অনলাইন ডেস্ক :
পৃথিবীর বাতাসে যত কার্বন ডাই অক্সাইড মিশছে, তার অধিকাংশই আসছে মাত্র চারটি দেশ থেকে- চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও রাশিয়া। সঙ্গে আছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কার্বন গ্যাস নির্গমনকারী দেশের তালিকায় সবার ওপরে রয়েছে চীন। এরপরেই যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান। পৃথিবীর সমগ্র নির্গমনের এক চতুর্থাংশই আসছে চীন থেকে। প্রতি বছর চীন মোট ১১ হাজার ৫৩৫ মেগা টন কার্বন নির্গমন করে। চীন বলছে, তাদের কার্বন নির্গমন সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছাবে ২০৩০ সালে। দেশটির লক্ষ্য, ২০৩০ সালের মধ্যে তাদের শক্তি উৎপাদনের ২৫ শতাংশ আসবে ফসিলজাত নয় এমন জ্বালানি থেকে। প্রধানত কয়লা নির্ভরতার কারণে তাদের কার্বন নির্গমন এখনও বাড়ছে। চীন অঙ্গীকার করছে, ২০৬০ সালের মধ্যে তারা ‘কার্বন-নিরপেক্ষ’ হবে। তবে চীন যে কার্বন-নিরপেক্ষ হওয়ার কথা বলছে- তা কি নির্গমন কাটছাঁটের মাধ্যমে অর্জিত হবে, নাকি অন্য কোন পন্থায় হবে তা তারা এখনও স্পষ্ট করেনি। আন্তর্জাতিক এনার্জি এজেন্সি বলছে, চীনকে যদি তার জলবায়ু সংক্রান্ত লক্ষ্য অর্জন করতে হয়, তাহলে তাকে ২০৬০ সালের মধ্যে কয়লার চাহিদা ৮০ শতাংশেরও বেশি কাটছাঁট করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে কোন দেশ কি করছে -তার ওপর নজরদারির প্রতিষ্ঠান ‘ক্লাইমেট অ্যাকশন ট্র্যাকার’ জানিয়েছে, চীনের এসব নীতি ও পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। তারা বলছে, অন্য দেশগুলোও যদি একই পথ অনুসরণ করে তাহলে পৃথিবীর তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি বেড়ে যাবে। চীনের পরেই সবচেয়ে বেশি কার্বন নির্গমন ঘটিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্র মোট ৫ হাজার ১০৭ মেগা টন কার্বন নির্গমন করে। যুক্তরাষ্ট্রে ফসিলজাত জ্বালানি হচ্ছে ৮০ শতাংশেরও বেশি শক্তির উৎস। যদিও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসের পরিমাণ এখন বাড়ছে। গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রের কার্বন নির্গমন কমতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র অঙ্গীকার করেছে, ২০৫০ সালের মধ্যে তারা কার্বন-নিরপেক্ষ হবে। কিন্তু ক্লাইমেট অ্যাকশন ট্র্যাকার বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ও কর্মসূচিগুলো যথেষ্ট নয়। প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য অনুযায়ী বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রিতে সীমিত রাখতে হলে তাদের আরও কর্মসূচি নিতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলো সম্মিলিতভাবে বছরে ৩ হাজার ৩০৪ মেগা টন কার্বন নিঃসরণ করে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে সবচেয়ে বড় কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলো হচ্ছে জার্মানি, ইতালি এবং পোল্যান্ড। ইইউ ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন-নিরপেক্ষ হবে বলে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তবে কার্বন নির্গমন কমানোর জন্য ইইউ’র একটি সার্বিক লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এর সদস্য দেশগুলোর আর্থিক এবং কারিগরি সক্ষমতা এক নয়। ইউনিয়নের লক্ষ্য অর্জন করতে হলে সব সদস্য দেশকে একমত হতে হবে। ক্লাইমেট অ্যাকশন ট্র্যাকার বলছে, ২০১৮ সাল থেকে ইইউর কার্বন নির্গমন কমছে এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রির নিচে রাখতে ইইউ’র নীতি ও পদক্ষেপসমূহ প্রায় যথেষ্ট। তালিকায় এর পরই রয়েছে ভারত। দেশটির কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বছরে ২ হাজার ৫৯৭ মেগা টন। ভারতের বার্ষিক কার্বন নির্গমন গত দুই দশকে অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে ভারতেরই মাথাপিছু কার্বন নির্গমনের মাত্রা সবচেয়ে কম। ভারতের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে নির্গমনের মাত্রা ৩৩-৩৫ শতাংশ কমিয়ে আনা। দেশটি অঙ্গীকার করেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে তাদের বিদ্যুৎ শক্তির ৪০ শতাংশ আসবে ফসিলজাত নয় এমন জ্বালানি থেকে।’নেট শূন্য-নির্গমন’ অর্জনের কোনো লক্ষ্যমাত্রা এখনও ঘোষণা করেনি ভারত।ভারত বলছে অপেক্ষাকৃত ধনী এবং অধিক শিল্পোন্নত দেশগুলোকেই নির্গমন কমানোর দায়িত্ব বেশি করে নিতে হবে। কারণ বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এ দেশগুলোই দীর্ঘমেয়াদে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে। ক্লাইমেট অ্যাকশন ট্র্যাকার বলছে, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য তাদের ২০৪০ সালের মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্রমান্বয়ে বন্ধ করতে হবে।
ভারতের পরেই রয়েছে রাশিয়া। দেশটি প্রতি বছর ১ হাজার ৭৯২ মেগা টন কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ১৯৯১ সালে রাশিয়ার অর্থনীতি ও কার্বন নির্গমনের হার কমেছিল। কিন্তু তারা এখনও কার্বন শোষণের জন্য তাদের বিশাল বন ও জলাভূমির ওপর নির্ভর করছে। রাশিয়া ২০৩০ সালের মধ্যে নির্গমন ৩০ শতাংশ কমানোর কথা বলেছে। তাদের জ্বালানির যে অংশটুকু বায়ু, সৌর ও জলশক্তির মত অ-ফসিলজাত উৎস থেকে আসা তার পরিমাণ বেশ কম। অন্যদিকে তাদের জিডিপির ২০ শতাংশেরও বেশি আসে ফসিলজাত জ্বালানি থেকে। তারা অঙ্গীকার করেছে, ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন-নিরপেক্ষ হবে। ক্লাইমেট অ্যাকশন ট্র্যাকার বলছে, বিশ্বের তাপমাত্র বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে সীমিত রাখতে রাশিয়ার নীতি ও পদক্ষেপগুলো একেবারেই যথেষ্ট নয়। সূত্র: বিবিসি
আরও পড়ুন
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২
তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে যুদ্ধ