নিজস্ব প্রতিবেদক :
করোনাভাইরাসের ভয়াবহ সংক্রমণ রোধে কঠোর বিধিনিষেধের ৯ম দিন শুক্রবার (৯ জুলাই) । কিন্তু দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের বিধিনিষেধ আরোপের শিথিলতায় রাজধানীতে এদিন যানবাহন ও মানুষের অবাধ চলাচল চোখে পড়ে। পুলিশ চেকপোস্ট কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো আইন প্রয়োগের কঠোরতার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারছিল না। আর জীবিকার তাগিদও মানুষকে অসহিষ্ণু করে বাইরে বের করে আনছে। এদিন সকাল ৯টা থেকে যাত্রাবাড়ীর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কয়েকটি চেকপয়েন্ট এবং আশেপাশের এলাকা ঘুরে এমন চিত্রের দেখা মিলেছে। যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুটি চেকপোস্ট গতকাল শুক্রবারও ছিল আগের দুদিনের মতো প্রায় নিষ্ক্রিয়। সড়কে চেকপোস্টগুলোতে দায়িত্ব পালনরত কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চেকপোস্টগুলোতে এখন কার্যক্রম যেমন দেখছেন সেভাবেই চলছে। এভাবে লকডাউন হয় না। অনেক অফিস খোলা। আমি যদি বাইরে আসা ৫০০ জনকে ধরি, প্রত্যেকের জবাব আছে এবং সবার জবাবই যৌক্তিক। সব বন্ধ না করে আসলে সেভাবে লকডাউন হয় না। আমরা কষ্ট করি, আপনারা (সাংবাদিক) কষ্ট করেন, কিন্তু এর ফল আমরা পাই না, পাচ্ছি না। শ্রমজীবী মানুষের খাবার সরকার নিশ্চিত করতে পারছে না, তাকে আপনি কোন যুক্তি দিয়ে ঘরে আটকে রাখবেন? সে বাইরে আসছে, আসবে। এতে তো লকডাউনের উদ্দেশ্যও ব্যাহত হয়, বলেন এক কর্মকর্তা। রায়েরবাগের পুনম সিনেমা হলের সামনের চেকপোস্টটিতে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গিয়ে শূন্য দেখা গেছে। পাশেই একটি টং ঘরে পাওয়া গেল ডেমরা ট্রাফিক জোনের সার্জেন্ট আশিকুর রহমানকে। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে বের হওয়ার মূল চেকপোস্টটি শনির আখড়ায়। আবার ঢাকায় প্রবেশের মূল চেকপোস্টটি সাইনবোর্ড এলাকায়। এর মাঝে যে চেকপোস্টগুলো থাকে সেগুলো খুব একটা কার্যকর থাকে না। কারণ গাড়িগুলো এই দুটি চেকপোস্টে ছেঁকে আসে। তাই মাঝের চেকপোস্টগুলোতে খুব বেশি কিছু করার নেই। এই মহাসড়ক ধরে বিপুল সংখ্যক প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, রিকশা, ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ডভ্যান চলাচল করতে দেখা গেছে। মাঝে মাঝে চোখে পড়ছে সিএনজি চালিত অটোরিকশাও। অনেককে ভ্যানে করে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। মানুষবোঝাই পিকআপ ভ্যানও এই মহাসড়ক ধরে চলতে দেখা গেছে। শনির আখড়ায় চেকপোস্টে কিছুটা কড়াকড়ি ছিল, তবে গাড়ির সংখ্যা ছিল বেশি। বিধিনিষেধের শুরুর দিকে মহাসড়কের পাশের দোকানপাট বন্ধ থাকলেও গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই সেগুলো খোলা দেখা যায়। রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি গলির মুখে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা রেখে সাইনবোর্ড যাওয়ার যাত্রী ডাকছিলেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, সাইনবোর্ড একজন ৩০ টাকা। মেইন রাস্তা ধইরা যাই না, এলাকার ভিতরে দিয়া যাই। ঝুঁকি নিয়া চোরের মতো চালাই, কোন সময় পুলিশে ধরে। না চালাইয়া কী করমু মামা, সংসার চালাইতে অইবো না? আমগো প্যাট কি লকডাউন মানে? ছুটির দিন হওয়ায় গতকাল শুক্রবার স্থানীয় বাজারগুলোও সরগরম ছিল। যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল, উত্তর রায়েরবাগ, বাগানবাড়ি, গোবিন্দপুর ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তা ও বাজারগুলোতে দেখা যায় প্রচুর মানুষের ভিড়। বেশিরভাগের মুখেই মাস্ক ছিল না। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিকেলের দিকে পুলিশের কিছু তৎপরতা দেখা যায়। এ ছাড়া সারাদিন নির্বিঘেœই লোকজন চলাচল করে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় গত ১ জুলাই সকাল ৬টা থেকে শুরু হয় সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধ। এই বিধিনিষেধ ছিল ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত। পরে বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও ৭ দিন অর্থাৎ ১৪ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে ২১টি শর্ত দেয়া হয়। শর্ত অনুযায়ী, এ সময়ে জরুরি সেবা দেয়া দপ্তর-সংস্থা ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অফিস, যন্ত্রচালিত যানবাহন, শপিংমল দোকানপাট বন্ধ থাকবে। খোলা থাকবে শিল্প-কারখানা। জনসমাবেশ হয় এমন কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না এই সময়ে।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম