March 19, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, October 5th, 2022, 9:32 pm

বিভিন্ন দেশে আলু রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনা বাড়ছে

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে আলু রফতানির সম্ভাবনার দুয়ার খুলে গেছে। দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আসার একেবারে সহজ রাস্তা হচ্ছে বাড়তি আলু রফতানি। দেশে বছরের মোট চাহিদার বিপরীতে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই রহস্যজনক কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে আলু রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়। এখন মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও মধ্যপ্রাচ্যের পর সম্প্রতি রাশিয়ায় আলু রফতানির দরজা উন্মুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশের আলু রফতানির বড় বাজার হচ্ছে রাশিয়া। তার বাইরে উত্তরপূর্ব ভারতের সেভেন সিস্টারসহ সিকিম, ভুটান এবং নেপালেও আলু রফতানির উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। আলু রফতানিকারক এবং কৃষি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আলু উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে বর্তমানে সপ্তম। কিন্তু উৎপাদনের তুলনায় রফতানির পরিমাণ একেবারেই হতাশাজনক। দেশে বর্তমানে গোল আলুর বার্ষিক চাহিদা ৬৫ লাখ মেট্রিন টন। কিন্তু বিগত ২০১৮ থেকে গত বছর পর্যন্ত টানা ৪ বছরে দেশে গড়ে ১ কোটি টনেরও বেশি আলু উৎপাদন হয়েছে। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় প্রতি বছর ৩০ থেকে ৩৫ লাখ মেট্রিক টন বেশি আলু উৎপাদন হচ্ছে। তার মধ্যে গত বছরই বিভিন্ন দেশে সর্বোচ্চ ৫২ হাজার মেট্রিক টন আলু রফতানি হয়েছে। আর চলতি বছরের জুন পর্যন্ত রফতানি হয়েছে ৩০ হাজার মেট্রিক টন। বছরের শেষ নাগাদ হয়তো ওই পরিমাণ ৫৫ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে বিগত ১৯৯৮ সাল থেকেই সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কায় সীমিত পরিমাণে আলু রফতানি শুরু হয়। পরে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশেও আলু রফতানি করা শুরু হয়। ১৯৯৯ সালে আলু রফতানির পরিমাণ ছিল মাত্র ১২৬ মেট্রিক টন। পরবর্তীতে ২০০৫ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত ক্রমাগতভাবে রফতানির পরিমাণ বেড়ে ৮ হাজার মেট্রিক টন হয়। ২০১১ সালে ৭টি দেশিয় কোম্পানি ২০ হাজার মেট্রিক টন আলু রফতানি করে। টাকার অংকে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ১৭২ কোটি টাকার আলু রফতানি হয়েছে। তার মধ্যে শুধুমাত্র রাশিয়ায় ৭২ কোটি টাকার আলু রফতানি হয়। কিন্তু ভাইরাস পাওয়ার অজুহাতে রাশিয়ায় আলু রফতানি বন্ধ হয়ে যায়। মূলত রাশিয়ায় রফতানি উপযোগি আলু রিপ্যাকিং করার সময় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আলুতে ভাইরাস সংক্রমিত হয়। অনেকের ধারণা সেটি সম্ভবত পরিকল্পিত স্যাবোটেজ। পরবর্তীতে রাশিয়ায় আলু রফতানির ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আর কোনো উদ্যোগ ছিল না। আলু রফতানি নিয়ে এমন নিষ্ক্রিয়তাকে অনেকেই রহস্যজনক মনে করছে। কারণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আলু রফতানি বাড়তে শুরু করায় ভারত ও পকিস্তান বাংলাদেশকে সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে শুরু করেছে। বিশেষ করে ভারত আলু রফতানিকারক ও আলুচাষিদের জন্য প্রতি বছর নতুন নতুন প্যাকেজ সুবিধা বাড়িয়েই চলেছে। আর বাংলাদেশে আলু রফতানি খাতের বিষয়টি সরকারি পর্যায়ে যথেষ্ঠ অবহেলা করা হচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশের আলু আমদানির ওপর রাশিয়া ২০১৫ সালে দেয়া নিষেধাজ্ঞা ৭ বছর পর তুলে নিয়েছে। ফলে এখন থেকে রাশিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশগুলোতে লাখ লাখ টন আলু রফতানির সম্ভাবনার দুয়ার খুলে গেছে। রাশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্য ছাড়াও ভারতের সেভেন সিস্টার, নেপাল, ভুটান ও সিকিমে কোল্ড ষ্টোরেজে রাখা আলুর চাহিদা রয়েছে। তবে উদ্যোগের অভাবে সেখানে আলু পাঠানো যায় না। ট্রানজিট জটিলতার কারণে নেপাল ও ভুটানে আলু পাঠানোর বিশেষ জটিলতা থাকলেও সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ভারক সফরের সময় তা দূর হয়েছে। তাতে নেপালে আলুসহ সবজি রফতানির নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে রফতানি উপযোগি আলুবীজ সংগ্রহ, আমদানি, উৎপাদন বৃদ্ধি করে চাষিদের মধ্যে কম অথবা বিনামূল্যে সরবরাহ করলে রফতানিযোগ্য উন্নত প্রযুক্তির আলু উৎপাদনে চাষীরা উৎসাহী হবে। তাছাড়াও উন্নত প্রযুক্তির হিমাগার নির্মাণ এবং হিমাগারে সোলার প্যানেল ব্যবহার করা হলে তা সাশ্রয়ী মূল্যে সরবরাহের ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন। কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে বর্তমানে দেশে হিমাগারের সংখ্যা ৩২৫টি। তাতে সংরক্ষণ ক্ষমতা মাত্র ২০ থেকে ২২ লাখ মেট্রিক টন। তার বাইরে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ আলু নষ্ট হচ্ছে।
এদিকে কৃষি গবেষকদের মতে, দেশে আলু চাষ ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটলে বর্তমানে যে পরিমাণ জমিতে আলু উৎপাদন হয় তা দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া মালয়েশিয়ার চাহিদা ১০ লাখ টন, থাইল্যান্ডে ৩ লাখ টন এবং রাশিয়া ও তার ইউরোপিয়ান মিত্র, মধ্যপ্রাচ্য, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কাসহ অন্যান্য দেশগুলোতে আলু রফতানি পুরোদমে চালু হলে দেশে রিজার্ভ সঙ্কট দূর হবে। তাতে শক্তিশালী হবে কৃষি অর্থনীতি। বদলে যাবে আলুচাষিদের ভাগ্যও। আলু রফতানি বাড়াতে চাইলে কাঁচা আলু রফতানিকারকদের শতকরা ৩০ শতাংশ হারে ইনসেনটিভ বোনাস দেয়া প্রয়োজন। তাছাড়া আলু উৎপাদনের কেন্দ্রীয় জেলাগুলোতে কৃষি কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে চুক্তি ভিত্তিক আলু চাষিদের দিয়ে উন্নত প্রযুক্তির আলু উৎপাদন করলেও ভালো ফল পাওয়া যাবে।