March 29, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, February 3rd, 2023, 9:50 pm

ব্যাপক চাহিদা বাড়ায় ব্যাংকগুলো লকার সেবার পরিধি বাড়াচ্ছে

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশে কর্মরত ব্যাংকগুলোতে ব্যাপক হারে বাড়ছে লকারের চাহিদা। ফলে বাধ্য ব্যাংকগুলোও লকার সেবা পরিধি বাড়াচ্ছে। মূলত মূল্যবান দলিল, কাগজপত্র, অলংকারসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংরক্ষণের জন্যই ব্যাংকের লকার গ্রাহকরা ভাড়া নেয়। এতদিন ছোট ও মাঝারি লকারের চাহিদা ছিল বেশি থাকলেও এখন বড় লকারের চাহিদা বাড়ছে। আর বর্ধিত এ চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের প্রয়োজনমতো লকার সরবরাহ করতে পারছে না। এমন অবস্থায় কোনো কোনো ব্যাংক নতুন করে লকারের সংখ্যা বাড়াচ্ছে। আবার কোনো কোনো ব্যাংক ছোট লকার কেটে বড় লকারেও রূপান্তর করছে। রাজধানীর গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, উত্তরা, বসুন্ধরা, মতিঝিলসহ রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় ব্যাংকের শাখাগুলোয় বড় লকারের চাহিদা বাড়ছে। দেশের বিভাগীয় ও গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোয়ও একই পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। আর পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যাংকগুলো লকার সেবার পরিধি বাড়ানোর পাশাপাশি সেবাটির চার্জ বা ফিও বাড়ানো হচ্ছে। ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ব্যাংক থেকে ভাড়া নেয়া লকারে গ্রাহকরা কী রাখছে তা ব্যাংকের পক্ষে দেখা বা যাচাইয়ের সুযোগ নেই। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি লকারের চাবির দুটি অংশ থাকে। একটি অংশ থাকে গ্রাহকের কাছে, বাকি অংশ ব্যাংকে থাকে। লকার খুলতে হলে চাবির দুটি অংশেরই প্রয়োজন হয়। গ্রাহক ব্যাংকে গেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা চাবির দুটি অংশের সমন্বয়ে লকারের তালা খুলে দেন। গ্রাহক লকার ব্যবহারের সময় সেখানে কারো উপস্থিত থাকার সুযোগ থাকে না। এমন পরিস্থিতিতে অনেক গ্রাহকই সেবাটির অপব্যবহার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। লকারে নগদ ডলারসহ বিদেশী মুদ্রা বেশি রাখা হচ্ছে। দেশে ডলার সংকট তীব্র হয়ে ওঠার পেছনে লকারে বিদেশী মুদ্রা রাখার প্রবণতাও ভূমিকা রাখছে। মূলত ডলার, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র রাখার কারণেই ব্যাংকগুলোয় বড় লকারের চাহিদা বাড়ছে।
সূত্র জানায়, দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রায় সবগুলোরই লকার সেবা রয়েছে। তবে যেসব ব্যাংকের রিটেইল সেবার বিস্তৃতি ও গ্রাহকের সংখ্যা বেশি, লকার সেবার দিক থেকে সেগুলো বেশ এগিয়ে রয়েছে। দেশের ব্যাংকগুলো স্বাধীনতার পর থেকেই গ্রাহকদের লকার সেবা দিয়ে আসছে। তারর মধ্যে গত দুই দশকে সেবাটির সবচেয়ে বেশি বিস্তার ঘটেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ৫৪টি শাখায় লকার সেবা রয়েছে। ব্যাংকটির ছোট লকারের বার্ষিক চার্জ ২ হাজার টাকা। মাঝারি ও বড় লকারের চার্জ যথাক্রমে ২ হাজার ৫০০ ও ৩ হাজার টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত অন্য ব্যাংকগুলোও প্রায় একই চার্জে গ্রাহকদের লকার সেবা দিচ্ছে। তবে বেসরকারি ও বিদেশী খাতের ব্যাংকগুলোর লকার চার্জ অনেক বেশি। আইএফআইসি ব্যাংক ছোট লকারের জন্য ৫ হাজার, মাঝারির জন্য ১০ হাজার ও বড় লকারের জন্য ১২ হাজার টাকা বার্ষিক চার্জ নিচ্ছে। বেসরকারি খাতের এ ব্যাংকটির ঢাকায় ১৪টিসহ সারা দেশের মোট ৪১টি শাখায় লকার সেবা রয়েছে। তাছাড়া বেসরকারি খাতের দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেড গ্রাহকদের লকার সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে। ব্যাংকটির ৩৬টি শাখায় লকার সেবা পাওয়া যাচ্ছে। ব্যাংকটির প্রায় ৪ হাজার লকার রয়েছে। তার মধ্যে ১ হাজার ৭২৪টি লকার ছোট। সেগুলোর মধ্যে বর্তমানে ৫৭৩টি খালি রয়েছে। ছোট লকার খালি থাকলেও ব্যাংকটির বড় লকারের চাহিদা অনেক বেশি। সিটি ব্যাংকের ৯২৩টি বড় লকারের মধ্যে এখন ৭৫৭টিই ভাড়ায় রয়েছে। ছোট লকারের জন্য ৫ হাজার, মাঝারির জন্য ৭ হাজার এবং বড় লকারের জন্য ৯ হাজার টাকা চার্জ আদায় করছে সিটি ব্যাংক। গত দুই-তিন বছরে বড় লকারের চাহিদা বাড়ছে। বিশেষ করে ঢাকার আবাসিক এলাকাগুলোর শাখায় বড় লকারের চাহিদা বেশি। চাহিদা বাড়ার কারণে বড় লকারের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। অন্য ব্যাংকগুলোও বড় লকার বাড়াচ্ছে।
এদিকে ব্যাংকের লকার সেবা দিলেও এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে কোনো তথ্য নেই। ব্যাংকগুলোর অন্য সব সম্পদ ও দায় নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পরিদর্শন চালানো হলেও লকার বিষয়ে কোনো তদারকি করা হয় না। দেশে ব্যাংকগুলোর কতটি লকার রয়েছে কিংবা ঠিক কতজন গ্রাহক লকার সেবা নিচ্ছে, সে বিষয়েও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে কোনো তথ্য নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনের ওপর ভর করে দেশে লকার সেবাটি পরিচালিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংক কর্মকর্তারা লকার সেবা বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, লকার সেবাকে আরো বেশি নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা দরকার। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি বাড়ানো হলে ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি গ্রাহকরাও লকারের বিষয়ে সতর্ক হবে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক জানান, লকার সেবার যাবতীয় দায়দায়িত্ব গ্রাহকের। গ্রাহক যখন লকার খুলবেন তখন সেখানে ব্যাংকের কেউ উপস্থিত থাকার সুযোগ নেই। এখন কোনো গ্রাহক যদি ডলারসহ আইন বিরুদ্ধ কোনো সরঞ্জাম লকারে রাখেন, সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কিংবা কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও কিছু করার নেই। লকারে কী আছে তা অনুসন্ধান করতে চাইলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আদালতের অনুমতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের উপস্থিতিতে লকার খুলতে পারে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডেরও (এনবিআর) এ ক্ষমতা রয়েছে।