নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের দুই উপকূলীয় বিভাগ চট্টগ্রাম ও বরিশালের মধ্যে নিরাপদ নৌযোগাযোগ নিশ্চিত করতে পারেনি রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিআইডব্লিউটিসি। বরং ওই রুটে দীর্ঘ ১১ বছর নৌপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। অথচ বিগত ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান শিপিং করপোরেশন পশ্চিম জার্মানি থেকে সংগ্রহ করা ৪টি উপকূলীয় যাত্রীবাহী নৌযানের সাহায্যে চট্টগ্রাম-নারায়ণগঞ্জ-বরিশাল-চট্টগ্রাম ও বরিশাল-হাতিয়া-সন্দীপ-চট্টগ্রাম রুটে উপকূলীয় স্টিমার সার্ভিস চালু করেছিল। যদিও বর্তমান সরকার শতাধিক কোটি টাকায় ৩টি নৌযান সংগ্রহ ও ২টি নৌযান পুনর্বাসন করেছে, তবুও বিআইডব্লিউটিসি চট্টগ্রাম-বরিশাল নৌরুটে নিরাপদে নৌযোগাযোগ সচল করার উদ্যোগ নেয়নি। বিআইডব্লিউটিসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিআইডব্লিউটিসি গত দুই দশক ধরেই বরিশাল-চট্টগ্রাম নৌরুটের কথা বলে নৌযান সংগ্রহ ও পুনর্বাসনে সরকারের কাছ থেকে কয়েক দফায় বিপুল অর্থ গ্রহণ করেছে। কিন্তু সংস্থাটি এখনো ওই নৌ-রুটে নিরাপদ নৌযোগাযোগ নিশ্চিত করতে পারেনি। এমন পরিস্থিতিতে এখন সম্পূর্ণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বরিশাল থেকে ভোলা-হাতিয়া-সন্দ্বীপ হয়ে চট্টগ্রামের নিরাপদ নৌ যোগাযোগের ভবিষ্যত। অতিসম্প্রতি ঢাকা-চাঁদপুর-বরিশাল রুটে রকেট স্টিমার সার্ভিসটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম পৌঁছতে সময় লাগছে ২৪ ঘণ্টারও বেশি। এমনকি দক্ষিণাঞ্চল থেকে নৌপথে চাঁদপুর হয়ে রেলপথে চট্টগ্রাম পৌঁছার বিকল্প পথটিও বন্ধ হয়ে গেছে। আর তাতে দক্ষিণাঞ্চল থেকে চট্টগ্রামগামী সাধারণ যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
সূত্র জানায়, প্রায় ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সর্বশেষ বরিশাল-ভোলা-হাতিয়া-সন্দ্বীপ-চট্টগ্রাম নৌ-রুটের জন্য দুটি উপকূলীয় যাত্রীবাহী নৌযান সংগ্রহের পর গতবছরের ডিসেম্বরে পরীক্ষামূলক পরিচালন সম্পন্ন হয়। তবে নানামুখী প্রতিবন্ধকতার কথা বলে বিআইডব্লিউটিসি একবছরেও তার বাণিজ্যিক পরিচালন শুরু করতে পারেনি। বরং ওই নৌযান দুটি বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটের পরিবর্তে চট্টগ্রাম-হাতিয়া এবং কুমিরা-গুপ্তছড়া রুটে চলাচল করছে। বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটের কথা বলে চীনা সাপ্লায়ার্স ক্রেডিটে ২০০২ সালে প্রায় ৩৩ কোটি টাকায় একটি নতুন নৌযান সংগ্রহের পাশাপাশি ২০০৯ সালে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি উপকূলীয় নৌযান পুনর্বাসন করা হয়। তাছাড়া একটি নৌযানে গত ২০ বছরে পুনর্বাসন ও নতুন ইঞ্জিন সংযোজনে আরো প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। ওসব কিছুর বাইরেও বিশ্ব ব্যাংকের সুপারিশে দেশের উপকূলভাগে নিরাপদ যাত্রী পরিবহনকে সরকার ‘গণ দায়বদ্ধ সেবাখাত’ হিসেবে ঘোষণা করে প্রতিবছর বিআইডব্লিউটিসিকে নগদ ভর্তুকি প্রদান করে আসছে। কিন্তু এতোকিছুর পরেও ২০১১ সালের মে মাস থেকে দেশের উপকূলীয় দুটি বিভাগীয় সদরের মধ্যে নিরাপদ নৌ-যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, বিগত ২০১১ সালের মধ্যভাগ থেকে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূলীয় স্টিমার সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায়। আর ২০০২ সালে সংগ্রহ করা নৌযান এমভি বার আউলিয়ায় কয়েক বছরের মধ্যেই কারিগরি ও যান্ত্রিক ত্রুটি শুরু হয়। ইতোমধ্যে নৌযানটিতে দুই দফায় ভারি মেরামত ও পুনর্বাসন শেষ করা হয়। আর গতবছর মূল ইঞ্জিন পরিবর্তনের পরে যাত্রী পরিবহনে নৌযানটি ফিরলেও বরিশালের পরিবর্তে অন্য রুটে যাত্রী পরিবহন শুরু করে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (বাণিজ্য) আশিকুজ্জামান জানান, বিগত ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বরিশাল-চট্টগ্রাম নৌপথে পরীক্ষামূলক নৌযান পরিচালনের পরে নৌপথের নাব্যতা উন্নয়নের অনুরোধ জানানো হয়। নৌপথে নাব্যতা সংকট থাকায় উপকূলীয় নৌযানগুলো ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা অতিক্রম করতে জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। তাতে যাত্রীবাহী নৌযানগুলোকে বরিশাল বা চট্টগ্রামে পৌঁছতে দীর্ঘসময় নদীতে নোঙরে থাকতে হবে। ওইকারণেই উপকূলীয় যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিস চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। ঝুঁকিপূর্ণ নৌপথ এলাকায় ড্রেজিং সম্পন্ন করে পুরো নৌপথটিকে ন্যূনতম ১৫ ফুট গভীরতার নৌযান চলাচলের উপযোগী করার সুপারিশ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি