April 26, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, August 2nd, 2022, 8:36 pm

বিশ্ব ‘পরমাণু বিপর্যয়ের’ থেকে এক ধাপ দূরে: জাতিসংঘ মহাসচিব

এপি, জাতিসংঘ :

ইউক্রেনের যুদ্ধ, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক হুমকি এবং অন্যান্য অনেকগুলো কারণের কথা উল্লেখ করে জাতিসংঘের মহাসচিব সোমবার সতর্ক করে বলেছেন, ‘মানব জাতি পরমাণু বিপর্যয়ের’ থেকে এক ধাপ দূরে রয়েছে।’

আন্তোনিও গুতেরেস পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ এবং একটি পরমাণু অস্ত্র মুক্ত বিশ্ব অর্জনের লক্ষ্যে দীর্ঘ বিলম্বিত এনপিটি রিভিউ’ সম্মেলনের উদ্বোধনী ব্ক্তব্যে এই ভয়ানক সতর্কবাণী দিয়েছেন।

পাঁচ বছর অন্তর ‘পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ সংক্রান্ত চুক্তি বা অ-প্রফ্লফ্রেশন চুক্তি (এনপিটি) রিভিউ’ সম্মেলনে ঐতিহাসিক এই চুক্তির অবস্থা খতিয়ে দেখা হয়। পরমাণু অস্ত্রের প্রসার রোধের পাশাপাশি এই চুক্তির আওতায় পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও তরান্বিত করা হয়। করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে নির্ধারিত সময়ে এই সম্মেলন আয়োজন করা সম্ভব হয় নি। বাধ্য হয়ে সম্মেলনের দিনক্ষণ ২০২২ সাল পর্যন্ত পিছিয়ে দিতে হয়েছিল।

ক্রমবর্ধমান পরমাণু হুমকি ও পারমাণবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মানি, জাতিসংঘের পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ শাখার প্রধান এবং অন্যান্য বিশ্ব নেতারা এনপিটি সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে এ চুক্তির অগ্রগতি ও বাস্তবায়নের জন্য নেয়া ভবিষ্যতের পদক্ষেপ সম্পর্কে পর্যালোচনা করেন।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, উত্তর কোরিয়া তার সপ্তম পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে; ইরান তার ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিটি গ্রহণ করতে ‘হয় অনিচ্ছুক বা অক্ষম’ এবং রাশিয়া ‘ইউক্রেনে বেপরোয়া ও বিপজ্জনকভাবে পারমাণবিক অস্ত্র দেখিয়ে আস্ফালন করছে।’

তিনি ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণের পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বলা সতর্কবাণীর কথা উল্লেখ করেন। যেখানে পুতিন বলেন, ‘আপনারা কখনও চিন্তাও করেননি এমন পরিণতি’ ঘটবে।’

পুতিন জোর দিয়ে বলেন,তার দেশ ‘সবচেয়ে শক্তিশালী পরমাণু শক্তিগুলোর মধ্যে একটি।’

ব্লিঙ্কেন বলেন, পুতিনের এই ধরনের কথা ১৯৯৪ সালে সোভিয়েত যুগের পারমাণবিক অস্ত্র পরিত্যাগ করার সময় ইউক্রেনকে দেয়া তার সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার আশ্বাসের পরিপন্থী।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেছেন, ২০১৫ সালে শেষ এনপিটি সম্মেলনের পর থেকে বিশ্বে বিভক্তি আরও বেড়েছে।

কিশিদা আরও বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি ‘বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক রাশিয়াকে ১৯৯৪ সালে ইউক্রেনকে দেয়া আশ্বাস ‘নিষ্ঠুরভাবে লঙ্ঘন’ করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন।

তিনি বলেছেন, দুর্বল প্রতিবেশিকে আক্রমণের পর থেকে মস্কোর ‘বেপরোয়া পরমাণু হুমকি ’ ‘এনপিটির পাঁচ দশকে অর্জন করা সমস্ত কিছুকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।’

সোমবার এনপিটি সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের পক্ষ থেকে এর ওয়েবসাইটে পোস্ট করা শুভেচ্ছা বার্তায় পুতিনকেও পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যাপারে সতর্কতার কথা বলতে দেখা যায়।

পুতিন বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে পারমাণবিক যুদ্ধে কোনোদিন জয়লাভ করা যায় না এবং কখনই এই লড়াই করা উচিত নয় এবং আমরা বিশ্ব সম্প্রদায়ের সকল সদস্যের জন্য সমান ও অবিচ্ছেদ্য সুরক্ষার জন্য কাজ করে যাবো।

পুতিন বলেন, তার দেশ এনপিটি’র ‘প্রতিটি অক্ষর ও চেতনা মেনে চলে’ এবং তিনি আশা করেন যে সব পক্ষই তাদের প্রতিশ্রুতি কঠোরভাবে মেনে চলবে। এবং বিশ্বের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পরমাণু অস্ত্রের প্রসার রোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে এই সম্মেলনে ‘গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গিকার’ করবে।

সম্প্রতি ব্লিঙ্কেন বলেন, রাশিয়া জাপোরিঝিয়ায় ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দখল করেছে এবং এটিকে ইউক্রেনীয়দের ওপর আক্রমণের জন্য একটি সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে।

ব্লিঙ্কেন আরও বলেন,‘তারা (রাশিয়া) জেনেশুনেই এটা করছে। তারা জানে ইউক্রেন এখানে পাল্টা গুলি ছুঁড়তে পারবে না, কারণ তাদের (ইউক্রেনের সেনারা) আঘাত দুর্ঘটনাক্রমে তেজস্ক্রিয় পদার্থ থাকা পারমাণবিক চুল্লিতে আঘাত করতে পারে।’

যদিও এনপিটি-তে রাশিয়ার প্রতিনিধিদল সোমবার রাতে একটি বিবৃতি জারি করে ব্লিঙ্কেনের এই যুক্তিকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে।

বিবৃতিতে তারা জানায়, রাশিয়া জাপোরিঝিয়া প্ল্যান্টকে একটি সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে না এবং শুধুমাত্র ‘বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সেখানে সীমিত সংখ্যক সার্ভিসম্যান আছে।’

আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রসি বলেছেন, ইউক্রেনের সংঘাত ‘এত গুরুতর যে একটি সম্ভাব্য পারমাণবিক সংঘর্ষ বা দুর্ঘটনার ভীতি আবার ভয়ঙ্কর করে জাগিয়ে তুলেছে।’

তিনি সতর্ক করে বলেন, জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক প্ল্যান্টে ‘পরিস্থিতি দিন দিন আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে’।

এছাড়াও তিনি আইএইএ’র সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের একটি দল নিয়ে ওই প্ল্যান্টে তাকে পরিদর্শনে যেতে সাহায্য করার জন্য সব দেশকে অনুরোধ করেন।

গুতেরেস জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের হলে জড়ো হওয়া অনেক মন্ত্রী, কর্মকর্তা ও কূটনীতিকদের বলেন, ‘কোল্ড ওয়ারের পর থেকে সর্বোচ্চ পরমাণু সংকটের সময়ে মাসব্যাপী পর্যালোচনা এই সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।’

জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, সম্মেলনটি ‘কিছু নির্দিষ্ট বিপর্যয় এড়াতে ও মানবতাকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্বের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি দারুণ সুযোগ।’

গুতেরেস সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে।’ বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৩ হাজার পরমাণু অস্ত্র রয়েছে এবং ‘মিথ্যা নিরাপত্তা’ চাওয়ার অজুহাতে অস্ত্রধারী এসব দেশ ‘ধ্বংসকারী এসব অস্ত্রের’ জন্য কয়েক বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে।