March 29, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, May 13th, 2022, 9:35 pm

বেড়েই চলেছে ইআরএল প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয়

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বেড়েই চলেছে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয়। বিগত ২০১৫ সালে জ্বালানি তেল পরিশোধন, মজুত ও সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়াতে একটি প্রকল্প নেয়া হয়। কিন্তু দেশের একমাত্র সরকারি তেল শোধনাগার প্রতিষ্ঠানটির ওই কাজ গত সাত বছরেও শেষ হয়নি। ইতোমধ্যে কয়েক দফায় সংশোধনের কারণে ওই প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে গেছে। এখন তৃতীয় দফায় প্রকল্পটির ব্যয় ও সময় ফের বাড়াতে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তাতে প্রকল্পের মোট ব্যয় বাড়িয়ে ৭ হাজার ১২৫ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। যা প্রথম অনুমোদন হওয়া মূল প্রকল্প ব্যয়ের চেয়ে ২ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বেশি। পরিকল্পনা কমিশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করা এবং পরিশোধিত তেল মজুত ও সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন নামে একটি প্রকল্প নেয়া হয়। ইতোমধ্যে দুই দফায় প্রকল্পটির ব্যয় ১ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। বিগত ২০১৫ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন হওয়ার সময় প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ৪ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা। ওই বছরই শুরু হয়ে ২০১৮ সালে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। নির্ধারিত ৩ বছরে শেষ না হওয়ায় ২০১৮ সালে প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে তার মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়। কিন্তু বর্ধিত মেয়াদেও কাজ শেষ না হওয়ায় ২০১৯ সালে দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। আর ব্যয় ধরা হয় ৬ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যেও কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। এবার তৃতীয় সংশোধনীর প্রস্তাবে আরো এক বছর সময় চাওয়া হয়েছে। প্রস্তাবনা অনুসারে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ চলবে।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্প সংশোধন নিরুৎসাহিত করার নির্দেশনা আছে। কিন্তু তারপরও ইআরএলের প্রকল্পের মেয়াদ তৃতীয় দফায় সংশোধনের সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। আর এ দফা অনুমোদন পেলে ৩ বছরের প্রকল্পে সময় লাগছে ৮ বছর। প্রকল্পের আওতায় কুতুবদিয়া চ্যানেল ও মাতারবাড়ীতে ১৪৬ কিলোমিটার অফশোর এবং ৭৪ কিলোমিটার অনশোর পাইপলাইন নির্মাণ করার কথা রয়েছে। আর মহেশখালীতে ৬০ হাজার ঘনমিটার ক্ষমতার ৩টি অপরিশোধিত তেল সংরক্ষণাগার এবং ৩৬ হাজার ঘনমিটার সম্পন্ন ৩টি ডিজেল স্টোরেজ ফার্ম নির্মাণও এর অন্যতম কাজ। প্রকল্পের জন্য ৪ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকার ঋণ সহায়তা দিয়েছে চায়না এক্সিম ব্যাংক এবং সরকার দিয়েছে ৬০১ কোটি টাকা। আর প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) বাকি ১ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকার যোগান দেবে।
সূত্র আরো জানায়, বৈশ্বিক যে কোনো অস্থিরতায় জ¦ালানি তেলের দরে অস্বাভাবিক ওঠানামা দেখা যায়। আর দেশের মূল্যস্ফীতিতেও তার প্রভাব পড়ে। এমন পরিস্থিতি এড়াতে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় জ¦ালানি নিরাপত্তায় গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাতে মজুত বৃদ্ধির মাধ্যমে সব ধরনের জ¦ালানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। নিরাপদ মজুতের মাধ্যমে সরকারের স্বল্প ব্যয়ে জ¦ালানি সরবরাহের লক্ষ্য রয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন ঠিক সময়ে না হওয়ায় ওই লক্ষ্য অর্জন পিছিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে ইস্টার্ন রিফাইনারি কর্তৃপক্ষ বলেছে, প্রকল্পের জার্মানভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আইএলএফ কনসালটিং ইঞ্জিনিয়ার্সের সঙ্গে সম্পাদিত মূল চুক্তির কর্মপরিধির বাইরে কুতুবদিয়া চ্যানেল ও মাতারবাড়ী অ্যাপ্রোচ চ্যানেল অংশের কাজের নকশা পর্যালোচনা করতে হবে। চুক্তির অতিরিক্ত কাজ সংযোজন করতে হচ্ছে। তাছাড়া ডলারের বিপরীতে টাকার মান কিছুটা কমে যাওয়ার কারণেও প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে।
অন্যদিকে একনেকে অনুমোদনের সুপারিশের আগে প্রকল্পটি যাচাই-বাছাই করেছে পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট শিল্প শক্তি বিভাগ। ওই বিভাগের সদস্য সরকারের সচিব এ কে এম ফজলুল হক জানান, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ ধরনের প্রকল্প একেবারে নতুন। এ কারণে কাজ শুরুর পর বাস্তবিক এবং খুব যুক্তিসংগত কারণেই কিছু পরিবর্তন আনতে হয়েছে। অতিরিক্ত কিছু নতুন কাজ সংযোজন করতে হয়েছে। তাছাড়া মুদ্রার বিনিময় হারের পরিবর্তনের কারণেও ব্যয় কিছুটা বেড়েছে। আর রাষ্ট্রীয় পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বাড়তি ব্যয় করছে।