নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) দেশব্যাপী বিমানবন্দরগুলোতে উন্নয়ন এবং নিরাপত্তা ফি বাড়ানোর পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে, যা ১ জানুয়ারি ২০২৪ থেকে কার্যকর হবে। এটি কার্যকর হলে আকাশভ্রমণে বাড়তি টাকা গুনতে হবে যাত্রীদের। জানা গেছে, ডলারের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেবিচক। বেসরকারি একাধিক উড়োজাহাজ সংস্থার কর্মকর্তা বলেন, বিমানবন্দরের ফি বাড়লে যাত্রীদের টিকিটের দামও বাড়াতে হবে। অর্থাৎ যাত্রীদের ভ্রমণ খরচ বাড়বে।
আকাশপথে যাতায়াত ভাড়া বৃদ্ধির চড়া খেসারত দিতে হবে অভিবাসী শ্রমিকদের। কারন দেশের বিমানযাত্রীর বেশীর ভাগই অভিবাসী শ্রমিক। চলতি অর্থবছরের (২০২২-২০২৩) জুন পর্যন্ত মোট ১০ লাখ ৭৪ হাজার শ্রমিক কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে গেছেন। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের একই সময়ে (২০২১-২২) মোট ৯ লাখ ৭ হাজার কর্মী বিদেশে যান
। ট্রাভেল এজেন্সির একজন স্বত্বাধিকারী বলেন, ফি বৃদ্ধি করলে সেটা তো এজেন্সিরা বহন করবে না। পুরো টাকাই যাত্রীদের কাজ থেকে নেয়া হবে। এতে ভ্রমণ যাত্রী অনেক কমে যাবে। আমাদের ব্যবসার ক্ষতি হবে। বেবিচক-এর সদস্য (অর্থ) মো. আজিজ তাহের খান বলেন, “আমরা ক্রমবর্ধমান ডলারের বিনিময় হারের আলোকে আমাদের বিমানবন্দরের উন্নয়ন ও নিরাপত্তা ফি সমন্বয় করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের প্রস্তাবটি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে এবং মন্ত্রণালয় বিষয়টি চূড়ান্ত করবে।” যাত্রী ও মালবাহী ভাড়া ডলারের পরিবর্তে টাকা নির্ধারণের সিদ্ধান্তও কার্যকর হবে আগামী জানুয়ারি থেকে।
সূত্র অনুসারে, ১৩% হারে ভবিষ্যতের মুদ্রাস্ফীতি মোকাবেলা করার লক্ষ্যে গত মাসে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বোর্ডের সভায় বিমানবন্দর উন্নয়ন এবং যাত্রী নিরাপত্তা ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। মার্কিন ডলারের দাম টাকার বিপরীতে বেড়ে যাওয়ায় বেবিচক-এর লোকসান কমাতে বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রকের নির্দেশ অনুসারে এটি করা হয়েছিল। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ মনিটরের সম্পাদক, কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেছেন যে সময়ে সময়ে বিমানবন্দরের ফি পর্যালোচনা করা বেবিচক-এর জন্য একটি রুটিন কাজ। এই পদক্ষেপের ফলে বিমান টিকিটের দাম বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বর্তমানে সার্কভুক্ত দেশগুলোর যাত্রীরা বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি হিসেবে ৫৪৫ টাকা এবং আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রী নিরাপত্তা ফি হিসেবে ৬৫৪ টাকা প্রদান করে। এছাড়াও, সার্ক অঞ্চলের বাইরের দেশগুলির যাত্রীদের জন্য প্রস্তাবিত ফি বিমানবন্দর উন্নয়নের জন্য ১,০৯০ টাকা এবং যাত্রী নিরাপত্তার জন্য ১,০৯০ টাকা। অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রীদের জন্য, প্রস্তাবিত ফি বিমানবন্দর উন্নয়নের জন্য ১০০ টাকা এবং যাত্রী নিরাপত্তার জন্য ৭০ টাকা।
মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সিএএবি প্রস্তাব অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক রুটে সার্কভুক্ত দেশগুলোর যাত্রীদের জন্য বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি ৭০০ টাকা এবং যাত্রী নিরাপত্তা ফি ৮৪০ টাকা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সার্ক বহির্ভূত দেশগুলির যাত্রীদের জন্য, বিমানবন্দর উন্নয়ন এবং যাত্রী নিরাপত্তা উভয়ের জন্য প্রস্তাবিত ফি ১,৪০০ টাকা। অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রীদের জন্য বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি ১৫০ টাকা এবং যাত্রী নিরাপত্তা ফি ১০০ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। বেবিচক ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত একটি সময়সূচী নির্ধারণ করে এই প্রস্তাবটি রেখেছে।
বাংলাদেশের বিমানবন্দর ব্যবহারকারী যাত্রীদের আন্তর্জাতিক রুটে যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিমানবন্দর উন্নয়ন ও নিরাপত্তা ফি মার্কিন ডলারে আদায় করা হচ্ছে। দুটি ক্ষেত্রে মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় সমন্বয় আনতে মন্ত্রণালয় থেকে ফি দুটি বিদ্যমান মার্কিন ডলারের পরিবর্তে বাংলাদেশি টাকায় নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়। সে অনুযায়ী প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি