অনলাইন ডেস্ক :
আজারবাইজানের বাকু শহরে বিশ্বকাপ দাবায় চ্যাম্পিয়ন হলেন নরওয়ের দাবাড়ু ম্যাগন্যাস কার্লসেন। উপমহাদেশে কার্লসেনের বিশ্বকাপ জয়ে যতটা না আলোচনা, তার চেয়েও ঢের বেশি আলোচনায় উঠে এসেছেন ভারতীয় তরুণ দাবাড়ু প্রজ্ঞানন্দ। তিনি ফাইনাল খেলেছেন। অল্পের জন্য জয়টা পাননি। তাতেও আফসোস নেই ভারতের। ১৮ বছরের এই তরুণ বিশ্বকাপ দাবার ফাইনালে উঠেছেন, লড়াই করে হেরেছেন, বিশ্বনাথন আনন্দের পর দ্বিতীয় ভারতীয় দাবাড়ু প্রজ্ঞানন্দ, যিনি ফাইনাল খেললেন। তাকে নিয়ে ভারতবর্ষ উৎফুল্ল। উপমহাদেশ মহা খুশি।
প্রশ্ন ঘুরছে বাংলাদেশের খবর কী। ভারত গত পাঁচ বছরে একের পর এক দাবাড়ু উপহার দিচ্ছে। আর বাংলাদেশ কোথায় পড়ে আছে। বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার মতো কয়েকজন দাবাড়ু বিশ্ব মঞ্চে দাঁড় করিয়েছে ? ১৮ বছরের যুবক প্রজ্ঞানন্দ ভারত নাড়িয়ে দিল। আর বাংলাদেশ সেই তিমিরেই পড়ে রয়েছে। ৫০ বছর আগে যা ছিল এখনো তাই। মেধার খেলা দাবা দিয়ে ৩০ বছর আগে যেসব দাবাড়ু দেশের ক্রীড়াঙ্গন আলোকিত করেছিলেন তারাই এখনও দাবায় কমবেশি টপে রয়েছেন।
পাঁচ গ্র্যান্ডমাস্টারে নিয়াজ মোরশেদ, জিয়াউর রহমান জিয়া, রিফাত বিন সাত্তার, আব্দুল্লাহ আল রাকিব এবং এনামুল হোসেন রাজিবকে নিয়েই বাংলাদেশের দাবার ঘর সাজানো। রাজিব বর্তমান জাতীয় চ্যাম্পিয়ন, রকিব এক বছর ধরে দাবা থেকে দূরে। তার মা মারা যাওয়ার পর দাবা খেলতে আসেন না। রিফাত বিন সাত্তার চাকরি করেন, সময় বের করতে পারলে লিগ আর জাতীয় দাবায় খেলেন। নিয়াজের মুড ভালো থাকলে, শরীর ভালো থাকলে খেলেন। এদের মধ্যে জিয়া নিয়মিতই খেলছেন। নতুন কোনো গ্র্যান্ডমাস্টার নেই তাই ওরাই দাবার আলোচনায়। ভারতের দাবার আয়নায় তাকালে দেখা যায় তারা গত পাঁচ বছরে সন্তোষ কুমার, ডি বুকেশ প্রজ্ঞানন্দের মতো দাবাড়ু উপহার দিয়েছে।
আর বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন এখনো ৬ নম্বর গ্র্যান্ডমাস্টার বের করতে পারেনি। উপমহাদেশে বাংলাদেশের নিয়াজ মোরশেদ ১৯৮৭ সালে প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব পান। এক বছর পর ভারত প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার পেয়েছিল, তিনি বিশ্বনাথন আনন্দ। আজ ভারত কোথায় চলে গেছে। এখন তাদের ঘরে খেতাব পাওয়া গ্র্যান্ডমাস্টার ৮৩ জন। গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার পাইপলাইনে আছেন আরও এক-দেড়শ দাবাড়ু। আর বাংলাদেশের দাবা কোথায় পড়ে আছে। ৮৭ সালে সর্বশেষ গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব পেয়েছিলেন রাজিব। তিনি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠা সর্বোচ্চ সাকসেস পাওয়া দাবাড়ু। উপমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব পাওয়া বাংলাদেশ দাবা বিশ্বকাপের টেবিল দাপিয়ে বেড়ানোর কথা। সেই বাংলাদেশ বিশ্বকাপের এক দরজা দিয়ে ঢুকে অন্য দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসেন। এক দুই রাউন্ডের পরই দর্শক আসনে চলে যেতে হয়।
এখন বাংলাদেশের যেসব গ্র্যান্ডমাস্টার রয়েছেন তাদের দিয়ে আর কতো। অন্যান্য দেশে এসব দাবাড়ুকে সম্মান দিয়ে দেশের দাবার উন্নয়নে কাজে লাগিয়েছে। বাংলাদেশে সেই পরিকল্পনা নেই। দাবা নিয়ে কে ভাবে। ফেডারেশনে দাবা নিয়ে ভাবার মানুষটি কোথায়। ২০২০ সালে এডহক কমিটি দিয়ে চলছে। আজও সেই অবস্থায় আছে। সামনে নির্বাচনের একটা প্রক্রিয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। কারা কমিটিতে থাকবেন তা নিয়ে ভেতরে ভেতরে আলোচনা চলছে। কাটছাঁট করার প্রক্রিয়া চলছে। এমন একজন মানুষ কাঁচি নিয়ে কাটছাঁট করছেন, যিনি নিজেই দাবার মানুষ নন। দাবা এমন একটা খেলা, এর প্রতি ভালোবাসা না থাকলে সেটিকে উন্নয়ন করাও কঠিন হয়ে পড়ে। অর্থের প্রয়োজন হয়।
অর্থ দেওয়ার মানুষের সংখ্যাটাই বা কোথায়। এখন এমন এক অবস্থা হয়েছে পৃষ্ঠপোষক হয়ে উঠছেন সংগঠক। তারা ক্ষমতা চান। হাতে পেলে সেটিকে ব্যবসায়িক কাজেও লাগানো যায়। তাতে দাবা কতটা উপকৃত হলো কী যায় আসে। যারা সত্যিকার ভাবে দাবাকে ভালোবাসেন, পকেটের অর্থ খরচ করেন। তারা ফেডারেশনে দায়িত্ব নিতে চাইলেও ক্রীড়াঙ্গনের অন্যান্য সংগঠকের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। সেই সংগঠকরা তুষ্ট হলে তবেই তার আসন হবে। তাই বিশ্ব দাবায় বাংলাদেশ শুধু যাওয়া আসার মধ্যেই থাকছে। আর ভারত চলছে দাপিয়ে।
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা