নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশে কর্মরত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্থায়ী ক্যাম্পাস নিয়ে কঠোর হচ্ছে সরকার। যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের ১২ বছর পর এখনো স্থায়ী ক্যাম্পাসে যায়নি তাদের ক্যাটাগরি নির্ণয় করা হবে। অবশ্য যৌক্তিক কারণে যেসব প্রতিষ্ঠান স্থানান্তর হতে পারেনি শর্তভিত্তিক তাদের সময় বাড়ানো হতে পারে। তবে বর্ধিত সময়ের মধ্যেও কেউ শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে ওই প্রতিষ্ঠানের পাঠদান অনুমোদন বাতিল করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) অস্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনা করায় ২৫ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে শোকজ (কারণ দর্শানো নোটিশ) দিয়েছে। মূলত ভাড়াবাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থী ভর্তি ও ক্লাস করানোর কারণেই ওসব প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দেয়া হয়। আর যেসব প্রতিষ্ঠান স্থায়ী ক্যাম্পাসে গেলেও আগের ঠিকানায় (অস্থায়ী) নানা নামে ক্যাম্পাস ধরে রেখেছে সেগুলোর বিষয়ও নোটিশে উল্লেখ করা হয়। তাছাড়া স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হলেও স্থায়ী সমাধানের জন্য আবেদন করেনি এমন কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে শোকজ করেছে ইউজিসি। তবে শোকজের জবাবে করোনা পরিস্থিতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় সব কার্যক্রম স্থগিত ছিল। স্থায়ী ক্যাম্পাসের নির্মাণকাজ শেষ করে স্থানান্তরের জন্য আরো সময় দেয়ার দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সূত্র জানায়, বিগত ১৯৯২ সালে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যুগের সূচনা। সরকার এখন পর্যন্ত দেশে ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমতি দিয়েছে। তার মধ্যে বর্তমানে ৯৯টি চালু আছে। ২০১০ সালের আগেই দেশে ৫২টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। তার মধ্যে উচ্চ আদালতে মামলার রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয় সরকার। অবশিষ্ট ৫১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬টি স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরু করেছে। বাকিদের মধ্যে কেউ কেউ আংশিক ক্যাম্পাস নির্মাণ করেছে। আর জমি কিনেছে কিছু প্রতিষ্ঠান। আবার কিছু বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ধরনের পদক্ষেপই নেয়নি। অথচ স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে ২০১০ সালের পর থেকে সরকার ওসব প্রতিষ্ঠানকে কয়েক দফা আলটিমেটাম দিয়েছে। সবশেষ ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় বেঁধে দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তখন বলা হয়েছিল, যেসব বিশ্ববিদ্যালয় এ নির্দেশ পালন করতে পারবে না তাদের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে। সে অনুযায়ী ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ থাকার কথা ছিল।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে শুধু স্থায়ী ক্যাম্পাসই নয়, যে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পাওয়া উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ নেই তাদের বিষয়েও কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। যে সব প্রতিষ্ঠানে ওই দুই পদ শূন্য তাদের সতর্ক করা হবে। এসব পদে নিয়োগ দিতে তালিকা চাওয়া হবে। যারা তালিকা পাঠাবে না তাদের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে।
এদিকে এ বিষয়ে ইউজিসি সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ জানান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরে ইউজিসি কঠোর অবস্থানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১২ বছর পূর্ণ হলেও যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এখনো স্থায়ী ক্যাম্পাসে যায়নি তাদের ক্যাটাগরিভিত্তিক তালিকা তৈরি করা হবে। করোনার কারণে অনেকে পিছিয়ে গেলেও তাদের কার কী অবস্থা সেটি নির্ণয় করে ফের একটি বৈঠক করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে ইউজিসির পরিচালক (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) ওমর ফারুক জানান, অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের ১২ বছর পার হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হওয়ার আইন রয়েছে। ওই আইন অনেকে মানছে না। তাই স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ ও স্থানান্তর বিষয়ে কার অবস্থা কী পর্যায়ে রয়েছে তাদের অবস্থান নির্ণয়ে স্তরভিত্তিক তালিকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী কারা কবে স্থানান্তর হতে পারবে তা জানতে চাওয়া হবে। ওই অনুযায়ী তাদের সময় দেয়া হতে পারে। আর তাতেও ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ