March 28, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, June 20th, 2022, 10:00 pm

ভাঙাচোরা রাস্তা মেরামত ও ভালো সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে বিপুল টাকার প্রয়োজন

দীর্ঘদিন যাবত রাস্তার বেহাল দশায় থাকার পর ইট, বালু দিয়ে সংস্কার করা হচ্ছে রাস্তাটি। ছবিটি সোমবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে তোলা।

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশের ভাঙাচোরা রাস্তা মেরামত ও ভালো সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে বিপুল টাকার প্রয়োজন। বর্তমানে সারাদেশে ২ হাজার ৭৭ কিলোমিটার জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং জেলা সড়ক ভাঙাচোরা, যা দেশের সড়ক-মহাসড়কের ১০ দশমিক ৩৬ শতাংশ। তার মধ্যে প্রায় ৪৫৭ কিলোমিটার রাস্তা এত খারাপ যে তা চলাচলের অযোগ্য। এমন অবস্থায় ভাঙাচোরা রাস্তা মেরামত ও ভালো সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে আগামী ৫ বছরে ১৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা প্রয়োজন। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

দীর্ঘদিন যাবত রাস্তার বেহাল দশায় থাকার পর ইট, বালু দিয়ে সংস্কার করা হচ্ছে রাস্তাটি। ছবিটি সোমবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে তোলা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সারাদেশে বিগত ২০২১ সালে ৩ হাজার ৫ কিলোমিটার সড়ক ভাঙাচোরা ছিল। তার আগের বছরে ছিল ৩ হাজার ৫৯১ কিলোমিটার। বর্তমানে দেশের ৭৬ দশমিক ২৫ ভাগ জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং জেলা সড়কের অবস্থা খুব ভালো। গত বছরে প্রায় ৬৫ শতাংশ রাস্তার অবস্থা ভালো ছিল। আর ২০১৩ সালে দেশে ভালো সড়ক ছিল মাত্র ২০ দশমিক ২৮ শতাংশ। ৭ বছরের ব্যবধানে ভালো সড়কের দৈর্ঘ্য বেড়েছে প্রায় ৪ গুণ। এখন প্রায় সাড়ে ১০ শতাংশ রাস্তা ভাঙাচোরা। তবে যেসব প্রকল্প চলমান রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন হলে আগামী ৩ বছর পর ভালো সড়কের পরিমাণ দাঁড়াবে ৯৮ শতাংশ। ৪ ধাপে সড়কের রক্ষণাবেক্ষণ ও পুননির্মাণকাজ চলমান। তার জন্য যতো টাকা প্রয়োজন তার পুরোটা না পেলেও সওজ কাজ চালিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু দুশ্চিন্তা হচ্ছে দুর্ঘটনা। সড়ক ভালো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যানবাহনের গতি বাড়ছে। আর দুর্ঘটনা এড়াতে পারলেই সড়কে বিনিয়োগের সর্বোচ্চ সুফল মিলবে।
সূত্র জানায়, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সারাদেশে সড়ক ও মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ২২ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার। তার মধ্যে জাতীয় মহাসড়ক ৩ হাজার ৯৯০ কিলোমিটার, আঞ্চলিক মহাসড়ক ৪ হাজার ৮৯৭ কিলোমিটার এবং জেলা সড়ক ১৩ হাজার ৫৮৮ কিলোমিটার। ২০ হাজার ৭২ কিলোমিটার সড়ক ও মহাসড়ক জরিপ করা হয়েছে। জরিপে ভালো, মোটামুটি, নাজুক, খারাপ ও খুব খারাপ- ওই ৫ শ্রেণিতে সড়ক-মহাসড়ক ভাগ করা হয়েছে। তার মধ্যে যেসব রাস্তা খুব খারাপ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে সেগুলো আসলে যান চলাচলের উপযোগী নয়। ওই হিসাবে দেশের ৪৫৭ কিলোমিটার সড়ক যান চলাচলের অনুপযুক্ত। গত বছর এ ধরনের সড়ক ছিল ৬৯১ কিলোমিটার। তার আগের বছরে ছিল ৯৪৩ কিলোমিটার। ২০১৯-২০ সালের জরিপে খুব খারাপ সড়কের দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার।

দীর্ঘদিন যাবত রাস্তার বেহাল দশায় থাকার পর ইট, বালু দিয়ে সংস্কার করা হচ্ছে রাস্তাটি। ছবিটি সোমবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে তোলা।

সূত্র আরো জানায়, দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থাৎ জাতীয় মহাসড়কের ৩ হাজার ৯২৮ কিলোমিটারে জরিপ করা হয়েছে। তার মধ্যে ২ হাজার ৯৭৯ কিলোমিটার বা ৭৫ দশমিক ৮৩ শতাংশের অবস্থা ভালো। ৬৭৫ কিলোমিটার বা ১৭ দশমিক ১৯ শতাংশের অবস্থা মোটামুটি। বাকি প্রায় ২৭৪ কিলোমিটার ভাঙাচোরা। এর মধ্যে সাড়ে ৪২ কিলোমিটার খুবই খারাপ বা চলাচলের অনুপযোগী। তবে আগের বছরগুলোর মতো এবারও সবচেয়ে খারাপ অবস্থা জেলা সড়কের। জরিপের আওতায় আসা ১১ হাজার ৪৯২ কিলোমিটার জেলা সড়কের ৮ হাজার ৫৬৪ কিলোমিটারের অবস্থা ভালো। ১ হাজার ৪৮২ কিলোমিটারের অবস্থা মোটামুটি। ৩২০ কিলোমিটার বা গাড়ি চলাচলের অনুপযুক্ত। আগের বছরে এমন সড়ক ছিল ৪৪৮ কিলোমিটার। ৭৭০ কিলোমিটার জেলা সড়কের অবস্থা নাজুক। ৩৫৬ কিলোমিটারের অবস্থা খারাপ। প্রায় ১ হাজার ৪৪৬ কিলোমিটার বা ১৩ শতাংশ জেলা সড়ক ভাঙাচোরা। তাছাড়া ৪ হাজার ৬৫০ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়কের ৩ হাজার ৭৬১ কিলোমিটার বা প্রায় ৮১ শতাংশের অবস্থা ভালো। ১৮৮ কিলোমিটারের অবস্থা নাজুক। ৭৫ কিলোমিটার খারাপ। বাকি ৯৩ কিলোমিটার চলাচলের অনুপযোগী। সওজের ১০ বিভাগের মধ্যে গোপালগঞ্জ বিভাগের সড়ক মহাসড়কের অবস্থা সবচেয়ে ভালো। ওই বিভাগের মাত্র ৮ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক ভাঙাচোরা। আর চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগের সড়কের বেহাল দশা। ভাঙাচোরা সড়ক-মহাসড়ক মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা প্রয়োজন। চলতি বছরে চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৯০২ কোটি টাকা। তবে সরকার বরাদ্দ দেয় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।
এদিকে বিগত ১৩ বছরে যোগাযোগ খাতে বিপুল বিনিয়োগ করা হয়েছে। চলতি বছরে প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। আগামী অর্থবছরের বাজেটে ৩৬ হাজার ৬৪৭ কোটি বরাদ্দের প্রস্তাব রয়েছে। কিন্তু এত বিপুল বিনিয়োগের পরও সড়কের ১০ শতাংশ ভাঙাচোরা থাকা অগ্রহণযোগ্য। নতুন সড়ক নির্মাণের চেয়ে পুরোনোগুলো রক্ষণাবেক্ষণে মনোযোগী হতে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। তবে মেরামত ও পুননির্মাণ টেকসই না হওয়ার বিষয়ে সওজ প্রকৌশলীরা বলেছেন, অতিরিক্ত পণ্যবাহী যান চলাচলে সড়ক টেকসই হচ্ছে না।
অন্যদিকে এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম মনির হোসেন পাঠান জানান, গত এক বছরে ভালো সড়কের পরিমাণ প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে। আর ২০১৪-১৫ সালের তুলনায় ৪ গুণ রাস্তা ভালো অবস্থায় রয়েছে। সওজ খুব খুব দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছে।