November 18, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, October 28th, 2022, 12:31 pm

বিয়ানীবাজারের কোথাও দেখা যায়না প্রাচীন কৃষিযন্ত্র সেঁউতি

জেলা প্রতিনিধি, সিলেট:

সিলেটের বিয়ানীবাজার থেকে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাচীন কৃষিযন্ত্র দোন-সেঁউতি। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষতায় প্রতিটি শাখা আধুনিকায়নের ফলে যন্ত্র সভ্যতার জাঁতাকলে বিলুপ্ত এসব কৃষিযন্ত্র।
জানা যায়, আগেকার দিনে জমিতে পানি সেচের ব্যবস্থা জন্য ব্যবহার করা হতো টিন বা বাঁশের তৈরি সেঁউতি ও কাঠের দোন। স্থানীয়রা সেঁউতিকে পানি সেচের হেইত ও দোনকে দোংগা বলে জানেন। আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের ফলে দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে কাঠের দোন ও টিনের সেউতিসহ অন্যান্য চিরচেনা কৃষি উপকরণ সামগ্রী।
এক সময় গ্রামবাংলার কৃষিতে সেচযন্ত্র হিসেবে টিন বা বাঁশের তৈরি সেউতি ও কাঠের দোনের ব্যাপক চাহিদা ছিল। টিন বা বাঁশের চাটাই দিয়ে তৈরি সেঁউতি দিয়ে খাল বা নিচু জমি থেকে ওপরে পানি সিঞ্চন করা হতো। আর উঁচুনিচু জমিতে পানি সেচ দিতে সেচযন্ত্র কাঠের দোন ছিল অতুলনীয়। গ্রামবাংলার কৃষকেরা আদিকাল থেকেই চিন্তা চেতনার ফসল হিসেবে আবিষ্কার করেছিল এ কাঠের দোন। আম, কাঁঠাল জাতীয় গাছের কাঠের মাঝের অংশের কাঠ কেটে নিয়ে তার মাঝখানে কাঠের ড্রেন তৈরি করে পানি সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা করা সম্ভব। এতে করে পানি সেচ দিতে শ্রমিক ছাড়া কোনো প্রকার খরচ হয় না। তা ছাড়া এটি সহজে বহনীয়।
দোনে সেচ দেওয়া খুব মজার কাজ। একটি বাঁশের শক্ত খুঁটি মাটিতে পুঁতে তার সঙ্গে লম্বা অন্য একটি বাঁশ বেঁধে দিতে হয়। এক অংশে দোনের মাথা অন্য অংশে মাটির ভরা (ওজন) তুলে দিয়ে পানিতে চুবিয়ে তুললে এক সঙ্গে অনেক পানি উঠে আসে। এ ভাবে অনবরত পানি তুললে দ্রুত সেচের কাজ হয়।
সচেতন মহলের মতে, আধুনিক যন্ত্রসভ্যতা আমাদের জন্য আশীর্বাদ। কিন্তু গ্রামীণ ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক আমাদের পূর্বপুরুষের তৈরি কৃষি যন্ত্রপাতি সভ্য সমাজ ও অনাগত জাতির চেনার জন্য চালু রাখা প্রয়োজন।
উপজেলার খাসা গ্রামের ৮ম শ্রেণির ছাত্র মো. ফজলে নুর নেহাল বলে, আমি কখনো দোন বা সেঁউতি দেখেনি। তবে বই পড়ে জানতে পেরেছে এসব কৃষিকাজে ব্যবহার করা হয়।
কোনগ্রামের গ্রামের কৃষক মো. আবু ইউসুফ (৪৫) বলেন, আমি বাপ-দাদাদের দোন ও সেঁউতি ব্যবহার করে সেচকাজ করতে দেখেছি। এ জন্য শখের বশে একটি সেঁউতি তৈরি করে তা দিয়ে পানি সেচ দিয়েছি।
একই গ্রামের মো. আলমাছ (৬৮) বলেন, আগে আমরা দোন-সেঁউতি দিয়েই সেচকার্য চালাতাম। এখন আধুনিক অনেক যন্ত্রপাতি আসায় এগুলো আর ব্যবহার করা হয় না।