নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিশ্ববাজারে হু হু করে বাড়ছে পণ্যের দাম। গত অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারিতে আমদানি ব্যয় কমেছিল শূন্য দশমিক ২৬ শতাংশ। কিন্তু চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ওই ব্যয় প্রায় ৪৭ শতাংশ বেড়েছে। তার মধ্যে ভোগ্যপণ্যের আমদানি ৫০, শিল্পের যন্ত্রপাতি ৬১, শিল্পের মধ্যবর্তী যন্ত্রপাতি ৫৮, জ্বালানি তেল ৯০, শিল্পের কাঁচামাল ৫৩ এবং অন্যন্য খাতে ৪১ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে। অথচ দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম খাত রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে। রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ভালো থাকলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে সার্বিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হচ্ছে। তাতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনার সংক্রমণ শুরুর পর আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলসহ প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়েছে। সম্প্রতি রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পণ্যের দাম আরো বেড়েছে। তার প্রভাবে লাগামহীনভাবে বেড়ে যাচ্ছে আমদানি ব্যয়ও। করোনার পর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ৮৬ ডলারে উঠেছিল। পরে কমে তা ৬৮ ডলারে নামে এসেছিল। কিন্তু সম্প্রতি আবার বেড়ে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১১৮ ডলারে উঠেছে। তাছাড়া দেশের প্রধান আমদানি পণ্য গমের দাম বেড়েছে প্রায় ৩২ শতাংশ আর সারের বেড়েছে শতভাগ। তাছাড়া শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামালের দামও বেড়েছে। তার প্রভাবে আমদানি ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, দেশের আমদানি ব্যয় বাড়লেও পণ্যের আমদানি বাড়ছে না। কারণ পণ্যের দাম বেশি হওয়ার কারণে ব্যয় বাড়লেও পণ্য আসছে কম। আর আমদানি ব্যয় বাড়ায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে অর্থব্যয়ও বেড়েছে। ওই কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪ হাজার ৭০০ কোটি ডলার থেকে ১০০ কোটি ডলার কমেছে। পাশাপাশি রেমিট্যান্স কমায় রিজার্ভের ওপর চাপ আরো বাড়ছে। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসী আয় ১৬ শতাংশ কমেছে। আর জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ মাসে কমেছে পায় ২০ শতাংশ।
সূত্র আরো জানায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে জ্বালানি তেলের আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৮৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। অথচ আগের অর্থবছরে তা ৫ দশমিক ১৪ শতাংশ নেতিবাচক ছিল। ওই কারণে সামগ্রিক আমদানি ব্যয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে এই সময়ে প্রায় ৫৩ শতাংশ বেড়েছে। তাতে এই সময়ে চলতি হিসাবের ভারসাম্য নেতিবাচক হয়েছে ১ হাজার ৬ হাজার ২০ লাখ ডলার। আর আগের বছরের একই সময়ে ১৫৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত ছিল। মূলত বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি বাড়ায় জ্বালানি খাতে ঘাটতি হয়েছে। আর এমন ঘাটতি বেশিদিন থাকলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রাব্যবস্থায় বড় চাপ তৈরি হবে।
এদিকে দেশে যে পরিমাণ আমদানি হয় রপ্তানি আয় দিয়ে তার ব্যয় নির্বাহ করা যায় না। প্রবাসী আয় দিয়েই আমদানির প্রায় ৪০ শতাংশ ব্যয় নির্বাহ করা হয়। কিন্তু চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ায় বেশির ভাগ ব্যাংকই তাদের আমদানি ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় ডলারের সংস্থান করতে পারছে না। সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দ্বারস্থ হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ বেড়েছে। তাতে একদিকে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাচ্ছে, পাশাপাশি চাপে পড়ে যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে পণ্য আমদানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। বিপরীতে ৮ মাসে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ আমদানি বাড়ার চেয়ে রপ্তানি আয় বাড়ছে কম।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ