জেলা প্রতিনিধি, ময়মনসিংহ (ঈশ্বরগঞ্জ) :
মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিটের প্রচন্ড ঝড়ের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত হলো প্রায় ২শ বছরের মহীরুহ একটি বটবৃক্ষ। মেঘ মুক্ত নীল আকাশ বৃষ্টিহীন পরিবেশে ৯ সেপ্টেম্বর রাত ৯টায় আচমকা শুরু হয় ঝড়ো হাওয়া। মাত্র পনের বিশ মিনিটের ঝড়ের তাণ্ডবে উপজেলার দক্ষিণ চর আলগী গ্রামের কালের সাক্ষী বটবৃক্ষটি বিধ্বস্ত হয়। দক্ষিণ চর আলগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে রাস্তার পাশে ১৮২২ খ্রিস্টাব্দে ওই গ্রামের রোস্তম শেখ নামের এক ব্যক্তি গাছটি রোপন করেছিলেন।
এই গাছের নাম অনুসারেই স্থানটির নতুন নামকরণ হয়েছিল বটতলা। বিশাল আকৃতির বটগাছটি ডালপালা বিস্তার করে সুশীতল ছায়া দান করে গেছে ক্লান্ত পথিকসহ এলাকাবাসীকে। গাছটি বিধ্বস্ত হওয়ায় এলাকাবাসীর যেন আক্ষেপের আর শেষ নেই।
সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধি আবুল বাশার মেম্বার জানান, জন্মের পর থেকে দেখেছি এই গাছটিকে। এই গাছটির নিচে রোদে পুড়া কৃষক আর দূর-দূরান্তের ক্লান্ত পথিকরা বসে বিশ্রাম নিত।
রোস্তম শেখের বংশধর আবু বক্কর সিদ্দিক (৫০) সোহেল রানা (৪০) আবুল কালাম আজাদ (৩০) জানান, এই বটগাছের নিচে তাদের তিনটি মুদির দোকান ছিল। গাছ চাপা পড়ে দোকানগুলো মাটির সাথে মিশে গেছে। ঝড়ের সময় দোকান থেকে লোকজন সরে যাওয়ায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তিনটি দোকানের মালামাল সহ প্রায় আট দশ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে তাদের দাবি।
সংশ্লিষ্ট এলাকার তরুণ সমাজ সেবক ফেরদৌস কোরাইশী টিটু জানান, জনশ্রুতি রয়েছে বটগাছটি ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী হওয়ায় শীত মৌসুমে বিদেশ থেকে আসা পরিযায়ী সারস, বালি হাঁস, মাঠ চুড়ই, দেশি বক, গাংচিল, খঞ্জন পাখির অভয় আশ্রম ছিল গাছটি। সারাদিন পাখিরা খাদ্য অন্বেষণ শেষে বিকেলে ফিরে আসত এই গাছটিতে। যেন গাছটি ছিল পাখিদের শান্তির নীড়। বিকেল বেলাটা পাখিদের কলরবে মুখরিত থাকত। এই বৃক্ষের জীবনাবসানে আর আসবেনা পাখি। মুখরিত হবে না বটতলার জনপদ।
চর আলগী গ্রামের অশীতিপর বৃদ্ধ ফয়েজ উদ্দিন (৮২) আব্দুর রাশিদ (৮৫) জানান, চল্লিশ পঞ্চাশের দশকে তখন পাকা রাস্তা ঘাট, যন্ত্র চালিত যানবাহন, ফোন মোবাইল কিছুই ছিল না। তখনকার সময় বণিকরা নদীপথে ও ঘোড়ায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পণ্য পরিবহন করত। নৌকা যোগে যারা মালামাল নিয়ে আসতো তারা বটতলা ঘাটে নৌকা ভিড়িয়ে সারাদিন গ্রামে গ্রামে পণ্য বিক্রি করে সন্ধ্যায় ফিরত বটতলার ঘাটে। জোসনা রাতে বণিকরা বটবৃক্ষের নিচে দখিনা বাতাসে বসে কেউ কেউ ভাটিয়ালি ভাওয়াইয়া গান করত আর স্থানীয় বংশীবাদক বাঁশি বাজিয়ে জোসনা রাতকে উদাস করে রাখত। কত স্মৃতি ছিল এই গাছটিকে ঘিরে। এখন আর বটতলায় আসবে না ক্লান্ত পথিক পরিযায়ী পাখি, বাজবেনা আর বংশীয় বাদকেরে বাঁশি। শত বছরের মহীরুহের চির প্রয়াণ দেখতে প্রতিদিন শত শত মানুষ ভিড় করছে বটতলায়।
প্রশাসনের কাছে সরকারী বন বিভাগের মাধ্যমে মহীরুহ স্রোতের বটবৃক্ষের চারা কিংবা কাস্টল জাতের চারা রোপন করে বটতলার নামকরণ অক্ষুন্ন রাখার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।##
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি