April 26, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, November 9th, 2021, 4:50 am

ব্যয় ও ভোগান্তির দ্বৈত খপ্পরে ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীরা

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশের ২০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার প্রথম গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। শিক্ষার্থীদের যাতায়াত, থাকা নিয়ে অনিশ্চয়তা, অর্থ ব্যয়সহ বিভিন্ন ভোগান্তি লাঘবের জন্যই মূলত এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য- এই তিন ইউনিটের মধ্যে প্রথম দুটির পরীক্ষা ও ফলাফল প্রদান এরইমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। তবে হঠাৎ করে বিভাগ পরিবর্তন ইউনিট না রাখার সিদ্ধান্ত, ফি বাড়িয়ে দ্বিগুণের অধিক করা, পরীক্ষা কেন্দ্র অনেকের নিজ এলাকায় না পড়া, কর্মদিবসে পরীক্ষা, ফলাফলে অসামঞ্জস্য এবং অভিযোগ গ্রহণের নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় এ পরীক্ষা নতুন করে দুর্ভোগ তৈরি করেছে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনেকরই অভিযোগ- পরীক্ষা গ্রহণ থেকে ফলাফল পর্যন্ত পদে পদে তারা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
জানা যায়, ১২শ’ টাকা করে ফি দিয়ে শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় পরীক্ষা দেয়। সেই ফল নিয়ে এখন আবার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আরেক দফা ফি গুনতে হচ্ছে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের মাথায় হাত পড়েছে। এই দ্বৈত খপ্পর থেকে মুক্তির জন্য তারা সরকারের ত্বরিত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী বলছেন, লাভ হয়েছে একটিই। তা হচ্ছে, বারবার পরীক্ষা দিতে হচ্ছে না। কিন্তু ব্যয় কোনো অংশে কমেনি, বরং বেড়েছে। একই অবস্থা ভোগান্তির ক্ষেত্রেও। যদি মেডিকেলে ভর্তির মতো অভিন্ন পরীক্ষার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মেধাক্রম এবং পছন্দ তালিকা ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগ বণ্টন করে দেওয়া হতো তাহলে তারা খরচ এবং এক ক্যাম্পাস থেকে আরেক ক্যাম্পাসে দৌড়ানোর ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতেন।
সূত্র জানায়, উপাচার্যদের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটি পরীক্ষার প্রাথমিক আবেদনে ৮-১০ লাখ আবেদন প্রত্যাশা করলেও তিন বিভাগ মিলে সাড়ে ৩ লাখের মতো পড়ে। এরপর গুচ্ছের চূড়ান্ত আবেদনে পরীক্ষার ফি বাড়ানো হলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। প্রথমে ৫০০ টাকা ফি নেওয়ার কথা বলা হলেও পরে ১০০ টাকা বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২১ আগস্ট উপাচার্যদের মিটিংয়ে আরও ৬০০ টাকা বৃদ্ধি করে মোট ১২০০ টাকা করা হয়। অভিভাবকরা তখন ব্যয় হ্রাসের পরীক্ষায় দফায় দফায় ফি বৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ভর্তিচ্ছুরা বলছেন, শুরুতে তারা ভেবেছিলেন, খরচের পর্ব এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই তারা ১২শ টাকা খরচ করা নিয়ে আপত্তি তোলেননি। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, খরচ আগের মতোই আছে। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আগের মতোই অর্থ আদায়ে নেমেছে। আগে ফি নিয়ে পরীক্ষা নিত। অর্থাৎ পরীক্ষার ব্যয় বাবদ কিছু শিক্ষার্থীর পেছনে ব্যয় করত। এখন কেবল আবেদন মূল্যায়ন করে মেধাক্রম তৈরির জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ ধার্য শুরু হয়েছে। অবস্থা এমন যে, কোথাও বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের অনুষদ ধরে আবেদন করে একাধিক দফায় ফি পরিশোধ করতে হবে। অথচ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের যেমন একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে, তেমনি একটি আবেদন ও একবার ফি নেওয়া হলেও কিছু সাশ্রয় হতো। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের আগের মতোই ভর্তির সুযোগ নিশ্চিতে এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরেক বিশ্ববিদ্যালয় আবেদন নিয়ে ছুটতে হবে। অথচ মেডিকেল কলেজে ভর্তির মতো পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীর পছন্দ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় বণ্টন করে দিলে এই ঝক্কি হতো না।
ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে গিয়েও শিক্ষার্থীরা পড়ছেন নানা ঝামেলায়। প্রথমে আয়োজক কমিটি থেকে বলা হয়, রংপুরের শিক্ষার্থী রংপুরের ভেতরে বা পাশের বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে পারবে। কিন্তু কেন্দ্র পছন্দ দেওয়ার পরও রংপুর, চট্টগ্রাম, বরিশাল কিংবা সিলেটের শিক্ষার্থীর পরীক্ষা ঢাকায়, ঢাকার শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বাইরে এমন দেখা যায়। এ ছাড়া পরীক্ষা ছুটির দিনে না পড়ে কর্মদিবসে পড়ায় চাকরিজীবী অভিভাবকদের ভোগান্তি ও যাতায়াতে সমস্যায় পড়তে হয়।
জানা যায়, গত ২৪ অক্টোবর গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষার পর ২৬ অক্টোবর বিকেল ৫টায় ফল প্রকাশ করা হয়। কিন্তু ফল নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, তাদের দেওয়া উত্তরের সঙ্গে ফলাফলের মিল নেই। তারা যে ক’টি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন, ফলাফলে উত্তরের সংখ্যা কারও বেশি কারও কম। এতে কেউ উত্তরের থেকে বেশি নম্বর, আবার কেউ কম নম্বর পেয়েছেন।
পরে সেদিন রাতেই ওয়েবসাইটে টেকনিক্যাল সমস্যা বলে ফলাফল প্রকাশ বন্ধ রেখে পরে নতুন করে সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হয়। সংশোধিত ফলেও শিক্ষার্থীদের সমস্যা কাটেনি বলে ফল বাতিল চান তারা। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভে এসে ক্ষোভে পরীক্ষার প্রবেশপত্র পোড়ান। ইংরেজির ফল বাংলায় আর বাংলার ফল ইংরেজিতে প্রকাশ হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের ভাষ্য, ‘কমিটির দায়িত্ব ছিল পরীক্ষা নিয়ে জিআরই-টোফেলের মতো শিক্ষার্থীদের একটা সমন্বিত স্কোর দেওয়া। যে কারণে আমরা কোনো পাশ-ফেলের ফল না দিয়ে কে কত পেয়েছে সেটি প্রকাশ করেছি। এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল ও ভর্তি কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সার্কুলার দিয়ে ভর্তি করবে। শিক্ষার্থীরা এখানে সবচেয়ে বড় যে সুবিধা পেয়েছে সেটি হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় বা অনুষদ ও বিভাগ ধরে পরীক্ষা দেওয়া লাগছে না। তিনটি পরীক্ষা দিয়ে তিন গুচ্ছের (জিএসটি, কৃষি এবং প্রকৌশল) ত্রিশটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে পারবে। পরীক্ষা কমে যাওয়ার কারণে তাদের ব্যয় এবং ভোগান্তি কমেছে। সুতরাং এ দুটি বেড়েছে-এমন পর্যবেক্ষণ সঠিক নয়।’
এদিকে গুচ্ছ পরীক্ষার দিন কেন্দ্র পরিদর্শক হিসেবে থাকা শিক্ষকরা আগের চেয়ে কম সম্মানী পাচ্ছেন জানিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।