প ও খাদ্যপণ্য উৎপাদক প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য সব শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কার্যত বন্ধ ছিল। সেই সময় কোনো কোনো শিল্প-কারখানা চালু থাকলেও উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারেনি। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে গ্যাস বিল পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। এ ধরনের বেশকিছু প্রতিষ্ঠান গ্যাস বিল কিস্তিতে পরিশোধ করার সুযোগ চেয়ে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে।

গত মার্চ থেকে মে পর্যন্ত সময়ের গ্যাস বিল ছয় মাস থেকে ১২ মাসের কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ তারা চেয়েছে। গত ১০ জুন ডিজিটাল মাধ্যমে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের মাসিক সমন্বয় সভায় গ্রাহকদের আবেদনের বিষয়টি তুলে ধরেন তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এ-সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা গ্যাস বিপণন নিয়মাবলিতে না থাকায় বিষয়টি নিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

এদিকে এ প্রসঙ্গে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌ. মো. হারুনুর রশীদ মোল্লা জানান, বেশ কয়েক বছরের চেয়ে তিতাসের বকেয়া অনেক কমেছে। তিতাস নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে। তবে বিদ্যুৎ খাতের বিষয়টা ভিন্ন রকম। কারণ এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যহত হতে পারে। তারপরও বড় বড় বকেয়া বিল আদায়ের ক্ষেত্রে আমরা সংযোগ বিচ্ছিন্নের মতোও সিদ্ধান্তও নিয়ে থাকি। বোর্ড সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

অন্যদিকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি খাতে যে সংকট তৈরি হয়েছে তাতে গোটা বিশ্ব ভুগছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। বিদ্যুৎ খাতকে পর্যাপ্ত ভূর্তুকি দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে বকেয়া পরিশোধ করতে পারছে না। এ সংকট বেশিদিন থাকবে না।