বেসরকারি ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সেসময় তার বন্ধুদের সঙ্গে রাজু ভাস্কর্যের সামনে ছবি তুলছিল।
অভিযুক্ত নাজমুল ইসলাম মাস্টার দা সূর্যসেন হলের আবাসিক ছাত্র এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইএসডব্লিউআর) স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী।
জানা যায়, মাস্টার দা সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের সভাপতি মরিয়ম সোহানের অনুসারী অভিযুক্ত নাজমুল ইসলাম।
যোগাযোগ করা হলে একজন প্রত্যক্ষদর্শী ইউএনবিকে বলেন,‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্নিকস (ডিইউএস) পয়েন্টে আমি আমার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছিলাম। হঠাৎ রাজু ভাস্কর্যের সামনে একটা বিশৃঙ্খলা দেখতে পেয়ে আমরা সেখানে গেলাম। দেখলাম নাজমুল নামের একটি ছেলে একজনের সঙ্গে ঝগড়া করছে। ছেলেটি অশ্লীল ভাষায় মেয়েটিকে গালি দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ঝগড়ার এক পর্যায়ে মেয়েটি উত্তেজিত হয়ে নাজমুলের মুখে থাপ্পড় মারে। এরপর নাজমুল মেয়েটিকে তিনটি থাপ্পড় মারে।’
তবে একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে মেয়েটি কর্কশ ভাষায় কথা বলছে এবং ছেলেটিকে চড় মারছে।
এক প্রত্যক্ষদর্শীর কাছ থেকে পাওয়া অডিও রেকর্ডে মেয়েটিকে বলতে শোনা গেছে ‘জন্মদিন উদযাপনের পর আমি আমার বন্ধুদের সঙ্গে ঢাবি ক্যাম্পাসের এই ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিলাম। সেই সময় দুটি ছেলে বাইক থামিয়ে আমার বিরুদ্ধে জঘন্য শব্দ ব্যবহার করে আমাদের প্রশ্ন করতে শুরু করে। যখন আমি প্রতিবাদ করি তারা আমাকে উত্যক্ত করে এবং আমাকে চড় মারে।’
যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত নাজমুল ইউএনবিকে বলেন,আমি আমার দুই বন্ধুসহ ঢামেক হাসপাতাল থেকে মোটরসাইকেলে করে হলে ফিরছিলাম। আমি যখন রাজু ভাস্কর্যের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম, আমি একটি মেয়ে এবং দুটি ছেলেকে রাজু ভাস্কর্য প্রাঙ্গণে ঘুমন্ত বাস্তুচ্যুত লোকদের ছবি তুলতে দেখি। ’
তিনি আরও বলেন,‘যখন আমি মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করি তাদের ছবি তোলার জন্য তিনি কী তাদের অনুমতি নিয়েছেন,সে আমাকে বলে এই ঢাবি ক্যাম্পাসটি কয়েকবার কেনার ক্ষমতা রয়েছে তার বাবার।’
তিনি আরও বলেন,‘আমি যখন তার কথা রেকর্ড করার জন্য আমার মোবাইল বের করি, তখন সে আবার আমাকে অপমান করে বলে ‘দুই টাকার মোবাইল আর ভাঙা বাইক ব্যবহার করিস, আর তুই আমার সঙ্গে কথা বলতে এসেছিস!’
তিনি বলেন, ‘সে আমাকে বাধ্য করেছে।’
তিনি বলেন, ‘ঝগড়ার এক পর্যায়ে সে আমাকে চড় মেরেছিল এবং আমিও তাকে চড় মারি।’
তিনি আরও বলেন,‘ কিন্তু যখন তারা লোক জড়ো হতে দেখে এবং সাংবাদিকদের দেখে; তারা তখন নতুন নাটক শুরু করে। তারা তখন আমাকে দুঃখিত বলে ক্ষমা চায় ।’
তবে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তিনি ঘটনাটি দেখতে গেলে দেখেন অভিযুক্ত নাজমুল ভুক্তভোগী মেয়েটির মোবাইল ফোন ধরে রেখেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী আরও জানান,এ সব পরিস্থিতিতে ঢাবি প্রক্টরিয়াল টিমের দুই সদস্য আবুল বাশার নামে এক ব্যক্তিকে নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন। আবুল বাশার নাজমুলের বিরুদ্ধে ৬ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ করেন।
আবুল বাশার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হাকিম চত্বরের একটি খাবারের দোকানে কাজ করেন এবং বিভিন্ন ধরনের ভাজাপোড়া বিক্রি করেন।
আবুল বাশার অভিযোগ করে বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হয়ে আজ রাতে বাসায় ফেরার সময় ছেলেটি আমার মোবাইল ও প্রায় সাত হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। মোবাইল ফেরত দিলেও টাকা ফেরত দেয়নি। আমি তাকে খুঁজছিলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল আমি কিস্তি দেয়ার জন্য আমার বাড়িতে পাঠাতে টাকা তুলেছিলাম, কিন্তু নাজমুল সব টাকা ছিনিয়ে নেয়।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, আবুল বাশার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে অভিযুক্ত নাজমুল তৎক্ষণাৎ মাঠ ছেড়ে চলে যায়।
অন্যদিকে, অভিযোগকারী তরুণী প্রক্টরের কাছে অভিযোগ জানাতে ঢাবি প্রক্টর অফিসে যান।
যোগাযোগ করা হলে ঢাবি প্রক্টর একেএম গোলাম রব্বানী ইউএনবিকে বলেন,‘আমরা ইতোমধ্যে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করেছি এবং অভিযোগকারী আমাদের ছাত্রী না হওয়ায় আমরা তাকে আইনি পদক্ষেপ নিতে বলেছি।’
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম