জেলা প্রতিনিধি, সিলেট:
টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেট বিয়ানীবাজার উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।সোমবার রাত পর্যন্ত উপজেলার নতুন ২৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে মোট ২২৪টি পরিবার। আশঙ্কাজনক হারে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আশ্রয়প্রার্থী পরিবারের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে।
উপজেলার সুরমা নদীতীরবর্তী আলীনগর ও চারখাই ইউনিয়ন এবং কুশিয়ারা নদীতীরবর্তী দুবাগ, শেওলা, কুড়ারবাজার, মাথিউরা এবং সোনাই নদীতীরবর্তী তিলপাড়া, মোল্লাপুর, লাউতা ও মুড়িয়া ইউনিয়নের ৯০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।পৌরসভার ও কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে বন্যার্ত এলাকাসহ আশ্রয়ণে অবস্থান করা বানভাসি মানুষের মাঝে ত্রাণ সহায়তা প্রদান অব্যাহত রেখেছে উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব, ইউএনও আশিক নূর, ভাইস চেয়ারম্যান জামাল হোসেন ও রুকসানা বেগম লিমা উপস্থিত ছিলেন।
বিয়ানীবাজার থানা পুলিশের পক্ষে রান্না করা খাবার নিয়ে ও ত্রাণ আশ্রয়স্থানে যান অফিসার ইনচার্জ হিল্লোল রায়, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মেহেদী হাসানসহ পুলিশ সদস্যরা। তারা দুবাগ এলাকায় গিয়ে খাদ্য সামগ্রী ত্রাণ বিতরণ করেন।
এসব এলাকার প্রধান সড়কসহ উপজেলা ও গ্রামীণ সড়কের ৯০ ভাগ তলিয়ে গেছে। সোমবার সকাল থেকে কুশিয়ারা নদী শেওলা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাত পর্যন্ত উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের তিনটি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৬ পরিবার, চারখাইয়ে চারটি আশ্রয়কেন্দ্রে ৪৩ পরিবার, দুবাগে চারটি আশ্রয়কেন্দ্রে ৩৩ পরিবার, শেওলায় একটি আশ্রয়কেন্দ্রে ছয় পরিবার, কুড়ারবাজারে দুটি কেন্দ্রে ৩০ পরিবার, তিলপাড়ায় তিনটি আশ্রয়কেন্দ্রে ১১ পরিবার, মুড়িয়ায় দুটি আশ্রয়কেন্দ্রে ৩৭ এবং পৌরসভায় একটি আশ্রয়কেন্দ্রে ৪৫টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।
বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনা করে উপজেলা প্রশাসন নতুন করে আরো ৪০ মেট্রিক টন চাল, ১০ লাখ টাকা এবং ১০ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার সরবরাহ করার আবেদন করেছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এদিকে শেওলা ইউনিয়নের কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রে বিয়ানীবাজার থানার পুলিশের পক্ষ থেকে খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
বন্যাকবলিত মাথিউরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমান উদ্দিন বলেন, সোমবার কুশিয়ারা নদীর পানি আরো বেড়েছে। আমার ইউনিয়নের সকল রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। ইউনিয়নের ৯০ শতাংশ এলাকা পানির নিচে। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে, তবে লোকজন তাদের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছে। আমরা জেলা প্রশাসন থেকে প্রেরিত ত্রাণ বিতরণ করছি। প্রবাসীরা ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার জন্য যোগাযোগ করছেন। আজ-কালের মধ্যে তাদের সহায়তা আমাদের হাতে এসে পৌঁছবে।
বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশিক নূর বলেন, উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকার লোকজনের দুর্ভোগ বাড়ছে। আশ্রয়কেন্দ্রে ভিড় বাড়ছে। আমরা জেলা প্রশাসন থেকে শুকনা খাবার কেনার জন্য আরো তিন লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছি, যা পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হবে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি