November 5, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, April 2nd, 2024, 9:25 pm

বিমানবন্দরে কালোবাজারি চক্রের ডলার পাচার থামানো যাচ্ছে না !

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতিদিন শত শত কোটি মূল্যের ডলার পাচার করছে শক্তিশালী কালোবাজারি চক্র। দেশে ফেরা প্রবাসী শ্রমিকদের কাছে থাকা বৈদেশিক মুদ্রা অবৈধভাবে সংগ্রহ করে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করছে একটি চক্র। এ কারণে বাংলাদেশে ডলার, ইউরোসহ বিদেশি মুদ্রার সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। কিছু ব্যাংকার ও অসাধু চক্র লাভবান হওয়ার জন্য বেআইনিভাবে দীর্ঘদিন ধরে ডলার কারসাজি ও পাচার করে আসছে। ফলে প্রবাসী বা বিদেশিদের বিক্রি করা ডলার দেশের ব্যাংকিং চ্যানেলে আসছে না।

সাধারণত বিমানবন্দরে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব অর্থে বৈদেশিক মুদ্রা কেনার কথা। কিন্তু ব্যাংক কর্মকর্তারা নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকের টাকা দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা না কিনে তাদের ব্যক্তিগত অর্থ দিয়ে তা কিনছেন। পরে এসব ডলার বিদেশে যাওয়া ব্যক্তিদের কাছে চড়া দামে বিক্রি কিংবা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করে নিজেরা লাভবান হচ্ছেন। দুদক সূত্রে জানা যায়, সাধারণত প্রতিদিন হাজার হাজার প্রবাসী এবং বিদেশি ভ্রমণকারী বিমানবন্দর হয়ে বাংলাদেশে আসেন। তারা তাদের সঙ্গে আনা বিদেশি মুদ্রা বিমানবন্দরে থাকা ব্যাংকের বুথ ও মানি এক্সচেঞ্জারে দেশীয় মুদ্রা বা বাংলাদেশি টাকায় এনকেশমেন্ট করে থাকেন।

আইন, বিধি অনুযায়ী ফরেন কারেন্সি এনকেশমেন্ট ভাউচার এনকেশমেন্টকারীকে দিতে হয়। কিন্তু ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জাররা ভাউচার না দিয়ে বা জাল ভাউচার দিয়ে সরাসরি কিনে নেন। তার বিনিময়ে টাকা দিয়ে দেয়। এছাড়াও তারা স্বাক্ষরবিহীন, ভুয়া ভাউচার বা এনকেশমেন্ট স্লিপ প্রদান করে। এই বিদেশি মুদ্রার ক্রয়কারী ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের মূল হিসাবে বা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত অ্যাকাউন্টে অন্তর্ভুক্ত করেন না। ফলে বিদেশি মুদ্রার কেন্দ্রীয় রিজার্ভে যুক্ত হয় না। এ কারণে দেশে বিদেশি মুদ্রার ঘাটতি বা সংকটের সৃষ্টি হয়।

দুদকের অভিযানে বিমানবন্দরে অবৈধভাবে বিদেশি মুদ্রায় ক্রয়-বিক্রয় ও মানি লন্ডারিংয়ে জনতা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক এবং এভিয়া মানি এক্সচেঞ্জার ও ইম্পিরিয়াল মানি এক্সচেঞ্জার জড়িত থাকার বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। বিমানবন্দরে থাকা উল্লিখিত সাত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া ভাউচার দিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশি ও বিদেশি লোকজনের কাছ থেকে ডলারসহ বিদেশি মুদ্রা কিনে তা কালোবাজারিদের মাধ্যমে পাচার করেন। বিদেশি মুদ্রা কেনার পর সেই মুদ্রা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে যুক্ত করার কথা থাকলেও সেটা করা হয় না।

বরং, এ সংক্রান্ত কোনো প্রকার তথ্য না দিয়ে মানিল্ডারিং করে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করছে। এ খাত থেকে চক্রটি প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ৩ কোটি টাকা আয় হয়ে থাকে। এ কারণে মাসে ৫০ কোটি টাকার বেশি অর্থ সরকারি কোষাগারে যাচ্ছে না। শুধু তাই নয়, এ চক্রের কারণে প্রবাসীদের কাছ থেকেও ক্রয়কৃত ডলার বা বিদেশি মুদ্রা সরকারের খাতায় যোগ হচ্ছে না। বহু বছর ধরে তারা এই কাজ করে আসছে। অথচ এতদিন তারা ছিল ধোরাছোয়ার বাইরে।

একাধিক সংস্থা জানায়, ডলার কারসাজি ও জাল-জালিয়াতির ভাগ তারা একা পায়নি। এর সাথে অনেকে জড়িত। যারা এর নেপথ্যে রয়েছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা না গেলে ডলার বা বৈদেশিক মুদ্রা পাচার বন্ধ হবে না। দেশের আর্থিক খাতে সন্দেহজনক লেনদেন ও সন্দেহজনক কার্যক্রম গত এক বছরে ‘উল্লেখযোগ্য হারে’ বেড়েছে বলে উঠে এসেছে বিএফআইইউ এর এক প্রতিবেদনে। নানামুখী উদ্যোগের পরও বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থপাচারের পরিমাণ বাড়ছে। বিদেশি সংবাদ মাধ্যমেও প্রায়ই বাংলাদেশিদের বিনিয়োগে নিয়ে খবর প্রচার হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে বিনিয়োগ করতে অনুমতি নিতে হয় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। কিন্তু যে পরিমাণ অনুমোদন নেওয়া হয়েছে, তার চেয়ে অনেকগুন বেশি বিনিয়োগের তথ্য আসছে গণমাধ্যমে।

বিএফআইইউ এর তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে এসটিআর রিপোর্টিং হয়েছে ১৪ হাজার ১০৬টি। আগের অর্থবছরের চেয়ে বেড়েছে ৬৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ বা ৫ হাজার ৫৩৫টি। ২০২১-২২ অর্থবছরে যা ছিল ৮ হাজার ৫৭১টি। দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন জানান, অবৈধভাবে ডলার ক্রয়-বিক্রয়ের কারণে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। অবৈধ এসব অর্থ দেশের বাইরে পাচারও হতে পারে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বৈদেশিক অর্থের প্রবাহ স্বাভাবিক রাখা, রিজার্ভ বৃদ্ধি এবং ব্যাংক ও আর্থিক খাতকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সরকার নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিন্তু বিমানবন্দরের এ রকম অসাধু চক্রের কারণে এসব উদ্যোগ নানাভাবে ব্যাহত হচ্ছে।