নিজস্ব প্রতিবেদক:
এবার বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারও এ বছর বোরোর উৎপাদন বাড়াতে আগ্রহী। সেজন্যে কৃষি মন্ত্রণালয় বোরো ধানের আবাদ ও উৎপাদন বাড়ানোর জন্য চলতি মৌসুমে চার ক্যাটাগরিতে প্রায় ১৭০ কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছে। আর এ প্রণোদনার আওতায় সারা দেশের ২৭ লাখ কৃষক বিনামূল্যে বীজ ও সার পেয়েছে। তবে জানুয়ারি মাসে ঘন কুয়াশার কারণে উত্তরাঞ্চলের কিছু এলাকায় বোরো ধানের বীজতলায় সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু আবহাওয়ায় পরিবর্তন ঘটায় বড় সমস্যা কেটে চাষিদের আশঙ্কাও দূর হয়েছে। সারা দেশে তীব্র শীত ও কুয়াশায় চাষির বীজতলার খুব একটা ক্ষতি হয়নি। এ বছর সারা দেশে ৪৯ লাখ ৭৭ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে ওই জমি থেকে ২ কোটি ১৫ লাখ টন বোরো উৎপাদন হবে। যা অন্যান্য বছরের থেকে সর্বোচ্চ। কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এখন বোরো ধান চাষের ভরা মৌসুম চলছে। কোথাও বীজতল তৈরি হচ্ছে, কোথাও চারা তৈরি করে রোপণের অপেক্ষা করছে কৃষক। আর বাজারে ধানের দাম বেশি থাকায় কৃষকদের মধ্যেও বোরো আবাদে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। যদিও সেচ, সার বীজ কীটনাশকসহ সব কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪৯ লাখ ৫১ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের উৎপাদন হয়েছে ২ কোটি ৯ লাখ টন। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ২ কোটি ১৫ লাখ টন। তবে আশা করা হচ্ছে এবার উৎপাদন এর চেয়ে বেশি হবে।
সূত্র জানায়, দেশে এরইমধ্যে ২ লাখ ৭২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোর বীজতলা করা হয়েছে। যেখানে এ বছর বীজতলা করার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৪২ হাজার হেক্টর। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবছর কৃষক ৩০ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে বোরোর বীজতলা করেছে। বীজতলায় অগ্রগতি প্রায় ১১২ শতাংশ। তাতেই ধারণা করা যায় এ বছর বোরো আবাদের প্রতি কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে। আর বেশি জমিতে বোরো আবাদের জন্যই বেশি বীজতলা তৈরি হয়েছে। এই বীজ দিয়ে বোরো আবাদ করলে এ বছর বোরো আবাদে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা না দিলে চলতি মৌসুমে বোরোর উৎপাদনও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। অতীতে বন্যায় বোরা ফসল মার খাওয়ার অভিজ্ঞতায় কৃষকরা এ বছর আগেভাগেই বোরো আবাদ শুরু করেছে। ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ৩৪ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। যেখানে গত বছর (২০২২) এই সময়ে বোরো আবাদের পরিমাণ ছিল ২৭ লাখ হেক্টর। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে স্থানীয় জাতের বোরো। এই ধান আবাদের অগ্রগতি ৮৮ শতাংশেরও বেশি। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে হাইব্রিড। এ বছর ১৩ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ইতোমধ্যে আবাদ হয়েছে ১০ লাখ ৬৩ হাজার হেক্টর। অগ্রগতির হার ৮০ শতাংশ। আর এখন পর্যন্ত উচ্চ ফলনশীল ধানের আবাদ হয়েছে ২৩ লাখ ২০ হাজার হেক্টর। গত বছরের তুলনায় অগ্রগতির এই হার ৬৩ শতাংশ। সব মিলিয়ে এ বছর ৬৮ শতাংশের বেশি বোরোর আবাদের অগ্রগতি হয়েছে। আশা করা হচ্ছে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই এ বছর বোরো আবাদ পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে।
সূত্র আরো জানায়, দেশের হাওড় অঞ্চল হচ্ছে বোরো আবাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দেশের সাতটি জেলা নিয়ে হাওড় অঞ্চল গঠিত। এ বছর হাওড় ও হাওড়ের বাইরের অঞ্চলে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ৯ লাখ হেক্টর। ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৯ লাখ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ। তবে এ বছর ইতোমধ্যে হাওড় অঞ্চলে বোরো আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। কৃষক এখন হাওড় অঞ্চলে ধান গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত। কৃষি মন্ত্রণালয় যে কোনো উপায়ে এ বছর বোরোর উৎপাদন বাড়াতে চায়। ওই কারণে মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত বাজেট কৃষি পুনর্বাসন-সহায়তা খাত থেকে বড় প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। মাঠপর্যায়ে এ বছর আগেভাগেই ওসব প্রণোদনা বিতরণ কার্যক্রম শেষ করা হয়েছে। যাতে কৃষক দ্রুত বোরো আবাদ শেষ করতে পারে।
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ধানের দাম, উন্নত প্রযুক্তি ও বীজ এবং সরকারের বড় প্রণোদনার কারণে কৃষক বোরোর প্রতি আগ্রহী হয়েছে। তারা এ বছর আগ্রহ নিয়ে বোরো আবাদ করছে। তাদের মধ্যে যে অনীহা অন্যান্য বছর তৈরি হতো সেটা একদমই নেই। বরং কৃষকের আগ্রহ দেখে মনে হচ্ছে, এবছর বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িযে যাবে। আর কোন দুর্যোগ না হলে আশা করা যায়, চলতি বছর ২ কোটি ১৫ থেকে ২০ লাখ টন বোরো উৎপাদন হবে, যা অন্যান্য বছরের থেকে সর্বোচ্চ।
আরও পড়ুন
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
কমতে শুরু করেছে কুড়িগ্রামের নদীর পানি, ভাঙন আতঙ্কে মানুষ
দিনাজপুরে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় নিহত ২