March 29, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, February 18th, 2022, 9:29 pm

ভর্তিজট ও সেশনজটের বৃত্তাজালে বন্দি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

করোনা মহামারীতে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাত হলো শিক্ষাখাত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলতে গেলে একপ্রকার বন্ধ হয়েই ছিল ২০২০ সালের মার্চ থেকে। দীর্ঘ এই গ্যাপে শিক্ষার্থীদের ভেতর যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা পূরণ করা বেশ কঠিন হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি এই দীর্ঘ অচলাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশন জট, ভর্তি জটের আবহ তৈরি হয়েছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিজট সমস্যা দৃশ্যমান না হলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিজট সমস্যা প্রকট হয়ে উঠেছে। জানা যায়, কিছুকিছু বিশ্ববিদ্যালয় ২০২০ সালের উচ্চমাধ্যমিকউত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়াই এখনও শেষ করতে পারেনি। এরইমধ্যে সম্প্রতি ২০২১ সালের উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ হয়েছে। তারাও ভর্তি প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। তাদের ভর্তি প্রক্রিয়াও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সমানতালে এগিয়ে নিতে হবে। করোনার কারণেই এ জট পেকেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ডিনরা।
তবে কিছুকিছু বিশ্ববিদ্যালয় এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। এসব বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ভর্তি কার্যক্রম ইতোমধ্যে শেষ করতে পেরেছে, এবং আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সশরীরে ক্লাস শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে। উচ্চমাধ্যমিকও সমমান পরীক্ষায় এবার পাস করেছে প্রায় ১৩ লাখ ৭ হাজার শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসন খালি আছে ১৪ লাখ ১৮ হাজার। তবে সবাই ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলেও উচ্চশিক্ষায় এ বছর (২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে) পাঁচ লাখের বেশি আসন খালি থাকবে বলে জানা গেছে।
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, প্রতিবছর নভেম্বরের মধ্যে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করে ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু করে। এ বিষয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা জানিয়েছেন, আবাসিক হলগুলোর বর্তমান পরিস্থিতি ও নানা বাস্তবতার নিরিখে একসঙ্গে দুটি প্রথম বর্ষ চালানো সম্ভব নয়। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের সঙ্গে বসে কীভাবে সংকট কাটানো যায়, সেটার উপায় বের করবেন।
মহামারীর তান্ডবে জানা যায় গত বছরের ভর্তি পরীক্ষায় থমকে আছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজধানীর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও কুষ্টিয়ার ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এখনও গত বছরের ভর্তি প্রক্রিয়াই শেষ করতে পারেনি। মহামারির কারণে টানা দেড় বছর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় এবং উচ্চ মাধ্যমিকের অটোপাসের সিদ্ধান্ত দেরিতে হওয়ায় ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষা পিছিয়ে যায়। গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় খুললেও গত ২৩ জানুয়ারি ফের বন্ধ হয়ে যায়। দফায় দফায় বন্ধের কারণে ভর্তি প্রক্রিয়া বেশি এগোয়নি। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন ইউজিসিও।
শুধু ভর্তি জট নয়, সেশন জটের কবলে পড়ার শঙ্কা দিয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে।
জানা যায়, করোনা মহামারীর কারণে ২০২০ সালের মার্চের পর দেড় বছরের অধিক সময় ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এ কারণে শিক্ষার্থীদের সেশনজট লাঘবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রণয়ন করে ‘লস রিকভারি প্ল্যান’। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিভাগ ও ইনস্টিটিউট এই প্ল্যান অনুসরণ করলেও ৩১টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউট এই প্ল্যান অনুসরণ করছে না বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। ফলে এক বছরের সেশনজটের আশঙ্কা করছে এসব শিক্ষার্থীরা। এতে অনেকেই হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছেন।
সেশনজটে আক্রান্ত বিভাগগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো– ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগ, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজম্যান্ট বিভাগ, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ইংলিশ স্পিকার ফর অ্যাদার ল্যাংগুয়েজ বিভাগ, ফলিত গণিত বিভাগ, বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগ, আরবি বিভাগ, একাউন্টিং এ- ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ, শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগ, ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ ও মার্কেটিং বিভাগ। এছাড়াও বেশকিছু বিভাগে এক সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়ার পূর্বে আরেকটা সেমিস্টারের মিড ও একইসাথে তৃতীয় আরেকটা সেমিস্টারে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগও রয়েছে শিক্ষার্থীদের।
জানা যায়, সেমিস্টার জটিলতাতেও ভুগছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন অনেক বিভাগ রয়েছে যেগুলোতে ২টি সেমিস্টারের রেজাল্ট দেওয়া বাকি অথচ তৃতীয় আরেকটা সেমিস্টারের ক্লাস করানো হচ্ছে। এছাড়াও ‘লস রিকভারি প্লান’ অনুযায়ী পূর্বের তুলনায় সশরীরে ২টি ও অনলাইনে ১টি ক্লাস বেশি নেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু এ নির্দেশনাও উপেক্ষা করছে বেশ কিছু বিভাগ। ২০২০ সালের ১ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ‘লস রিকভারি প্ল্যান’ এর অনুমোদন দেওয়া হয়। এই প্ল্যান অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ মাসের বর্ষ ৮ মাসে এবং ৬ মাসের সেমিস্টার ৪ মাসে শেষ করতে বলা হয়। এ ছাড়া ফল ঘোষণার ক্ষেত্রে সেমিস্টার পদ্ধতিতে ছয় সপ্তাহ ও বার্ষিক পদ্ধতিতে আট সপ্তাহের বেশি সময় নেওয়া যাবে না এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল।
করুণ অবস্থায় পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এখনই বড় ধরনের সেশনজটে থাকা ওসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ সবচেয়ে বেশি। ঢাকার সরকারি ৭ কলেজ, ফলাফল বিপর্যয় থেকে বাঁচতে ও শিক্ষারমান উন্নয়নের লক্ষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত করা হয়। অধিভুক্ত হওয়ার চার বছরেরও বেশি সময় পার হয়েছে কিন্তু এখনও হয়নি শিক্ষারমান উন্নয়ন, কাটিয়ে উঠতে পারেনি ফলাফল বিপর্যয়। সেশনজট, ফলাফল বিপর্যয়সহ ভয়াবহ সব দুর্ভোগ এখন সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের নিত্যদিনের সঙ্গী। এখন পর্যন্ত প্রকাশিত প্রতিটি পরিক্ষায় ফলাফল বিপর্যয়ের সম্মুখিন হয়েছে শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ প্রকাশিত হওয়া স্নাতক ২০১৫-১৬ এবং ২০১৬-১৭ সেশনের ফলাফলেও দেখা যায় একই চিত্র। বিপর্যয়ের সম্মুখিন হওয়া শিক্ষার্থীরা এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বারান্দায়, নিজ ক্যাম্পাসে ঘুরেও পাচ্ছে না কোন কার্যত সমাধান। ব্যর্থ হয়ে বার বার আন্দোলনে নামতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। গণহারে ফেল বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভাষ্য, ১খাতা না দেখে মার্ক দেওয়া কিংবা খাতা হারিয়ে ফেলা। অথবা নতুন মানবন্টনে শিক্ষকদের অভ্যাস না থাকায় ভুল মার্কিং এবং পরিক্ষার সিলেবাস না কমিয়ে ৪ ঘণ্টার জায়গায় ২ ঘণ্টায় পরিক্ষা নেওয়াসহ আরো কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেন তাঁরা।’
উল্লেখ্য,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০১৭ সালে রাজধানী ঢাকার সরকারি সাত কলেজ ঢাকা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ এবং কবি নজরুল সরকারি কলেজ শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পৃথক করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়।