নিজস্ব প্রতিবেদক:
ভবিষ্যত ঝুঁকি এড়াতে সরকার বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য আমদানি ও মজুদের উদ্যোগ নিচ্ছে। দেশে খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করতে সরকার মোট ৮ লাখ ৩০ হাজার টন গম ও চাল কেনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাতে সরকারের প্রায় ৩ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা ব্যয় হবে। তার মধ্যে রাশিয়া থেকে ৫ লাখ টন গম খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জিটুজি পর্যায়ে আমদানি করা হবে। তাতে ব্যয় হবে ২১ কোটি ৫০ লাথ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় তার পরিমাণ ২ হাজার ৪২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আর ভারত থেকে জিটুজি পর্যায়ে আমদানি করা হবে এক লাখ টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল। তাতে ব্যয় হবে ৪১৭ কোটি ৫ লাখ টাকা। তাছাড়া ভিয়েতনাম থেকে জিটুজি পর্যায়ে ২ লাখ টন থাই নন-বাসমতি চাল এবং ভারত থেকে আরো ৩০ হাজার টন আতপ চাল আমদানির প্রস্তাবেও অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তাতে ব্যয় হবে এক হাজার ১৩০ কোটি ৬৯ টাকা। ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ওসব প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সাম্প্রতিককালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দেশে হু হু করে চাল, আটা ও ময়দার দাম বাড়ছে। বর্তমানে ৬০ টাকার নিচে মোটা চাল পাওয়া যাচ্ছে না। আর ৭৫-৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে সরু জাতের মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল। পাশাপাশি আটা ও ময়দাও রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে ৫০-৫৫ টাকায় প্রতিকেজি আটা বিক্রি হচ্ছে এবং ৬৫-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ময়দা। দেশের প্রধান খাদ্যপণ্য চাল ও আটার দাম বাড়ায় নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভোগ্যপণ্যের বাজার সামাল দিতে চাল, আটা ও ময়দার মতো অন্যান্য পণ্যের দাম বেঁধে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। পাশাপাশি দেশীয় বাজারে চালের সরবরাহ বাড়াতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিয়েছে সরকার। সেজন্য চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এমনকি বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি সহজ করতে সম্প্রতি শুল্কহারও ব্যাপক কমানো হয়েছে। ওসব উদ্যোগের উদ্দেশ্য হলো আমদানি করে বাজারে চালের সরবরাহ বাড়ানো। যাতে ভোক্তা সাশ্রয়ী দামে চাল কিনে খেতে পারে। পাশাপাশি ইউনিয়ন পর্যায়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় ৫০ লাখ পরিবারকে ১৫ টাকা দরে চাল বিতরণের কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। সরকারের ওসব উদ্যোগে আশা করা হচ্ছে বাজারে চালের দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
সূত্র জানায়, সরকার খাদ্যপণ্যের সরবরাহ বাড়াতে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান টিসিবিতে চাল বিক্রি, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১৫ টাকায় এবং খোলা বাজার কার্যক্রমে (ওএমএস) প্রতিকেজি চাল ৩০ টাকায় বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সারাদেশে চলতি সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই ওই কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে। তাতে ভোক্তাদের কাছে চলে যাবে সরকারি ভা-ারে মজুদকৃত খাদ্যশস্যের বড় অংশ। ফলে ভবিষ্যত ঝুঁকি এড়াতে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য আমদানি ও মজুদ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। মূলত দেশের খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলা এবং বাজারে সহনীয় মূল্যে ভোগ্যপণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তাতে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি লাগলেও বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে। মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশে খাদ্য আমদানিতে সঙ্কট তৈরি হয়। বিশেষ করে ওই দুটি দেশ থেকে দেশের চাহিদার সিংহভাগ গম আসে। তার পাশাপাশি ভারত, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড থেকেও খাদ্যশস্য আমদানি করা হয়।
সূত্র আরো জানায়, ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় জীবন যাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য আমদানি হওয়ার কারণে ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার হবে। পাশাপাশি চাল ও আটা নিয়ে অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারসাজিও বন্ধ হবে। রাশিয়া থেকে থেকে বিপুল পরিমাণ গম আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ওই দেশটি থেকে ৫ লাখ টন গমের পাশাপাশি, ভারত থেকে ১ লাখ টন চাল এবং ভিয়েতনাম থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার টন চাল কেনা হবে। দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের অংশ হিসেবে মোট ৭ লাখ ৩০ হাজার টন গম ও চাল কেনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ভারত থেকে দুই লটে ১ লাখ টন চাল আমদানি করা হবে। তার মধ্যে ৭০ হাজার টন প্রথম লটে এবং ৩০ হাজার টন দ্বিতীয় লটে আনা হবে। ভারতের চালের প্রতি কেজির দাম পড়বে যথাক্রমে ৪২ টাকা এবং ৪০ টাকা ৭০ পয়সা। ভিয়েতনাম থেকে আনা হবে ২ লাখ ৩০ হাজার টন চাল। প্রতিকেজি চালের দাম পড়বে যথাক্রমে ৫০ ও ৪৭ টাকা। তবে গমের টাকা ডলারে পরিশোধ করা হবে। তাতে রাশিয়া থেকে যে ৫ লাখ টন গম কেনা হবে তার প্রতিকেজির দাম পড়বে ৪০ টাকা ৮৫ পয়সা।
এদিকে এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদের অতিরিক্ত সচিব আবদুল বারিক জানান, সরকারি পর্যায়ে অর্থাৎ জিটুজি ভিত্তিতে চাল ও গম কেনা হবে।
আরও পড়ুন
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
কমতে শুরু করেছে কুড়িগ্রামের নদীর পানি, ভাঙন আতঙ্কে মানুষ
দিনাজপুরে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় নিহত ২