জেলা প্রতিনিধি:
পরিবেশ আইনকে অমান্য করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা অঞ্চলে একটি প্রভাবশালী চক্র দিনদুপুরে ভেকু মেশিন দিয়ে টিলা কেটে উজাড় করছে। এতে করে বিলিন হচ্ছে পাহাড়ি টিলা ভূমি। নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য। চক্রের সদস্যরা প্রভাবশালীদের নাম ভাঙিয়ে প্রকাশ্যে এসব কর্মকা- চালিয়ে গেলেও রহস্যজনক কারণে অনেটাই নিরব স্থানীয় প্রশাসন। তবে পরিবশে অধিদফতরের দাবি খবর পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভারত সীমান্তবর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার বায়েক ইউনিয়নের মাদলা, কোল্লা পাথর, বায়েক এবং গোপীনাথপুর ইউনিয়নের বড়খোটা, রামপুর, সুতার মোড়া, ধ্বজনগর,পাথারিয়া দ্বার এবং এর আশপাশের গ্রামের পাহাড়ি টিলাভূমির লালমাটি দিনদুপুরে কেটে নিচ্ছে টিলা খেকো চক্রের সদস্যরা। একাধিক ট্রাক্টরে করে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কোনও বাধা ছাড়াই প্রতিদিন টিলার মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। চক্রের সদস্যরা প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়দের অনেকেই এ নিয়ে মুখ খুলতে সাহস পান না। নিয়মিত ট্রাক্টরে করে টিলাভূমির মাটি অন্যত্র বিক্রি করা হলেও জড়িতদের দাবি, ‘মসজিদ, কবরস্থান এবং বসতি গড়ে তোলার জন্যে এসব মাটি কাটা হচ্ছে।’ পাহাড়ি ভূমি উজাড় করার সঙ্গে জড়িত পাথারিয়া দ্বার এলাকার খায়রুল ইসলাম রানা বলেন, পুরো জায়গা করবস্থানের নামে করা হয়েছে। সেজন্য এখানের মাটি কেটে উঁচু জায়গা সমান করা হচ্ছে। টিলা কাটার সঙ্গে জড়িত হোসেন খন্দকার দাবি করেন, জায়গাটি ভিটাবাড়ি। আমাদের বাড়ি উঁচুতে ছিল, সেজন্য ঝড় এলে বারবার ঘরের ক্ষতি হয়। এজন্য মাটি কেটে সমান করে নিচু জায়গায় ঘর বানানো হবে। উঁচু জায়গায় থাকতে সমস্যা, সেজন্য মাটি কাটা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দা ও অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা সদস্য বলেন, যেভাবে টিলা কাটা হচ্ছে তা পরিবেশের জন্য খুব ক্ষতিকর। যারা এই টিলা উজাড়ে জড়িত তাদের কিছু বলার মতো ক্ষমতা আমাদের নেই। কিংবা কেউ বাধা দিবে সেই পরিবেশও নেই। এতে যেকোনও সময় বিপদ হতে পারে। পুলিশ প্রশাসন ও সরকার দায়িত্বরত কর্মকর্তারা যদি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে এই টিলা কাটা বন্ধ করা যাবে না। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দাবি রাতের আঁধারে এসব কর্মকা- পরিচালনা করা হচ্ছে। জানামাত্র অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কসবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ-উল আলম বলেন, পাহাড়ি টিলা কাটা বা শ্রেণি পরির্বতন করার কোনও সুযোগ নেই। এগুলো বেআইনি কাজ। আমরা খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশনা দিয়েছি। তিনি দ্রুত এ বিষয়ে একাধিক স্পটে গিয়ো জরিমানা এবং মামলা দায়ের করেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. নূরুল আমীন বলেন, টিলা বা পাহাড় কাটা গুরুতর অপরাধ। এ কারণে পরিবেশ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। দুনিয়াকে স্থিতিশীল করার মূল পেরেক হচ্ছে পাহাড়। পাহাড় প্রাকৃতিক খুঁটি হিসেবে কাজ করে। সরকারিভাবে পরিবেশ বান্ধব পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ নিষেধ। তার দাবি পাহাড় ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কসবা উপজেলার সীমান্ত অঞ্চলে গত একবছরে অন্তত ২০টির বেশি স্থানে টিলা ভূমি কেটে প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক