নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশে চালের যথেষ্ট উৎপাদন হলেও বাজার অস্থির। মূলত চালের বাজার ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি। তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। ব্যবসায়ীরা দুর্ভিক্ষের আশঙ্কায় বিপুল অবৈধ মজুত গড়ে তুলছে। সেজন্য তারা বেশি দামেও ধান কিনছে। এমনকি অনেকে ব্যবসায়ী ঋণ করেও ধান কিনছে। পাশাপাশি এ বছর কৃষকরাও সব ধান বিক্রি করছে না। প্রয়োজনমাফিক বিক্রি করে বাকি ধান তারা মজুত করছে। আর স্বাভাবিকভাবেই ব্যবসায়ীরা বেশি দামে কেনা ধান-চাল করে কম দামে বিক্রি করবে না। ফলশ্রুতিতে বাজারে বাড়ছে চালের দাম। তাছাড়া ভোক্তারাও প্রয়োজনের তুলনায় বেশি চাল কিনে মজুত করছে। আর ত্রিমুখী মজুতে চালের বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। খাদ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ভরা মৌসুমে দুর্ভিক্ষের আতঙ্কে চালের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। গত এক মাসে মোটা চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৪ থেকে ৬ টাকা। একই সময়ের ব্যবধানে আটার দাম কেজিতে প্রায় ১০ টাকা বেড়েছে। ভরা মৌসুমে চালের দাম বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মনিটরিং টিম খাদ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে। আর খাদ্য মন্ত্রণালয় জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) চালের দাম বৃদ্ধির কারণ কী তা খতিয়ে দেখতে বলেছে। কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, সরকারি গুদামে বর্তমানে মজুত রয়েছে ১২ লাখ ৯৪ হাজার ৮৪৯ মেট্রিক টন চাল ও ২ লাখ ৯৮ হাজার ২৬৩ মেট্রিক টন গম। চাল ও গমের মোট মজুত ১৫ লাখ ৯৪ হাজার ৯০২ মেট্রিক টন। ওই মজুত থেকে আপৎকালীন যে কোনো পরিস্থিতিতে সরকার রেশনিং করবে। তাছাড়া সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রি, ওএমএস, বিভিন্ন সংস্থার রেশনিংও ওই মজুত থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। গত বোরো ও চলতি আমন মৌসুমে দেশে চালের যথেষ্ট উৎপাদন হয়েছে। আমনের ফলন হয়েছে ধারণার চেয়ে অনেক বেশি। চালে ভরপুর বাজার। প্রতি বছর দেশে প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হচ্ছে। আবার সরকার আপৎকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিদেশ থেকে চাল ও গম আমদানি করছে। তারপরও অদৃশ্য কারণে চালের দাম বাড়ছে। চলতি বছর ২ লাখ ৬০ হাজার ৪০২ মেট্রিক টন চাল বিদেশ থেকে সরকারি পর্যায়ে আমদানি হয়েছে। গম আমদানি হয়েছে ৪ লাখ ২২ হাজার ৮৮৬ মেট্রিক টন। তাছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে চাল আমদানি হয়েছে ৩ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন। আর গম আমদানি হয়েছে ৬ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন। চলতি মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত চাল আমদানির অনুমতি রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, সব ধরণের চালের দাম বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মোটা চালের দাম। বর্তমানে খুচরা বাজারে হবি-২৮ মোটা চাল ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা এক মাস আগেও ৫৮ টাকা ছিলো। পাইজাম বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকা আর এক মাস আগে ছিল ৫৪ টাকা। একই সঙ্গে বাড়ছে আটার দাম। প্রতি কেজি আটা বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা। খুচরা বিক্রিতাদের দাবি তারা বেশি দামে কেনে বলে বেশি দামে বিক্রি করছে। কিন্তু পাইকারী ব্যবসায়ীদের মতে, গত দুই মাসে পাইকারি বাজারে চালের দাম এক টাকাও বাড়েনি। বরং বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। বরং ধানের দাম বেড়েছে। সরকারি হিসাবে বর্তমানে প্রতি কেজি মোটা চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা হচ্ছে, যা গত বছর একই সময় বিক্রি হয়েছে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। মাঝারি চাল প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৪৮ থেকে ৫৫ টাকা। সরু (নাজির) প্রতি কেজি ৭৪ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর এই সময় ৬৪ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। সরু (মিনিকেট) প্রতি কেজি চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭৫ টাকা, যা গত বছর এই সময়ে বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬৩ টাকা। প্যাকেট আটা দুই কেজির প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ১৪০, যা গত বছর একই সময়ে বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকা। খোলা আটা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬২ টাকা, যা গত বছর একই সময়ে বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা। সরকারি হিসাব মতে গত বছরের তুলনায় এ বছর মোটা চাল কেজিতে বেড়েছে ২ টাকা ৫০ পয়সা। মাঝারি মানের চাল কেজিতে বেড়েছে ৬ টাকা আর সব ধরনের সরুচাল কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। তাছাড়া প্যাকেট আটা কেজিতে বেড়েছে ৩০ টাকা এবং খোলা আটা কেজিতে বেড়েছে ২৫ টাকা। তবে সরকারি হিসাবের সঙ্গে বাজারে বিক্রয় মূল্যের বেশ অমিল রয়েছে। মোটা চাল ৫৮ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭২ টাকা দরে। সরুচাল (মিনিকেট-নাজিরশাইল) বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে। আটা ৭২ থেকে ৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে এ বিষয়ে খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেন (এনডিস) জানান, ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ছে। চালের দাম বাড়ার কারণ হলো প্রথম উৎপাদন খরচ বেড়েছে, শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে এবং জ¦ালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে পরিবহণ ব্যয়ও বেড়েছে। ওসব কারণে চালের দাম বাড়ছে। তাছাড়া অন্য কোনো কারণে চালের দাম বাড়ছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মনিটরিং টিম চালের দাম বাড়ার বিষয়ে খোঁজখবর নিতে বলেছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) বিষয়টি দেখভাল করতে বলা হয়েছে। তাছাড়া জেলা খাদ্য কর্মকর্তাদের (ডিসি-ফুড) মাধ্যমেও খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে কিনা তা দেখতে ডিসিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। খুব শিগগিরই দেশের খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে একটি আনুষ্ঠানিক সভা করা হবে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ