November 18, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, September 7th, 2023, 7:49 pm

বিশুদ্ধ বাতাসের জন্য বৈশ্বিক সহযোগিতা বাড়াতে জাতিসংঘ মহাসচিবের আহ্বান

বায়ু দূষণের ক্রমবর্ধমান ‘বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা’মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য একটি জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) নীল আকাশের জন্য আন্তর্জাতিক পরিচ্ছন্ন বায়ু দিবস উপলক্ষে গুতেরেস বলেন, ‘বৈশ্বিক সমস্যার বৈশ্বিক সমাধান প্রয়োজন। আমাদের অবশ্যই পরিষ্কার বাতাসের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

‘টুগেদার ফর ক্লিন এয়ার’ প্রতিপাদ্য নিয়ে নীল আকাশের জন্য পরিচ্ছন্ন বায়ুর চতুর্থ আন্তর্জাতিক দিবসটি বায়ু দূষণ কাটিয়ে উঠতে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব, বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়ার জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।

গুতেরেস বলেছেন, ‘একসাথে, আমাদের অবশ্যই জীবাশ্ম জ্বালানী, বিশেষত কয়লা থেকে দূরে একটি ন্যায়সঙ্গত রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করতে হবে। একই সঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ধাবিত হতে হবে। এমনকি কেউ যাতে পিছিয়ে না থাকে তাও নিশ্চিত করতে হবে।’

বায়ুবাহিত দূষণকারী উপাদানগুলো সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবেশগত স্বাস্থ্য ঝুঁকিগুলোর মধ্যে একটি। জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, বিশ্বের জনসংখ্যার ৯৯ শতাংশ দূষিত বাতাসে শ্বাস নেয়। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে এর হার উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপ।

বায়ু দূষণের বিস্তৃত প্রকৃতির জন্য বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা প্রয়োজন। চলতি বছরের প্রতিপাদ্য ‘টুগেদার ফর ক্লিন এয়ার’শক্তিশালী আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব, বর্ধিত বিনিয়োগ এবং বায়ু দূষণ কমানোর জন্য সম্মিলিত দায়িত্বের জরুরি প্রয়োজনকে তুলে ধরে।

বায়ু দূষণকে যে কোনো রাসায়নিক, ভৌত বা জৈবিক দূষক হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয় যা বায়ুমণ্ডলের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যকে পরিবর্তন করে।

গৃহস্থালীর রান্নার যন্ত্র এবং অন্যান্য দহন যন্ত্র, গাড়ি, শিল্পের নানা সরঞ্জাম এবং দাবানল বায়ু দূষণের সবচেয়ে পরিচিত উৎস। বায়ু দূষণ বাইরে ও ভেতরে উভয়ই বিদ্যমান এবং উভয়ই মানুষের স্বাস্থ্যকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে।

বিশেষ করে বিপজ্জনক দূষণকারীর মধ্যে রয়েছে কার্বন মনোক্সাইড, ওজোন, নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড ও সালফার ডাই অক্সাইড।

বায়ু দূষণের মধ্যে রয়েছে পিএম ২.৫, ইনহেলেবল পার্টিকুলেট ম্যাটার ২.৫ মাইক্রোমিটারের কম ব্যাস। এর ব্যাস মানুষের চুলের চেয়ে কম।

এই কণাগুলো মানুষের চোখের অদৃশ্য এবং ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করতে পারে যেখানে তারা প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, রক্ত প্রবাহে প্রবেশ করতে পারে এবং হৃদয় ও মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এক্সপোজার নাটকীয়ভাবে স্ট্রোক, হৃদরোগ ও ফুসফুসের রোগ, ক্যান্সার এবং অন্যান্য রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। যার ফলে বছরে ৬৭ লাখেরও বেশি অকাল মৃত্যু ঘটে।

বায়ু দূষণ গাছপালাকেও প্রভাবিত করে, ফসলের ফলন হ্রাস করে এবং খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করে। এটি সামাজিক ও লিঙ্গ বৈষম্যকে আরও খারাপ করে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ধীর করে দেয় এবং দেশগুলোর উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণের ক্ষমতা সীমিত করে।

জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি)- এর আহ্বায়ক ক্লাইমেট অ্যান্ড ক্লিন এয়ার কোয়ালিশনের সচিবালয়ের প্রধান মার্টিনা অটো বলেন, ‘যেকোনো স্তরে এক্সপোজারের স্বাস্থ্যগত প্রভাব থাকতে পারে যা জীবনযাত্রার মানকে নষ্ট করে এবং ব্যক্তি, সমাজ ও অর্থনীতির জন্য খরচ বহন করে।’

স্থানীয় প্রেক্ষাপট ও সেক্টরের উপর ভিত্তি করে বায়ুর গুণমান উন্নত করার সমাধান পরিবর্তিত হয়। ব্যক্তি পর্যায়ে, মানুষ পরিচ্ছন্ন বাতাসকে উৎসাহিত করে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে, যেমন পরিবেশবান্ধব কেনাকাটা করা এবং পরিবহন ও রান্নার পরিষ্কার পদ্ধতি ব্যবহার করা।

ব্যবসা ও কর্পোরেশনগুলো কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার বিবেচনায় বায়ুর গুণমান যুক্ত করতে পারে। দূষণ নির্গমন নিরীক্ষণ ও প্রকাশ্যে রিপোর্ট করতে পারে এবং নির্গমন হ্রাস করে এমন কর্মসূচিগুলোকে উৎসাহিত করতে পারে।

বায়ুর গুণমান নিরীক্ষণ করার ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২১ সালের নির্দেশিকাগুলোতে বর্ণিত মাইলফলকগুলো অর্জন করতে সরকারগুলোকে বায়ু দূষণের মান তৈরি এবং প্রয়োগ করা উচিত।

নীল আকাশের জন্য আন্তর্জাতিক পরিচ্ছন্ন বায়ু দিবস, প্রতি বছর ৭ সেপ্টেম্বর পালিত হয়। ২০১৯ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এটি চালু করেছিল। যা পরিষ্কার বাতাসের গুরুত্ব ও মানব স্বাস্থ্য এবং বাস্তুতন্ত্রের উপর অসামঞ্জস্যপূর্ণ বায়ু ও দূষণের প্রভাবকে স্বীকৃতি দেয়। বিশেষত নারী, শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের উপর এর অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রভাবকে স্বীকৃতি দেয়।

—-ইউএনবি