জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
সময়মতো কাজের দরপত্র আহ্বান না করা, দরপত্রে জিনিসের দাম এক, আর বাজারে আরেক, সময়মতো বরাদ্দ না আসা ও ঠিকাদারের অবহেলার কারণে পড়ে আছে বিয়ানীবাজারের বেশির ভাগ গ্রামীণ রাস্তার উন্নয়নকাজ। আর এতে করে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীর। বিশেষ করে স্কুলপড়ুয়া ছাত্রছাত্রী, রোগী ও বয়স্ক ব্যক্তিরা বিপাকে পড়েছেন বেশি।
উপজেলার প্রায় সবক’টি গ্রামীন রাস্তার অবস্থা শোচনীয়। পৌর এলাকার রাস্তাগুলোর অবস্থা আরো খারাপ। কবে এখানকার ভাঙ্গাচুরা রাস্তাগুলো সংস্কার হবে, তা কারো জানা নেই। স্থানীয় সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদের কাছেও সাধারণ মানুষের রাস্তা সংস্কারের দাবী বেশী। তিনি এলাকায় আসলে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি এবং সাধারণ মানুষও রাস্তা তৈরী এবং সংস্কারের দাবী তুলে ধরেন।
বিয়ানীবাজার এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় কাঁচাপাকা মিলে সর্বমোট রাস্তার পরিমাণ ৬২৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে ২১০ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে পাকা। দীর্ঘদিন থেকে সংস্কারকাজ না হওয়ায় পাকা রাস্তাগুলো খানাখন্দে ভরে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এসব গর্ত ও ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে যাতায়াত অনেকটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এ ছাড়া উপজেলার বেশির ভাগ কাঁচা রাস্তাগুলো গ্রামীন জনপদের মানুষের দূর্ভোগের প্রধান কারণ।
এদিকে উপজেলার ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার রাস্তার পাকাকরণ কাজ চলমান রয়েছে। পাশাপাশি মেরামতের জন্য রয়েছে ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার রাস্তা। এ ছাড়া কাঁচাপাকা মিলে রয়েছে আরও ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার রাস্তার কাজ।
গোবিন্দশ্রী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হোসেন বলেন, ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় উপজেলার ৪০ কিলোমিটার রাস্তার মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে উপজেলা অফিস সূত্রে জানা যায়। আর এসব রাস্তার তালিকা পাঠানো হলেও এখনো পর্যন্ত বরাদ্দ আসেনি। ফলে বেশির ভাগ রাস্তা বন্যা-পরবর্তী চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়ায় এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করে নেন।
বিয়ানীবাজার পৌরশহরের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য উপজেলার গ্রামীণ রাস্তাগুলোর সবই খানাখন্দে ভরা। কসবা ত্রিমুখি বাজার রাস্তা,শ্রীধরা রাস্তা, বড়দেশ ঘুঙ্গাদিয়া রাস্তা, নবাং রাস্তা, মুল্লাপুর-গোডাউন বাজার-কালিবাড়ি বাজার রাস্তা, বৈরাগী বাজার ত্রিমুখি থেকে ফাঁড়ির বাজার রাস্তা, শেওলা পল্লী বিদ্যুৎ রাস্তা, শারোপার বাজার রাস্তা, দেউলগ্রাম-চারখাই রাস্তা, মাথিউরা-ঈদগাহ রাস্তা, পিরেরচক-বিবিরাই বাজার রাস্তা, মাটিজুরা রাস্তা, নয়াদুবাগ রাস্তাসহ সবগুলো গ্রামীন সড়কের অবস্থা ভয়াবহ। এসব সড়ক দিয়ে রিক্সা, টমটম, সিএনজি অটোরিক্সা নিয়ে সাধারণত কোন চালক যেতে চায়না। আর ভাঙ্গা সড়কের দোহাই দিয়ে অনেক দুষ্টু চালক অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন।
কুড়ারবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তুতিউর রহমান জানান, তার ইউনিয়নে গত বন্যায় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার রাস্তাঘাটের ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু সেগুলো মেরামত করতে তিনি পেয়েছেন মাত্র ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। জনগণ তাকে বারবার তাগিদ দিচ্ছে রাস্তাঘাট সংস্কারের জন্য, কিন্তু বরাদ্দ না থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের প্রায় একই অবস্থা।
উপজেলার গ্রামীণ রাস্তার উন্নয়নের ব্যাপারে বিয়ানীবাজার এলজিইডি প্রকৌশলী সাইফুল আজম বলেন, রাস্তার উন্নয়নকাজ চলমান প্রক্রিয়া। ক্রমান্বয়ে সবগুলো রাস্তাই সংস্কার করা হবে।
বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফসানা তাসলিম বলেন, জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন সভায় রাস্তার উন্নয়ন নিয়ে কথা হয়। সে অনুযায়ী তালিকা করে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ এলে কাজ শুরু হবে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি