April 25, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, January 24th, 2023, 9:36 pm

বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার বন্ধে কঠোর হচ্ছে পুলিশ

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সারাদেশে বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার বন্ধে কঠোর হচ্ছে পুলিশ। কারণ খুন, ছিনতাই, ডাকাতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিসহ অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারের অভিযোগ মিলছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরে গত ১০ বছরে সারাদেশ থেকে বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ৫ হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে। ওই সময়ে ৫ শতাধিক বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রধারীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ২০২১ সালে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার বন্ধে দেশের সকল আগ্নেয়াস্ত্রের ডাটাবেজন তৈরির কাজ হাতে নিয়েছিল। অনেক প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীই বৈধ অস্ত্রের ব্যবহারে নীতিমালার তোয়াক্কা করছে না। বরং প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা, আধিপত্য বিস্তার, পূর্বশত্রুতা, জমিজমার বিরোধ, ছিনতাই, ডাকাতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিসহ অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারের অভিযোগ বাড়ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, ঠিকাদারসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার যেসব মানুষের আত্মরক্ষার্থে যে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে তা অপব্যবহারের তথ্য পাচ্ছে। এমনকি বৈধ অস্ত্র অবৈধভাবে ভাড়া দেয়ার অভিযোগও রয়েছে। তাছাড়া বৈধ অস্ত্রের মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখানো, চাঁদাবাজি, রাজনৈতিক সংঘর্ষ এবং খুনেও ব্যবহার হচ্ছে। যদিও বৈধ অস্ত্র ব্যবহারের বিভিন্ন নিয়ম রয়েছে।
সূত্র জানায়, সারা দেশে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৪ হাজার ১০৪টি অস্ত্রের লাইসেন্সের তথ্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। তার মধ্যে ব্যক্তির নামে ৪০ হাজার ৭৭৭টি অস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে। আর আর্থিকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বাকি ৩ হাজার ৩২৭টি অস্ত্র রয়েছে। ওসব অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে একনলা ও দোনলা বন্দুক, শটগান, পিস্তল, রিভলবার ও রাইফেল। তবে ধারণা করা হয় সারাদেশে বৈধ অস্ত্র রয়েছে আরো অনেক বেশি। ওসব অস্ত্রের লাইসেন্স নেয়ার তালিকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী রয়েছে। এমনকি একজনের নামে একাধিক অস্ত্রের লাইসেন্সও আছে। আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য কিছু মানদ- রয়েছে। সেগুলো পূরণ হলেই একজন নাগরিক আগ্নেয়াস্ত্রের জন্য আবেদন করতে পারে। আবেদনকারীর জীবনের বাস্তব ঝুঁকি থাকলে ‘শর্ট ব্যারেল’ আগ্নেয়াস্ত্রের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর বয়স ন্যূনতম ৩০ বছর, ‘লং ব্যারেল’ আগ্নেয়াস্ত্রের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ২৫ বছর থেকে ৭০ বছরের নিচে হতে হবে। আবেদনকারীকে অবশ্যই আয়করদাতা হতে হবে এবং বছরে ন্যূনতম ৩ লাখ টাকা আয়কর দিতে হবে। অনুমতি পেলে আবেদনকারী অস্ত্র আমদানি করে আনতে পারে অথবা দেশীয় বৈধ কোনো ডিলারের কাছ থেকে অস্ত্র কিনতে পারবে। কোনো ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুটি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবে। অস্ত্রের লাইসেন্স এবং এর কার্যক্রম আগে হাতে-কলমে নিবন্ধন করা হতো। ফলে রাষ্ট্রীয় প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিক সঠিক তথ্য পাওয়া যেত না। কিন্তু বর্তমানে ডিজিটাল তথ্যভান্ডার চালু হওয়ায় কেউ বৈধ অস্ত্র অবৈধভাবে বিক্রি করা সম্ভব নয়। আবার কেউ অবৈধ অস্ত্রকে বৈধ বলে দাবি করলে তাও যাচাই করা সহজ। জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ অনেক সময় বিশেষ প্রয়োজনে সরকার সংশ্লিষ্ট থানায় বৈধ লাইসেন্সধারীদের আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়। সেক্ষেত্রে অস্ত্র জমা পড়ার তথ্যও দ্রুত জানা যাবে।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে দেশে লাইসেন্স বা অনুমোদন প্রাপ্ত প্রায় দুই লাখ বৈধ অস্ত্র রয়েছে। তবে কোন ডিলারের কাছেই ওসব বৈধ অস্ত্রের মালিকদের পরিচয় সুনির্দিষ্টভাবে সংরক্ষিত নেই। এমন পরিস্থিতিতে অস্ত্রের ডাটা তৈরিতে সিআইডি দেশের ৬৪ জেলা থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে। সেজন্য দেশের সব জেলার সিআইডির বিদ্যমান অফিসে বৈধ অস্ত্রের মালিকরা অস্ত্রের নমুনা দিতে পারবে। প্রতিটি আগ্নেয়াস্ত্রেরই কিছু স্বতন্ত্র কোড আছে। তাতেই অস্ত্রের ধরন বোঝা যায়। নতুন করে কোনো অস্ত্র কিনলে এখন থেকে সঙ্গে সঙ্গে ওই অস্ত্রের কোড সিআইডিকে দেয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের জানানো হয়েছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন জানান, মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের লাইসেন্সকৃত অস্ত্রের অপব্যবহার খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর কোন সন্ত্রাসী বা অপরাধী বৈধ অস্ত্র পেয়েছেন কিনা তাও পুলিশ তদন্ত করছে। পুলিশ লাইসেন্সকৃত অস্ত্র নিয়ে চাঁদাবাজি ও প্রভাববিস্তারকারীদের তথ্যও সংগ্রহ করছে। কারো বিরুদ্ধে বৈধ অস্ত্রের অপব্যবহারের তথ্য পাওয়া গেলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের পাশাপাশি অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।