March 29, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, August 4th, 2021, 7:57 pm

বিশ্ববাজারে স্ক্র্যাপ জাহাজের মূল্য বৃদ্ধিতে ঊর্ধ্বমুখী রডের দাম

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক :

নির্মাণ শিল্পের অন্যতম উপকরণ রডের ঊর্ধ্বমুখী দামে চাপের মুখে দেশের নির্মাণ শিল্প। বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়েই বর্ধিত মূল্যে রডের জোগান হচ্ছে। ফলে নির্মাণ খাতে বড় ধাক্কা লেগেছে। মূলত বিশ্ববাজারে স্ক্র্যাপ জাহাজের মূল্য বৃদ্ধির কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কারণ জাহাজভাঙ্গা (স্ক্র্যাপ) শিল্প থেকে দেশে লোহা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ রি-রোলিং মিলসমূহে কাঁচামালের প্রায় ৭০ শতাংশ জোগান হয়। আর দেশজুড়ে একমাত্র চট্টগ্রামেই ওই শিল্পের অবস্থান। চট্টগ্রামের কুমিরা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত বর্তমানে প্রায় ৫৫টি শিপইয়ার্ডে জাহাজভাঙ্গার কার্যক্রম চলছে। অতীতে ওই সংখ্যা ছিল ১৫৭টি। দেশে জাহাজভাঙ্গা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমলেও স্ক্র্যাপ শিপ আমদানি বেড়েছে। বিএসবিআরএ (বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স এ- রিসাইর্ক্লাস এ্যাসোসিয়েশন) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপ শিপের মূল্য অতীতের চেয়ে টনপ্রতি প্রায় একশ থেকে দেড়শ ডলার বেশি। ফলে দেশে স্ক্র্যাপশিপ এনে ভাঙ্গার পর তার টনপ্রতি মূল্যও বেড়ে যাচ্ছে। আর কাঁচামালের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় লোহা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহেও ফিনিশড প্রোডাক্ট অর্থাৎ লোহার মূল্য বেড়ে গিয়ে বর্তমানে টনপ্রতি প্রায় ৭০ হাজারে উন্নীত হয়েছে। যা গত দশ বছরে একটি রেকর্ড। অথচ বিগত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে দেশে ১৫৭টি স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি হয়। যা থেকে ১৯ লাখ ৬১ হাজার টন কাঁচা লোহা বেরিয়ে আসে। পরের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরে জাহাজ আমদানি হয় ২৩২টি। যা থেকে কাঁচামাল জোগান হয় ২৫ লাখ ৩৩ হাজার টন। আমদানি বাড়ার পরও লোহার দাম বৃদ্ধির পেছনে আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপ জাহাজের দাম বেড়ে যাওয়া ভূমিকা রাখছে।
সূত্র জানায়, যেসব রি-রোলিং মিল জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের বিলেট ব্যবহার না করে উন্নতমানের কাঁচামাল আমদানির মাধ্যমে রড তৈরি করে, সেসব রডের মূল্য সাধারণত টনপ্রতি বাংলা রডের চেয়ে ১০ হাজার টাকা বেশিতে বাজারজাত হয়ে থাকে। অর্থাৎ সেসব রডের মূল্য সব সময় বেশি। বর্তমানে লকডাউনের কারণে সীতাকু-ের কুমিরা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত শিপ ব্রেকিং বেল্টে জাহাজভাঙ্গার কাজ বন্ধ রয়েছে। আর ওই শিল্পের সঙ্গে সরাসরি জড়িত রয়েছে ২৫-৩০ হাজার শ্রমিক। আর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে প্রায় ৫ লাখ মানুষ। তাছাড়া পরোক্ষভাবে কাঁচামাল কেনার সঙ্গে জড়িত রয়েছে আরো ১২ হাজার ছোট-বড় প্রতিষ্ঠান। মূলত তারাই রি-রোলিং মিলগুলোতে রড তৈরির কাঁচামাল সরবরাহ করে থাকে।
সূত্র জানায়, সরকার বিগত ২০১১ সালে জাহাজভাঙ্গা কার্যক্রমকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করে। তারপর থেকে তা সুনির্দিষ্ট বিধিমালায় পরিচালিত হয়। ২০১৮ সালে জাহাজভাঙ্গা শিল্পকে আইনে রূপ দেয়া হয়। কিন্তু এখনো বিধিমালা চূড়ান্ত হয়নি। যদিও ওই শিল্প থেকে ওয়ান স্টপ সার্ভিস প্রদানে একটি বোর্ড গঠন করা হয়েছে এবং ওই বোর্ডের কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। তাছাড়া জাহাজভাঙ্গা শিল্প জোনে গ্রিড শিপইয়ার্ড গড়ে তোলার জন্য প্রায় ৮০টি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে। যা একটি ব্যয়বহুল কাজ।
সূত্র আরো জানায়, জাহাজভাঙ্গা শিল্প থেকে যে কাঁচামাল সরবরাহ করা হয় মূলত তা থেকেই দেশে ৭০ শতাংশ রডের জোগান হয়। তাতে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যের রড বাজারজাত হওয়ার সুযোগ ঘটে, যা নির্মাণ শিল্পে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাছাড়া স্ক্র্যাপ শিপ আমদানির পর তা থেকে শুধু লোহা তৈরির কাঁচামালই নয়, অন্যান্য বিভিন্ন জাতের উপকরণও বেরিয়ে আসে। আর তা নিয়েও দেশে বড় ধরনের বাজার সৃষ্টি হয়ে আছে।
এদিকে জাহাজভাঙ্গা শিল্পের সঙ্গে জড়িত মালিকদের মতে, এ খাতে জরুরি ভিত্তিতে সমন্বিত নীতিমালা প্রয়োজন। অন্যথায় যার যার ইচ্ছে অনুযায়ী এ শিল্পের কার্যক্রম চলতে থাকবে। এ প্রক্রিয়ায় দেশে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে মালিকরা প্রায়শ নানাভাবে হয়রানির সম্মুখীন হয়ে থাকে। অথচ এ শিল্প থেকে জাতীয় কোষাগারে বছরে গড়ে প্রায় ১২শ’-১৫শ’ কোটি টাকা রাজস্ব জোগান হয়ে থাকে।