জেলা প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
জৈষ্ঠ্য মধুমাস, এই মাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে হরেক রকমের সুস্বাদু ফল বাজারে পাওয়া যায়। ফলের তালিকায় রয়েছে আম, জাম, কাঠাল, লিচু এছাড়াও কচি তালের শাঁস। কচি তালশাঁস এটি খুবই সুস্বাদু, গরমে তালশাঁস প্রাণ জুড়িয়ে দেয়। গ্রাম্য ভাষায় এটি ‘তালের ডাব’ নামেই পরিচিত। মুখরোচক এ ফল সব বয়সী মানুষের পছন্দ।
এ জেলায় কচি তালশাঁসের চাহিদা বেশি থাকায়, তাল ছোট থাকতেই শাঁস বিক্রির জন্য আশেপাশের জেলাগুলো থেকে নিয়ে আসে ব্যবসায়ীরা। জেলার সকল বাজারে এবং যেখানে লোক সমাগম বেশী হয় যেমন বিভিন্ন বাজার, বাসস্টেন্ড, শহরের অলি-গলিতে, সহ রাস্তার মেড়ে মোড়ে এ কচি তালশাঁস বিক্রি করতে দেখা যায়।
ছোট তালে ১ বিচি মধ্যমে ২ টি বিচি ও বড় গুলোতে ৩ টি বিচি থাকে, তাই প্রকার ভেদে প্রতিটির দাম ১০ থেকে ২০ ও ৩০ টাকা দরে বিক্রি করে থাকে বিক্রেতারা, অন্যান্য মৌসুমী ফলের ক্ষেত্রে বিষাক্ত ফরমালিন, কারবাইডের ব্যবহার থাকলেও তালশাঁসে এসব বিষাক্ত ক্যামিকেলের ব্যাহারের সুযোগ নেই, তাই বিষ মুক্ত কচি তালের শাঁসের কদর বেশি।
তাল গাছ ও তালের রয়েছে অনেক গল্পকথা, কবির ভাষায়,”তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে সব গাছ ছাড়িয়ে উঁকি মারে আকাশে.
গ্রাম্য ভাষায় ” তাল গাছ এক পুরুষে লাগায় তিন পুরুষে খায় ”।
বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা বাসস্টেন্ডে তাল ব্যবসায়ী কাছম আলী, আবুল মিয়া রাজ্জাক বলেন, এ জ্যৈষ্ঠ মাসে গরমে কচি তালের শাঁসের চাহিদা রয়েছে, তাই গ্রামে গ্রামে ঘুরে তাল গাছের মালিকের কাছ থেকে পাইকারী দরে গাছের সমস্ত তাল ক্রয় করে নিয়ে আসতে হয়।
প্রতিটি গাছে ১৫০ থেকে ৩৫০টি,অনেক গাছে তার চেয়েও বেশী তাল পাওয়া যায়। জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বিক্রি শুরু হয়, চলবে পুরো মাস জুড়ে। পাইকারী দরে প্রতি পিস তাল কিনতে হয় প্রকারভেদে ৩ থেকে ৫ ও ৮ টাকায়, পরিবহন ও শ্রমিকের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিটি তাল বিক্রি করতে হয় ১০ থেকে ২০ ও ৩০ টাকায়।
ইসলামপুর বাজারে তালশাঁস কিনতে আসা ইঞ্জিনিয়ার আবিদুর রহমান ও দলিল লিখক শাহীন মোল্লা বলেন, তালশাঁস একটি সুস্বাদু ফল। গরমে তালশাঁস খেতে ভাল লাগে, রাতে ঘুম ভাল হয়, শরীরে আলাদা অনুভূতি অনুভব হয় ও ঠান্ডা থাকে, সকালে কোষ্ঠকাঠিন্য ভাল ভাবে দুর ।
এ বিষয়ে কসবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজেরা বেগম জানান, বহুবর্ষী উদ্ভিদ, রোপনের ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সের পর থেকে তাল গাছ ফল দিয়ে থাকে, বজ্রপাতরোধী প্রত্যেকের বড়িতে অন্তত একটি করে তাল গাছ থাকা ভালো, তাল গাছ অল্প জায়গায় অধিক ফলন পাওয়া যায়, নিজেদের চাহিদা মিঠিয়ে কচি তাল ও পাকা তাল উভয় অবস্থায় বিক্রি করা যায়। কচি তালের চাহিদা বেশী ও লাভজনক তাই কৃষকরা তালগাছ রোপনে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মাসুম জানান, তালশাঁস শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তালের শাঁসে থাকা জলীয় অংশ মানব শরীরের পানি শূন্যতা দূর করে। এতে প্রচুর পরিমাণে খনিজ লবণ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন- বি ও ফসফরাস রয়েছে। ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস থাকায় হাড় ও দাতের ক্ষয়রোধ করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করে। তালে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, কচি তালের শাঁস রক্তশূন্যতা দূর করে। সর্বোপরি খোলা পরিবেশে বিক্রি করার কারণে, উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশী হতে পারে তাই জীবাণু মুক্তের জন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে ভক্ষণ করা একান্ত প্রয়োজন ।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি কর্মকর্তা সুশান্ত সাহা জানান, তাল গাছ এ জেলায় প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ”বজ্রপাত রোধক” আম, জামের মতো এর বাগন করা হয়না, রাস্তার দু পাশে. অবহেলিত উচু জায়গায় হয়ে থাকে, বর্তমান সরকার মানুষের স্বাস্থ্যও পরিবেশ রক্ষা বিবেচনায় বিগত ৪,৫ বছর যাবৎ তালগাছ রোপনে দৃষ্টিপাত করেন, এতে অনেক তালগাছ রোপন করা হয়েছে, পরিবেশবান্ধব, স্বল্প জায়গায় অধিক লাভ বিবেচনায় এ গাছ রোপনে কৃষক উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি