April 20, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, March 27th, 2022, 8:45 pm

বিস্ফোরক দ্রব্যের অভাবে বন্ধ রয়েছে এমজিএমসিএলের পাথর উত্তোলন

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বিস্ফোরক দ্রব্য বা অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে দেশের একমাত্র পাথরখনি দিনাজপুরের মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (এমজিএমসিএল) পাথর উত্তোলন। সহসা তা চালু হওয়ার কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় খনিটি প্রতিদিন সাড়ে ৫ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাতে মাসে ৬০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। খনির উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম-জিটিসি বর্তমানে পাথর উত্তোলনের কাজ বন্ধ করে খনির প্রায় ৭০০ শ্রমিককে সাময়িক ছুটিতে পাঠিয়েছে। আর পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় দেশের অবকাঠামো খাত সংকটে পড়ার শঙ্কা বাড়ছে। মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (এমজিএমসিএল) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ২০০৭ সালে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে ২০১৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত ৫৯৩ কোটি টাকার লোকসান হয়। আর ২০০৭ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত খনি থেকে ২০ লাখ টন পাথর উত্তোলন করা হলেও ১৩২ কোটি টাকার লোকসান হয়। সিন্ডিকেটের কমিশন বাণিজ্যের কারণে দীর্ঘদিন খনি থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ ছিল। পাথরখনিতে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় মেশিনারিজের জোগান না দেয়ারও অভিযোগ আছে। এমজিএমসিএল এখন পর্যন্ত দেশের গ্রানাইট বাজারের মাত্র ৬ শতাংশ দখলে নিতে পেরেছে।
সূত্র জানায়, চুক্তি অনুযায়ী পাথর উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট খনি কর্তৃপক্ষের সরবরাহ করার কথা। কিন্তু সময়মতো অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের সরবরাহ না আসায় বাধ্য হয়ে খনির উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। খনিতে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুত না থাকায় খনির অভ্যন্তরে ব্লাস্টিংয়ের কাজ বন্ধ রয়েছে এবং শ্রমিকদের সাময়িক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। অথচ বিস্ফোরক সংকটের বিষয়টি ৬ মাস আগেই সবাই জানতো। কারণ এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিস্ফোরক ছাড়া খনি চলবে না। তারপরও তা আমদানি নিয়ে গড়িমসি করা হয়েছে। নানাভাবে সময়ক্ষেপণ করে এ নিয়ে জটিলতা তৈরি করা হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, খনিতে শুধু বিস্ফোরক আমদানিতে অনিয়ম-দুর্নীতি নয়, শিলাখনির উন্নয়ন ঠিকাদার কোম্পানি নামনামের বিল ছাড়করণেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এনওসি না নিয়ে নামনামের পুরো ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বিল ছাড় করে দেওয়া হয়েছে। অথচ পর্ষদসভার সিদ্ধান্ত ছিল সর্বশেষ বিল ছাড়ের আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এনওসি লাগবে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে প্রথম পর্ষদসভার সিদ্ধান্ত গোপন করে পরে নতুন করে পর্ষদসভা করে পুরো বিল ছাড় করে দেয়া হয়। আর এমজিএমসিএলের কাছে যেসব যন্ত্রপাতি দেয়ার কথা ছিল, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে স্কিপ ইকুইপমেন্ট, কেইজ (খাঁচা) ইকুইপমেন্ট, মাইনিং যন্ত্রপাতি, হাউলেজ ইকুইপমেন্ট, ভেন্টিলেটর অ্যান্ড পাম্প সরঞ্জাম, ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড এক্সকাভেটিং ইকুইপমেন্ট, ডিজাইন অ্যান্ড সার্ভেইং ইকুইপমেন্ট এবং ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি অন্যতম। কিন্তু দেখা যায় প্রকল্প শেষে নামনাম ওসব মালামাল না দিলেও তাদের কোনো ধরনের জরিমানা করা হয়নি। উল্টো পুরো বিল ছাড় করে দেয়া হয়েছে।
এদিকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সংশ্লিষ্টদের মতে, যে কোনো প্রকল্প শেষ হলে ওই প্রকল্পের ঠিকাদার কোনো ক্ষয়ক্ষতি করেছে কি না এবং চুক্তি অনুযায়ী কোনো মালামাল কম দিয়েছে কিংবা কাজটি যথাযথভাবে শেষ করেছে কি না, তা যাচাই-বাছাই শেষে সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু অভিযোগ আছে, ওই প্রকল্পের ঠিকাদার চুক্তির অসংখ্য শর্ত ভঙ্গ করলেও তাকে নামকাওয়াস্তে জরিমানা করে পুরো বিল দেয়া হয়েছে। ঠিকাদারের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণ এবং যথাসময়ে সরকারকে না জানানোর কারণে খনিটি ২০০৭ সালে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার কথা থাকলেও প্রথমে সেটি ২০১০ ও পরে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়।
অন্যদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, অভ্যন্তরীণ বাজারে বছরে ৬ হাজার কোটি টাকার পাথরের চাহিদা থাকায় খনি উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠানের বরাবরই আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সাল পর্যন্ত সীমাহীন অব্যবস্থাপনা এবং লোকসানী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিণত হয়।
এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ও এমজিএমসিএলের পরিচালনা পর্ষদ চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান জানান, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেড সরবরাহ না থাকায় খনির কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বৈরুতে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেডের একটি গুদামে বিস্ফোরণের ঘটনায় বিশ্ববাজারে ওই কাঁচামালের সংকট দেখা দেয়। তার পাশাপাশি করোনা ভাইরাস ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ওই সংকট আরো তীব্র হয়। এ অবস্থায় একাধিক বার দরপত্র আহ্বান করেও ওই বিস্ফোরক পাওয়া যায়নি। তবে গত ১০ মার্চ ২৫০ মেট্রিক টনের একটি চালানের ওয়ার্ক অর্ডার দেয়া হয়েছে। থাইল্যান্ড থেকে ওই চালান আসবে। ইতোমধ্যে চালানটি জাহাজে তোলা হয়েছে।