November 18, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, April 27th, 2023, 7:37 pm

ভাওয়াইয়া শিল্পী শরীফা রানী আর নেই

অনলাইন ডেস্ক :

ভাওয়াইয়া গানের রানি খ্যাত জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী শরীফা রানী আর নেই। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় রাজধানী ঢাকার শ্যামলী রিং রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মরহুমার আত্মীয় সাংবাদিক আলী আখতার গোলাম কিবরিয়া। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শরীফা রানী কয়েক দিন ধরে শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন। দুদিন আগে রক্তচাপ প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এলে তাকে অচেতন অবস্থায় শ্যামলী রিং রোডের সেন্ট্রাল হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। বরং অচেতন অবস্থায় থেকেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

বৃহস্পতিবার বাদ আসর ঢাকা আগারগাঁও তালতলা বড় মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে তাকে তালতলা গোরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানা গেছে। মৃত্যুকালে শরীফা রানীর বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। তিনি ১৯৫০ সালের ৯ জুন জন্মগ্রহণ করেন। তার আদি নিবাস রংপুর নগরীর মুন্সীপাড়া এলাকার। বাবা আবদুল গণি ও মা শাহেদা বেগম। পরিবারের চার ভাই চার বোনের মধ্যে শরীফা রানী ছিলেন সবার বড়। জানা গেছে, বার্ধক্যজনিত কারণে দীর্ঘ দিন থেকে কিডনি রোগে ভুগছিলেন। গত ৮ বছর ধরে ডায়ালাইসিস নিচ্ছিলেন।

শরীফা রানী মুন্সিপাড়া সরকারি প্রাইমারি স্কুল, রংপুর সরকারি গার্লস স্কুল ও কারমাইকেল কলেজে লেখাপড়া করেছেন। এরপর তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। শরীফা রানী বিয়ের পর ১৯৭৪ সাল থেকে স্বামী প্রকৌশলী নুরুন্নবীর সঙ্গে রাজধানীর আগারগাঁও তালতলায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তাদের এক মেয়ে, দুই ছেলে এবং নাতি-নাতনি রয়েছে। ঢাকায় থিতু হওয়ার পর ১৯৭৭-৭৮-এ বেতার ও টেলিভিশনে গান গাওয়া ছেড়ে দেন শরীফা। এরপর তিনি সংসার ও ধর্মকর্মে নিজেকে যুক্ত রাখেন। শরীফা রানী হজব্রত পালন করেছেন।

গুণী এই কণ্ঠশিল্পী নীলফামারীর গীতিকার, সুরকার ও গায়ক মহেশ চন্দ্র রায়ের ‘কানিচাত গাড়িনু আকাশি আকালি / আকালি ঝুমঝুম করে রে বন্ধুয়া / আকালি ঝুমঝুম করে….’ গানটি মুক্তিযুদ্ধের আগে রংপুর বেতারে পরিবেশন করে সেসময় আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন। অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে গেলেও তার সেই সুরেলা গায়কী আজও কেউ অতিক্রম করতে পারেনি। তার কণ্ঠে মিশে থাকত রংপুরের সোঁদা মাটির আমেজ আর এ অঞ্চলের মানুষের নির্মল ভাবাবেগ। তাই আজও ভাওয়াইয়ার এই কিংবদন্তি শিল্পীকে কেউই ভুলে যায়নি। ‘কানিচাত গাড়িনু’ গানটি আজও শহরে কিংবা গ্রামে অত্যন্ত মমত্ববোধের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। এছাড়াও ‘বাওকুমটা বাতাস যেমন ঘুরিয়া ঘুরিয়া মরে’, ‘বন্ধু ধন, ধন রে’, ‘বন্ধু কাজল ভোমরা রে’, ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’, ‘বাবার দ্যাশে রঙিন গাড়িয়াল ও’, ‘ও মোর বানিয়া বন্ধু রে’, ‘ওরে গাড়িয়াল বন্ধু রে’, ‘তুই কোন্টে গেলু’, ‘বাপোই চ্যাংড়া রে’, ‘কারবা বাড়ির চিতিয়া বিলাই’, ‘দোলা মাটির মোর বতুয়ারে শাক’, ‘মুই না শোনোং না শোনোং তোর বৈদেশিয়ার কথা’ ইত্যাদি গান গেয়ে ভাওয়াইয়া সম্রাজ্যের মধ্যমণি হয়ে উঠেছিলেন শরীফা রানী। জনপ্রিয় এই শিল্পীর কণ্ঠে গ্রামবাংলার যাপিত জীবনের মরমিয়া সুর খুব সহজে ঢেউ খেলে যেত।

তার ভাওয়াইয়া গান শুনলে মনে হতো, সহজ-সরল গ্রাম্য বধূর প্রাণের আকুতি অবলীলায় প্রকৃতির প্রান্ত ছুঁয়ে গেছে। তাঁর গান শুনে আকুল হয়ে উঠত গ্রামের অগণিত শ্রোতার মন ও প্রাণ। ভাওয়াইয়া শুনে তারা প্রাণের শেকড়কে বারবার ধারণ করে বিগলিত হয়ে পড়তেন। বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়লেও রংপুরে বিভিন্ন সময়ে ভাওয়াইয়া উৎসবে এসে মঞ্চ মাতিয়ে গেছেন তিনি। তার মৃত্যুতে রংপুরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ ভাওয়াইয়া শিল্পী, গীতিকার, সুরকার ও শ্রোতাদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।