November 18, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, November 2nd, 2023, 3:38 pm

বিয়ানীবাজারের আবহাওয়ায় শীতের বার্তা, বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগ

জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ন্যায় বিয়ানীবাজারের প্রকৃতিতে এখন শীতের আমেজ। দিনভর গরম থাকলেও বিকাল থেকে সকাল পর্যন্ত হালকা কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে প্রকৃতি। ক্রমেই পরিবর্তন হচ্ছে আবহাওয়া। এ পরিবর্তের সঙ্গে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছেন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে ঠান্ডাজনিত রোগী আসছে। গত কয়েক দিনে শিশু ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেশ বেড়েছে। বিশেষ করে নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, হাঁপানি, সর্দি-জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে হাসপাতালে আসছেন অভিভাবকরা।

তারা বলছেন, ঋতু পরিবর্তনের এ সময়ে শুধু বহির্বিভাগেই নয়, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ১০০ রোগী হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসছেন, যা গত দুই সপ্তাহ আগেও ছিল অর্ধেক। তবে বাড়তি সতর্কতা ও সচেতনতায় এসব মৌসুমি রোগ প্রতিরোধ সম্ভব বলেও মনে করেন চিকিৎসকরা।

বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে রোগী ও স্বজনদের উপচে পড়া ভিড়। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি রোগী ভর্তি। রোগী ও স্বজনদের ভিড়ে পা ফেলার জায়গা নেই। ডাক্তারের রুমের সামনেও দীর্ঘ লাইন। রোগীদের অনেকেই ডেঙ্গু জ্বর, কাশি, গায়ে ব্যথা, শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা নিয়ে এসেছেন। সকাল থেকে রোগীর চাপ কম হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে।

একাধিক রোগী ও স্বজনরা জানান, কম খরচে ভালো চিকিৎসা নিতে এসে বিড়ম্বনায় পড়ছেন বেশিরভাগ মানুষ। অনেকে বসার জায়গা না পেয়ে ক্লান্তি নিয়ে বসে আছন ঠান্ডা মেঝেতেই। বেশিরভাগ রোগী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে গেলেও অনেকের শ্বাসকষ্ট হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। তাদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।

বিয়ানীবাজার হাসপাতালের বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, টিকেট হাতে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন অন্তত ৪০ জন রোগী। যাদের বেশিরভাগই ঠান্ডা, সর্দি-জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে এসেছেন।

বহির্বিভাগে দেড় বছরের তামান্নাকে নিয়ে এসেছেন মা শাহনারা বেগম। তিনি বলেন, আমার বাচ্চা দুদিন ধরে সর্দি-জ্বর সমস্যায় ভুগছে। কিছুতেই জ্বর কমছে না। যখন প্রচণ্ড জ্বর আসে, তখন ওষুধেও কাজ হয় না। অস্থির ভাব থাকে। তাই ডাক্তারের কাছে এসেছি।

বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা: শাহরিয়ার রহমান শুভ বলেন, আমাদের এখানে প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন রোগী আসছে চিকিৎসার জন্য। শীতের শুরুতে এ ধরনের রোগী প্রতিবার বাড়ে। সামনে শীত বাড়লে রোগীর সংখ্যাও অনেক বেড়ে যাবে।

হাসপাতালটির জরুরী বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, বেশিরভাগ শিশুই ঠান্ডাজনিত রোগ নিয়ে এসেছে।

সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী রেজিষ্ট্রার ডা: আবু ইসহাক আজাদ বলেন, বেশিরভাগ শিশুর তীব্র জ্বর, সঙ্গে ঠান্ডা, পরে কাশি শুরু হচ্ছে। যেহেতু জ্বরগুলো ভাইরাসজনিত তাই খুব দ্রুতই বেড়ে যায়। এক-দুদিনের মধ্যেই জ্বর ১০২, ১০৩ বা তার বেশি উঠে যায়।

তিনি বলেন, শিশুদের ক্ষেত্রে এ সময়ে সাবধানতা খুব বেশি প্রয়োজন। কারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় অল্পেই অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে শিশুরা। এ জন্য ধুলাবালিযুক্ত জায়গায় যাওয়া যাবে না। কাপড়গুলো আরামদায়ক হতে হবে। ঠান্ডা যেন না লাগে সেদিকে নজর রাখতে হবে। একই সঙ্গে গরমে যেন শিশু ঘেমে না যায়। পুষ্টিকর খাবার বেশি করে খাওয়াতে হবে। এর সঙ্গে পানি খাওয়াতে হবে। যারা বুকের দুধ খায় তাদের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।

মৌসুমজনিত রোগ-বালাই এড়িতে চলতে সতর্কতার পরামর্শ দিয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: মনিরুল হক খান বলেন, ঋতু বা আবহাওয়া পরিবর্তন এবং ভ্যাপসা গরমসহ নানা কারণে ঠান্ডা-জ্বর, নিউমোনিয়া এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ হচ্ছে। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষ, শিশু এবং যারা দীর্ঘদিন রোগে ভুগছেন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বা দুর্বল তারা এ সময়ে বেশি অসুখে ভোগে। বাতাসের সঙ্গে অক্সিজেন শ্বাসনালির মাধ্যমে ফুসফুসে পৌঁছায়। এ বাতাসের সঙ্গে রোগজীবাণু, ধুলাবালি ঢুকে ফুসফুসের শ্বাসনালিকে সংক্রমণ করে। বিশেষ করে শীতের সময় এ রোগ বেশি হয়। তখন ফুসফুসের শ্বাসনালিতে আর্দ্রতা কমে যায়। এতে ফুসফুসে ইনফেকশন, নিউমোনিয়া, ব্রংকিউলাইটিস, অ্যাজমা, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট বাড়ে। আর এ রোগ হওয়ার জন্য আমরাই পরিবেশ তৈরি করে দিচ্ছি। কারণ আমরা কেউ সচেতন না।

তিনি বলেন, এ সময়ে আমাদের বেশি করে পানি পান করতে হবে। তা হলে আমাদের শ্বাসনালিতে আর্দ্রতা কমবে না এবং রোগজীবাণুগুলো শরীর থেকে বের হয়ে যাবে। আরেকটি হলো এ সময়ে আমাদের তাজা ফলমূল খেতে হবে। এ ছাড়া প্রতিদিন অন্তত আধাঘণ্টা কায়িক শ্রম দিতে হবে।